করোনা
মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থা। তার ধাক্কা
লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনার তা-বে
আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পসহ অনেক শিল্পই অত্যন্ত দুরবস্থায়
রয়েছে। অনেক শিল্পেরই উৎপাদন কমে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বহু
শ্রমিক বেকার হয়েছে। তার পরও সরকারের সময়োপযোগী প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার
কারণে বেশির ভাগ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। এমনই সময়ে আরো ভয়ংকররূপে
দেখা দিয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এরই মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। এই অবস্থায় সংক্রমণের
লাগাম টানতে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণার চিন্তা-ভাবনা
করছে। কিন্তু ব্যবসায়ী ও অনেক অর্থনীতি বিশ্লেষকের এ েেত্র কিছুটা ভিন্নমত
রয়েছে। তাঁদের মতে, গতবারের সাধারণ ছুটির মতো এবার লকডাউন দেওয়া হলে এবং তা
দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতিতে এমন ধস নামবে, যা কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর হবে। তাঁরা
মনে করেন, অর্থনৈতিক কর্মকা- চালু রেখেই কিভাবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ
করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত এক
বছর তৈরি পোশাকশিল্পসহ কিছু রপ্তানি খাত তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে
পেরেছিল। সেই সঙ্গে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের বর্ধিত প্রবাহ বড় ধসের
হাত থেকে অর্থনীতিকে রা করতে পেরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সাড়ে ১৮
বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়
৩৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসে গত অর্থবছরের মার্চের
তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। করোনার এই বৈশ্বিক সংকটের সময়
আমাদের সঠিক পথে এগোতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোনো অবস্থায়ই সর্বাত্মক
লকডাউন দীর্ঘায়িত করা যাবে না। তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করা শিল্প-কারখানা
আবার মুখ থুবড়ে পড়বে। দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাবে এবং এক বিপর্যয়কর অবস্থার
সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে যে হারে দ্রুতগতিতে করোনা মহামারি বিস্তার লাভ করছে,
তার গতি রোধ করা না গেলেও দেশে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হবে। এখনই হাসপাতাল
ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। এই হারে রোগী বাড়তে থাকলে বিনা চিকিৎসায় হাজার
হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। এবং সে অবস্থায় আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য
কলকারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের
বক্তব্য যেমন যৌক্তিক, তেমনি যৌক্তিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যও। সে
কারণে জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েই কিভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায়,
তার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। ১৮ দফা নির্দেশনাসহ এর আগে ঘোষিত
নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে মানুষকেও আরো বেশি সচেতন
করতে হবে।