শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ||
প্রথম পর্ব
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লায় এসেছিলেন। এই হিসাবে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। ১৯২১ সালে কোন মাসে কুমিল্লায় এসেছিলেন? প্রশ্নটি উত্থাপিত হলো এজন্য যে কুমিল্লার জেলাপ্রশাসনকে কে বা কারা যেন বলেছেন ১৯২১ সালের ৫ এপ্রিল নজরুল ইসলাম প্রথম কুমিল্লায় এসেছিলেন। এই তারিখ উল্লেখ করে বিভিন্ন পত্রিকায় নজরুল ইসলামের কুমিল্লায় ৫ এপ্রিল-এ আগমন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এটি একটি বিভ্রান্তি। নজরুলের জীবনী নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেছেন, তাঁরা নজরুল ইসলামের কুমিল্লায় আগমনের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করে মতামত দেননি। তবে এপ্রিল অথবা মার্চ-এপ্রিল কথাটি উল্লেখ করেছেন। নজরুল ইসলামের কুমিল্লায় প্রথম আগমন বিষয়টি গবেষকদের মতামত নি¤œরূপ
১. ‘সকালবেলা ৩২, নম্বর কলেজ স্ট্রীটে এসে আমি আফজালুল হক সাহেবের মুখে শুনলাম যে নজরুল ভোরবেলাকার চট্টগ্রাম মেইলে কুমিল্লা চলে গেছে। সময়টা ছিল ১৩২৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাস। খ্রীস্টায় হিসাবে ১৯২১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাস।’
[কাজী নজরুল ইসলাম:স্মৃতিকথা- মুজফফর আহমদ, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃ:১২৫, অক্টোবর ১৯৬৯]
গোলাম মুরশিদ তাঁর ‘বিদ্রোহী রণকান্ত: নজরুল-জীবনী’ গ্রন্থে মুজফফর আহমদের কথাটি সমর্থন জানিয়েছেন, [প্রথমা, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ ২০১৮, পৃ:৯৯।]
গোলাম মুরশিদ লিখেছেন-
‘তবে এপ্রিলের শুরুতে একদিন সকালবেলায় মুজফফর আহমদ ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রীটে গিয়ে শুনতে পেলেন যে, সেদিনই ভোরবেলায় আলী আকবর খানের সঙ্গে নজরুল চট্টগ্রাম মেইলে করে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।’ তিনি মুজফফর আহমদের কথা বললেও ‘মার্চ-এপ্রিল মাস’ উল্লেখ করেননি-
২. নজরুল-গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম তাঁর ‘নজরুল-জীবনী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
‘(কিন্তু) ১৯২১ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মোতাবেক ১৩২৭ সালের চৈত্র মাসের শেষ দিকে একদিন সকালবেলা চট্টগ্রাম মেলে নজরুল, আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লা চলে গেলেন।’
[বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ১৯৭২]
৩. ড. অরুণকুমার বসু তাঁর ‘নজরুল-জীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘১৯২১-এর মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি, ১৩২৭-এর চৈত্রে, নজরুলকে চট্টগ্রাম মেল-এ চড়িয়ে আলী আকবর খান পাড়ি দিলেন কুমিল্লার পথে।’
[প্রকাশক: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, জানুয়ারি ২০০০, পৃ: ৫২।]
ড. বসু মূলত মুজফফর আহমদের বক্তব্যই গ্রহণ করেছেন। তবে ‘মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি’ কথাটি বিভ্রান্তিমূলক।
৪. আজহারউদ্দিীন খান তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যে নজরুল’ গ্রন্থে লিখেছেন-
‘নজরুল কাজ ছেড়ে দিয়ে আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লা চলে গেলেন।’
(সুপ্রীম পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ:৩০-৩১ (১৯২১ মার্চ-এপ্রিল)’
৫. ড. সুশীলকুমার গুপ্ত তাঁর ‘নজরুল-চরিতমানস’ গ্রন্থে লিখেছেন-
‘যাই হোক, মুজফফর আহমদের বারণ সত্ত্বেও একদিন নজরুল আলী আকবর খানের সঙ্গে তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এটা ১৩২৭ সালের চৈত্রমাসের ঘটনা।’ [দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৩৮৪, পৃ:৫১]
উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিগুলো দেয়ার উদ্দেশ্য হলো, কেউ নির্ধারিত কোনো তারিখের কথা উল্লেখ করেননি। ইংরেজি মার্চ-এপ্রিল মিলে চৈত্রমাস। মার্চ মাস ধরলে চৈত্রের প্রথম দিক বুঝায়, এপ্রিল মাস ধরলে চৈত্রমাসের দ্বিতীয়ার্ধ। তবে দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যেই অর্থাৎ এপ্রিলেই নজরুলের কুমিল্লায় আগমন। ড. রফিকুল ইসলাম বলেছেন-‘চৈত্রের শেষ দিকে একদিন’-এ কথাটি বিবেচনায় এনে এপ্রিলের ১৫ তারিখের মধ্যে শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি করা যেতে পারে। তবে ৫ তারিখ বিষয়টি নির্ধারণ বিতর্কিত। দুঃখের বিষয় হলো বৈশ্বিক বিপর্যয় অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২১ সালের এপ্রিলে কুমিল্লায় নজরুল ইসলামের আগমনের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাতে যতই কষ্টবোধ থাকুক না কেন, বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা যায় না, যাবে না। তবে জেলাপ্রশাসক কর্তৃক আহূত সভায় সকলেই একমত পোষণ করেছেন যে, যখনই অবস্থার উন্নতি হবে, তখনই ২০২১ এর মধ্যে অনুষ্ঠানটি উদ্যাপিত হবে। ‘আশায় বুক বাঁধা’ কথাটির প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস যাপন করে কিছু কথা বলতে চাই।
নজরুল ইসলামের বার্ষিক জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান জাতীয়ভাবে উদ্যাপনের জন্য কুমিল্লাবাসীর প্রবল প্রত্যাশা থাকলেও অনেককাল বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। এদিক দিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল অনেকটাই অগ্রগামী। এ নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না, তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, ত্রিশালের চেয়ে কুমিল্লার গুরুত্ব অনেক বেশি, অন্তত নজরুল ইসলামের সরব উপস্থিতির কারণে। ত্রিশালে তিনি ছিলেন স্কুল-পড়–য়া ছাত্র। কুমিল্লায় এসেছিলেন যৌবন বয়সে, যুদ্ধ-ফেরতা সৈনিক হিসেবে, সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে। যে বয়সে বিশ্বকে জয় করার স্বপ্ন মানুষ যাপন করে, নজরুল সে বয়সেই কুমিল্লায় এসেছিলেন। তার স্বাক্ষর উজ্জ্বলতায় সমৃদ্ধ। দু’নারীকে মুগ্ধ করেছিলেন প্রেমে, গাঁট বাঁধার সোপানও রচিত হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে প্রতিবাদী হওয়ার আভিজাত্যে দু’বার গ্রেপ্তার বরণ করলেন কুমিল্লায়। ২২/২৩ বছরের যুবক তখনকার কুমিল্লার সামগ্রিক গুণিজনের ¯েœহভাজন ও সাহচর্য লাভ করেছিলেন। কুমিল্লাবাসী তাঁকে বরণ করে নিয়েছিল আপন ঔদার্যে এবং পরম মমতায়। তাই বিরজাসুন্দরীদেবী হলেন ‘মা’, হেমপ্রভা মজুমদার হলেন মাতৃকল্প নেত্রী, গিরিবালাদেবী মাসিমা, পরে শাশুড়ি, ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত হলেন পিতৃকল্প অভিভাবক, বন্ধুসজ্জন হলেন সুলতান মাহমুদ মজুমদার, অতীন রায়, বীরেন সেন। সঙ্গীতের সহযোদ্ধা হলেন মোহাম্মদ হোসেন খসরু, শচীনকর্তা প্রমুখ, আতিথ্য লাভ করলেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষের আবাসনে। বিষয়টি ভাবতে হবে একশত বছরের পূর্বের প্রেক্ষাপটে, কুমিল্লার সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায়। সেজন্যই কুমিল্লায় নজরুল ইসলামের পাঁচবারের (১৯২১-১৯২৪) আগমন ও এগারো মাসের (দৌলতপুর ২মাস ও কুমিল্লা শহরে ৯মাস) অবস্থান বিষয়টি এবং সেসময়ে তাঁর সাহিত্য-সাধনা, সঙ্গীত রচনা, রাজনৈতিক দীক্ষালাভ-সবকিছু মিলিয়ে নিশ্চয়ই স্বর্ণযুগের ইঙ্গিতবহ বলে মনে করা হয়। এই দাবিতে কুমিল্লাবাসী প্রতিবছর নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠানটি কুমিল্লায় উদ্যাপনের জন্য দাবি জানিয়ে এসেছে। ঢাকায় যখন এ নিয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়, তখন কুমিল্লার প্রতিনিধিরা কোনো ভূমিকাই পালন করেননি। যা ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক, অথচ তাঁরা তাঁদের অপারগতা বা ব্যর্থতায় কাতর হতে দেখিনি। এমনকি প্রতিবছর সরকারিভাবে জেলাপ্রশাসনের আয়োজনে তিনদিন ব্যাপী যে জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন, সে চিঠিতে লেখা থাকে ‘কুমিল্লার দৌলতপুর’-এ অনুষ্ঠানের কথা। তাতে বুঝা যায়, কুমিল্লা শহর নয়, মুরাদনগরের দৌলতপুরেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ নিয়ে বহুবছর যাবত আমরা আপত্তি জানিয়ে বলেছি, এটি হওয়া উচিত ‘কুমিল্লা ও কুমিল্লার দৌলতপুর।’ তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঢাকায় প্রস্তুতি সভায় কুমিল্লার প্রতিনিধিরা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, তাও জানা যায়নি। এরূপ এক কষ্টার্জিত বেদনাদায়ক পরিস্থিতি বুঝানোর জন্য কুমিল্লার সংস্কৃতিসেবীরা একসময় রাজপথে মানববন্ধন, প্রতিবাদসভা, স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদি করেছেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার যখন ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় আসে, বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেবছর সরকার ত্রিশাল ও কুমিল্লার দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে দু’জায়গাতেই জাতীয়ভাবে নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় ত্রিশালে এবং সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন। আমি ত্রিশাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আমাকে সেখানে একদিন প্রবন্ধ উপস্থাপন করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত করা হয়। তখন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান। তিনি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে শেষদিন পর্যন্ত আমি সেখানে প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। তখন ত্রিশালবাসীর আবেগ ও আন্তরিকতা দেখে বিমোহিত হয়েছি। শুনেছি, কুমিল্লায় খেলার মাঠ অর্থাৎ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে সব ল-ভ- হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী হেলিক্যাপ্টারে আসতে পারেননি, সড়কপথে এসে এ তা-বের মধ্যে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। ত্রিশালের অনুষ্ঠানের কথা বলতে হয়। দরিরাম স্কুলে, যে স্কুলে নজরুল ইসলাম ৭ম শ্রেণিতে পড়েছিলেন, সে স্কুলের মাঠের দক্ষিণপাশে নজরুলমঞ্চ তৈরি করা হয় (এখন স্থায়ীভাবে দৃষ্টিনন্দন বৃহৎ নজরুলমঞ্চ স্থাপিত হয়েছে), প্রতিদিন নানা অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনা সভা, নজরুল সঙ্গীত পরিবেশনা, নাটক ইত্যাদি রাত বারোটা পর্যন্ত চলেছিল, সমস্তদিন ব্যাপী নজরুল-মেলা, নানা প্রকার দোকানপাট, লোকে লোকারণ্য উৎসবের আভিজাত্যে আবেগ-শ্রদ্ধায় ছিল ভরপুর। শুনেছি এ ধারাবাহিকতায় এখন বাৎসরিক নিয়মিত উদ্যাপনে সমৃদ্ধ। ত্রিশালবাসী পেরেছে-তারা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুলের নামে বেসরকারি কলেজটিকে সরকারিকরণ, দরিরামপুর স্কুলটি এখন সরকারের বদান্যতায় ‘নজরুল একাডেমি’ অর্থাৎ এ অঞ্চলটি এখন নজরুলময় হয়ে গেছে। সপ্তমশ্রেণি ছাত্র নজরুল ইসলাম এখানে পড়তে এসেছিলেন, এটুকুই স্মৃতি।
কথাশিল্পী শওকত ওসমানের সঙ্গে কাজীর সিমলা দারোগাবাড়ি অর্থাৎ কাজী রফিজউল্লাহ সাহেবের বাড়ি গিয়েছি, সেখানে একটি কাঠের খাটের পায়ায় কাগজের মলাটে লিখা রয়েছে-‘এই খাটে নজরুল ইসলাম শয়ন করিতেন।’ কথাটি আদৌ সত্যি নয়। বিষয়টি একটু খুলে বলা দরকার।
ত্রিশালে ঘটা করে নজরুলের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপিত হলেও দারোগা বাড়ির লোকজনকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। বিশেষত দারোগা কাজী রফিজউল্লাহর উত্তর-প্রজন্মের লোকদের তেমনভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এই কথাটি ড. মনিরুজ্জামান জানতে পেরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, দারোগা সাহেবের দু’ছেলে ময়মনসিংহ শহরের কাজীপাড়ায় থাকেন। তাই সমাপনী অনুষ্ঠানে তাঁদেরকে উপস্থিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল বেলা ১১টায়। ড. মনিরুজ্জামান আমাকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে কাজীপাড়া উপস্থিত হলেন, পরিচয় দিলেন, তাঁরা আমাদের সাদরে গ্রহণ করলেন। দারোগা সাহেবের জ্যেষ্ঠসন্তান বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করতেন, তখন অবসরপ্রাপ্ত। তিনি অকৃতদার। তাঁর ছোট ভাই ঠিকাদারি ব্যবসা করেন, ভ্রাতৃবধূ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। আমরা সকাল ৮টায় গিয়েছি। আমাদের সকালের নাস্তায় আপ্যায়ন করলেন এবং আমাদের আগমনের হেতু বিনীতভাবে ড. মনিরুজ্জামান বললেন এবং তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়ে আসতে অনুরোধ করলেন। তখনই তাঁদের অভিমান-ক্ষোভ-অবহেলার কথা বিস্তারিত জানালেন এবং আসতে অনীহা প্রকাশ করলেন। কিন্তু আমাদের আন্তরিক আবেদনকে শেষ পর্যন্ত উপেক্ষা করতে পারেননি। তাঁরা এসেছিলেন। তখন আমি দারোগাসাহেবের জ্যেষ্ঠছেলের কাছে তাঁদের বাড়িতে রক্ষিত খাটের কথা জানতে চাই। তিনি প্রথমে উষ্মা প্রকাশ করলেন এবং জানালেন যে, দারোগা কাজী রফিজউল্লাহ এ খাট তৈরি করেছেন, ছুটিতে বাড়ি এলে তিনি তাতে শয়ন করতেন, অন্য সময় দাদা-দাদি ব্যবহার করতেন। কখনও নজরুল ইসলাম এ খাটে শয়ন করেননি, এ সুযোগ ছিল না। ঠিক এরূপ একটি খাট আছে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে খাঁ বাড়িতে। বলা হয়-এ খাটে নজরুল নার্গিসকে নিয়ে বাসর যাপন করেছেন। অথচ তথ্যে জানার যায়- বিয়ের রাতে কোনো প্রকারে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বীরেন সেনকে সঙ্গে নিয়ে রাত্রেই নজরুল ইসলাম হেঁটে কুমিল্লায় চলে এসেছিলেন। এতকিছু জানার পরও তথাকথিত গবেষকগণ খাটের পেছন ছাড়ছেন না। যেমনটি নজরুল-নার্গিস এর বিয়ের ব্যাপারটিও এখন পর্যন্ত ফয়সালা করা যায়নি। কেউ বলেন বিয়ে হয় নি, কেউ বলেন আকদ হয়েছে, কেউ ইসলামী শরীয়তের বিধান নিয়ে তর্ক করে নানা মত প্রকাশ করছেন। শুধু আমরা এতটুকুই জানি- নজরুল-নার্গিস এর দাম্পত্য জীবন একদিনের জন্যও পালন করা হয়নি। যে বিয়ে দাম্পত্য জীবন যাপনের সুযোগ দেয়নি, তাকে বিয়ে বলে লাভ কি, আবার বললেও সংসারটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলো কোনো গবেষণা নয়। সময় নষ্ট, কাগজ নষ্ট, উষ্ণ চিন্তাপ্রবাহের বাতাবরণ।
(বি:দ্র: ২০/০৪/২০২১খ্রি: দ্বিতীয় পর্ব ছাপানো হবে।)