জহির শান্ত ||
মহামারী
করোনা ভাইরাসে কুমিল্লায় একদিনে ১৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যা এ যাবৎকালে
আক্রান্তের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর আগে গত বছরের (২০২০ সাল) ১৬ জুন এক
দিনে সর্বোচ্চ ১১৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলো কুমিল্লায়। এ নিয়ে জেলায়
সর্বমোট শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৪৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৯
হাজার ৫৫ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৩২০ জন। রবিবার (১২ এপ্রিল) জেলা সিভিল
সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সেই সাথে ১১ দিন পর কুমিল্লায়
করোনায় মৃতু্যূহীন ২৪ ঘন্টার তথ্য প্রকাশ করেছে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন
কার্যালয়। আক্রান্তদের মধ্যে করোনার পরীক্ষা করা ৯ জন বিদেশগামীও রয়েছেন।
তথ্য
মতে, গতকাল কুমিল্লায় শনাক্ত হওয়া ১৫৩ করোনা রোগীর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন
এলাকারই রয়েছেন ৮২ জন। এছাড়াও সদর দণি উপজেলায় ৬ জন, চৌদ্দগ্রামে ৮ জন,
বুড়িচংয়ে ৪ জন, লাকসামে ৪ জন, দেবীদ্বারে ৩ জন, নাঙ্গলকোটে ৯ জন,
দাউদকান্দিতে ২ জন, মনোহরগঞ্জে ২ জন, আদর্শ সদর উপজেলায় ৪ জন, চান্দিনায় ৬
জন, বরুড়ায় ৫ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২ জন, মুরাদনগরে ৩ জন, তিতাসে ২ জন এবং
লালমাই উপজেলার ২ জন রয়েছে। এছাড়াও করোনার পরীক্ষা করা বিদেশগামী যাত্রীদের
মধ্যে ৯ জনের কোভিড সংক্রম ধরা পড়ে গতকাল।
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয়
ঢেউয়ে গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কুমিল্লায় সংক্রমণ শনাক্ত লাফিয়ে
বাড়তে থাকে। একই সাথে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও। এ মাসের শুরু থেকে ১১
দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২জন। এ সময়ে (১১ দিনে)
জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬ জন। সংক্রমিতদের এ তালিকায়
করোনার পরীক্ষা করা বিদেশগামীরাও রয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলায় করোনা সংক্রমণ
শুরুর পর থেকে প্রর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৭ শ’ ৪৪ জন। এর মধ্যে
প্রাণ হারিয়েছেন ৩২০ জন, সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৫৫ জন।
করোনা সংক্রমণ
প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে জেলা করোনা সংক্রমণ বিষয়ক
কুমিল্লার প্রাক্তণ সমন্বয়ক ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, কুমিল্লায়
সংক্রমণের হার অনেক বেশি। বিশেষ করে সিটি এলাকায় ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে
পড়ছে। এজন্য দ্রুত এলাকাভিত্তিক জোন চিহ্নিত করে লকডাউন করতে হবে। অথবা যে
বাড়িতে আক্রান্ত আছে সে বাড়িটি লকডাউন করতে হবে, যদি করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে
হয়। মানুষের জীবন জীবিকার দিকেও নজর দিতে হবে।
কুমিল্লায় করোনার সংক্রমণ
বাড়তে থাকলেও জনসাধারনের মধ্যে এখনো সচেতনতার চিত্র তেমন একটা দেখা যাচ্ছে
না। ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণার তথ্যে গতকাল থেকে কুমিল্লার
বাজার-শপিংমল গুলোতে যেন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত
দোকানপাট খোলা সময়ে শহর এবং শহরের বাইরের হাজার হাজার মানুষকে কেনাকাটায়
ব্যস্ত থাকার চিত্র দেখা গেছে কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, চকবাজারসহ নগরীর
বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা করোনা
প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এ
মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। আমরা চেষ্টা করছি সংক্রমণ
কমিয়ে আনার। মাঠে মোবাইল কোর্ট চালু রয়েছে, যে কোন ধরনের অনিয়ম রোধে তারা
কাজ করছেন। ইতোমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকেল ৫টার পর সকল দোকানপাট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।