কোভিড উদ্বেগের মধ্যে পর্দা উঠছে একুশে বইমেলার
Published : Wednesday, 17 March, 2021 at 12:00 AM
করোনাভাইরাস
মহামারীর কারণে পিছিয়ে যাওয়া অমর একুশে বইমেলার ৩৭তম আসরের পর্দা উঠছে
বৃহস্পতিবার। তবে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সবাইকে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলার আসার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপ।
মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানায় বাংলা একাডেমি।
স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তীর বছরের এই বইমেলা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির
উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের
মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।
বাংলা একাডেমির
সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি
থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল
আরেফীন শুভেচ্ছা বক্তব্য ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী
স্বাগত বক্তব্য দেবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে
বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীনের’ ইংরেজি
অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ২০২০
সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস
সংক্রমণের চলমান প্রোপটে বইমেলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদ সংম্মেলনে
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে নতুন করে
ভাবতে হবে। যদি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, মেলা চলানোর মতো সুযোগ
না থাকে, সেেেত্র নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
“আমরা প্রার্থনা করছি,
রাষ্ট্র যাতে সেই পর্যায়ে না যায়। সকলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সহযোগিতা করলে
আমরা সুন্দরভাবে বইমেলা শেষ করতে পারব।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “ঝড়-বৃষ্টির দাপট, পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারী-
এর ভেতর দিয়ে আমাদের সন্তানেরা, বয়োঃবৃদ্ধ বাবারা এবং আমরা তরুণেরা যারা
বইমেলায় অংশগ্রহণ করব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধৈর্যের সাথে বইমলোয় আসব, এটাই
আমাদের কাম্য।”
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে।
তবে মহামারীর কারণে এবার প্রথম দিকে 'শিশুপ্রহর’ থাকবে না বলে বাংলা
একাডেমির পরিচালক ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান।
তিনি বলেন, “কোভিড পরিস্থিতি পর্যবেণ করে আমরা শিশু প্রহরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
স্বাস্থ্যবিধি
রার পদপে নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রবেশপথে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড
স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হবে
না। স্বাস্থ্যবিধি রায় আমাদের বিভিন্ন টিমও কাজ করবে।”
প্রবেশপথ ও নিরাপত্তা
এবার
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে নতুন প্রবেশ পথ করা হয়েছে। সব মিলে
তিনটি প্রবেশ পথ ও তিনটি বাহির পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে সুরতি ছাউনি
থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে
লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং
রাষ্ট্রীয়সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বইমেলার
প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার
সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার,
বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩
শতাধিক কোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও
ধূমপানমুক্ত থাকবে।
মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী নিরাপত্তার স্বার্থে
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত
ধূলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে
বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বইমেলার পরিসর
বাংলা একাডেমি
প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়
এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি
এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট; মোট ৫৪০টি
প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন
থাকবে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়্দাী
উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের
পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
একক ুদ্র
প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাঁদের বই ও
বিক্রি বা প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বইমেলায়
বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ
কমিশনে বই বিক্রি করবে।
বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা
পর্যন্ত তা চলবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা
থাকবে। তবে শুক্রবার বেলা ১টা থেকে বেলা ৩টা এবং শনিবার বেলা ১টা থেকে বেলা
২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। বইমেলা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।