দেশে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। এক মাস আগেও পরীা বিবেচনায় দৈনিক
শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। গত সোমবার সকাল ৮টার পূর্ববর্তী ২৪
ঘণ্টায় এই হার হয়েছে ২৩.৪০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি
স্বাস্থ্যবিধিগুলো না মানার কারণেই ভাইরাস এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। এমন
পরিস্থিতিতে সরকার গত সোমবার থেকে দেশব্যাপী লকডাউনের আদলে কঠোর বিধি-নিষেধ
আরোপ করে। কিন্তু বাস্তবে সেসব বিধি-নিষেধও মানা হচ্ছে না। যাত্রীবাহী বাস
কম চললেও অন্যান্য যানবাহনের চলাচল কমেনি। রাস্তায় মানুষজনের কমতি ছিল না।
বেশির ভাগের মুখে মাস্কও ছিল না। কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষের ভিড় যেন আগের
চেয়ে বেড়ে গেছে। খোলা জায়গায় কাঁচাবাজার বসানোর নির্দেশ মানা হয়নি।
রাজধানীতে বড় মার্কেট বা বিপণিবিতান বন্ধ থাকলেও সেসব খুলে দেওয়ার দাবিতে
বিােভ করেছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। আর পাড়া-মহল্লার দোকান সন্ধ্যা ৬টার
মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ থাকলেও প্রায় কেউই তা করেনি। অনেক জায়গায়
হোটেল-রেস্তোরাঁও খোলা রাখতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত
পরিচালিত হলেও সামগ্রিকভাবে বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে খুব একটা তৎপরতা দেখা
যায়নি। ঢাকার বাইরে অন্যান্য শহরের অবস্থা ছিল আরো খারাপ। এই অবস্থায় করোনা
মহামারি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা
মনে করছেন, কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের বিষয়টি খুব একটা পরিকল্পিত হয়নি। অফিস
খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করায় বহু মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
সরকারের ১১ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিল সব সরকারি-বেসরকারি অফিসে শুধু জরুরি
কাজে সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবল রাখা এবং নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে তাদের
আনা-নেওয়া করা। কিন্তু তা মানেনি বেসরকারি অফিসগুলো। তারা ঠিকই অফিস খোলা
রেখেছে; কিন্তু কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেনি। ফলে অফিসে যাওয়া-আসার
জন্য আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাঁদের। এক রিকশায়
তিন-চারজনকেও চলাচল করতে দেখা গেছে। রিকশা ভ্যানে বা ট্রাকে করেও মানুষ
চলাচল করেছে। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করা হলেও প্রায় কেউই তা
মানেনি। দু-তিন গুণ ভাড়া নিয়ে মোটরসাইকেল ঠিকায় চলতে দেখা গেছে। অন্যদিকে
লকডাউনের আশঙ্কায় মানুষকে দলে দলে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। এতে সংক্রমণ আরো
দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে
বাংলাদেশকে অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। এখনই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই
হচ্ছে না। প্রয়োজন থাকলেও অনেককেই আইসিইউ সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণ
এভাবে বাড়তে থাকলে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে
আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থা যাতে না হয় সে জন্য মানুষকে স্ব্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলতে হবে। বিধি-নিষেধ শুধু আরোপ করা নয়, বাস্তবায়নও করতে হবে।
প্রয়োজনে কঠোর লকডাউনে যেতে হবে। একই সঙ্গে টিকা প্রদান কার্যক্রম আরো
দ্রুততর করতে হবে।