মাসুদ আলম।।
দ্বিতীয়
ধাক্কায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনের
দ্বিতীয় দিনে কুমিল্লায় জীবনযাত্রার স্বাভাবিক থাকার চিত্র দেখা গেছে।
লকডাউনে সরকারের নানা নির্দেশনা থাকলেও সাধারণ মানুষকে যথাযথভাবে বিধিনিষেধ
মানতে দেখা যায়নি। লকডাউনের তোয়াক্কা না করা কুমিল্লায় প্রথম দিনের চেয়ে
দ্বিতীয় দিনে লকডাউন আরও ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। সেই সাথে জনসচেতনাও কমেছে
মানুষের মাঝে। তবে লকডাউনে মাস্কের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা,
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে খুলে রাখা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার
এবং দোকানপাটের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। সেই সাথে
পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং জনসমাগম সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও মোবাইল
কোর্ট পরিচালনা করা হয়। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কুমিল্লা
কান্দিরপাড় থেকে রাজগঞ্জ হয়ে চকবাজার, টমছম ব্রিজ, পুলিশ লাইনস হয়ে
শাসনগাছা, রাণীর বাজার ও ফৌজদারীসহ নগরীতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মোবাইল কোর্ট
পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এই মোবাইল কোর্টে লকডাউনের
নির্দেশনা অমান্য করায় ৩৩টি মামলা প্রধান করা হয়েছে। সেই সাথে জরিমানা করা
হয়েছে ৩০ হাজার ৪০০ টাকা।
এদিকে ঢাকা,চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলার মতো
কুমিল্লায়ও ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেছে লকডাউনে দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে।
মঙ্গলবার নগরীর কান্দিরপাড় কুমিল্লার বিভিন্ন শপিং মল ও দোকানপাটের
ব্যবসায়ীরা এই বিক্ষোভ করে। এর আগে বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান মালিক সমিতির
নেতৃত্বে কুমিল্লার সাত্তার খান শপিং কমপ্লেক্স ও খন্দকার হক টাওয়ার সামনে
শত শত ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা দাবি আদায়ে সড়কে বিক্ষোভ
করে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা
ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও সকাল থেকে বেলা যত বেড়েছে তার সঙ্গে
পাল্লা দিয়ে কুমিল্লার সড়কে বেড়েছে যানচলাচল ও মানুষের সংখ্যা। লকডাউনের
চিত্র ছিলো একেবারেই ঢিলেঢালা। বিধিনিষেধ অতিক্রম করে টার্মিনাল কুমিল্লার
টার্মিনালগুলো থেকে কোন দূরপাল্লার গণপরিবহন ছেড়ে যায়নি। তবে মহাসড়কে
বেড়েছে থ্রি-হুইলারসহ ছোট গাড়ির সংখ্যা। এতে করে মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
বেড়েছে। অন্যদিকে লকডাউনে শহরে আধিপত্য দেখা গেছে রিকশা, সিএনজি চালিত
অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত রিকশার।
এছাড়া নগরীর সড়কের পাশের ছোটখাটো
বিভিন্ন দোকানপাট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খুলে বিকিকিনি করলেও বন্ধ ছিলো
মার্কেট ও শপিং মলগুলো। সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচল
করতে দেখা যায়নি। নগর বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা ছিলো একবারেই স্বাভাবিক।
দোকানপাট, শপিং মল ও বিপণিবিতান ছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উন্মুক্ত
স্থানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজার বসার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাহা
মানা হচ্ছে না। অলিগলির ভেতরের প্রায় সব দোকানই খোলা চোখে পড়ে।
তবে
প্রশাসন লকডাউনে মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবিধি
নিশ্চিত করতে মাইকিংসহ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে মাস্ক
ব্যবহার না করা, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে খুলে রাখা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও
দোকানপাটের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার
নগরীর কান্দিরপাড়, চকবাজার, পুশিল লাইনস, শাসনগাছা, রাণীর বাজার, ফৌজদারী ও
রাজগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে।
কুমিল্লার
নিউ মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে কাঁচা বাজার। সেই সাথে
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানও রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একাধিক খাওয়ার হোটেল। এক
সপ্তাহের লকডাউনে এই খাওয়ার হোটেল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে
না। মঙ্গলবার দুপুরে হোটেল খোলা দেখে এক হোটেল ব্যবসায়ীর কাছে জানতে
চাইলে, তিনি জানান আমরা হোটেল খোলা রাখলেও কাষ্টমারদের ভেতরে প্রবেশ করতে
দেওয়া হয় না। খাওয়া দাওয়ার জন্য কাষ্টমার আসলে পার্সেল দিয়ে দেওয়া হয়। তিনি
তিনি আরও জানান, এবেবারে এক সপ্তাহের জন্য দোকান বন্ধ রাখলে কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়বে।
লকডাউনে
দোকান খোলার রাখার দাবিতে কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
আতিক উল্যাহ খোকন বলেন, গত বছরের লকডাউনে আড়াই মাস কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা
লকডাউন পালন করেছে। সে ক্ষতি এখনো পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এখন লকডাউনে
সরকার কলকারখানা খোলা রেখেছে কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে-এটা হতে
পারে না। এবিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি
জানাচ্ছি। কুমিল্লার ব্যবসায়িরা চায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকানপাট খোলা
রাখতে। ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান খুলতে না দিলে আমাদের মাঠে বসে যাওয়া ছাড়া
আর কোন উপায় থাকবে না।
তিনি আরও জানান, সরকার আমাদের দাবি না মানলে
আমরা সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এছাড়া তিনি
ব্যবসায়ীদের নিয়ে আন্দোলনের হুমকিও দেন।
সরকারি নির্দেশনা ও
স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী
কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ জানান, মাস্কের ব্যবহার ও
স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে খুলে রাখা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার এবং দোকানপাটের বিরুদ্ধে কুমিল্লায়
নিরবিচ্ছিন্নভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার
মেবাইল কোর্টে কুমিল্লায় ৩৩টি মামলা ও ৩০ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা
হয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ছিলেন, জেলা প্রশাসক
কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মুস্তাফিজুর
রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনি রায় ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা
ফারহানা পৃথা।