তানভীর দিপু:
সর্বাত্মক
লকডাউনের ঘোষণার পর থেকেই কুমিল্লার সড়কে-মহাসড়কে যাত্রীদের ভিড়। ১৪
এপ্রিল থেকে কঠোরভাবে লকডাউন পালন করা হবে এমন তথ্যে অনেকেই আগে থেকে চলে
যাচ্ছেন গন্তব্যে, যে কারণে গণপরিবহন না থাকলেও বিকল্প উপায়ে যাবার জন্য
পথে নেমেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন অংশে গতকাল ছিলো
যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের জটলা। কেউ কেউ অপেক্ষা করেছেন ঘন্টার
পর ঘন্টা। মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা কিংবা মিনিবাসে করে গাদাগাদি করেই
রওনা হতে হয়েছে যাত্রীদের। স্বাস্থ্যবিধি বলতে শুধুমাত্র মাস্ক পরেই এই
যাত্রায় নেমেছেন তারা। ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী
নেয়ার কথা থাকলেও, যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হলেও
স্বাস্থ্যবিধি মানেনি কোন চালকই।
গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
পদুয়ার বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। ভেঙে ভেঙে ঢাকা থেকে
পরিবারসহ কুমিল্লায় এসে আটকা পড়েছেন আমেনা বেগম, যাবেন চাঁদপুরে নিজ
বাড়িতে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে শিশু সন্তানসহ প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করছেন
মহাসড়কের পাশে। আমেনা বেগম জানান, সিএনজি অটোরিকশার পর মাইক্রোবাস ব্যবহার
করে দুইগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে কুমিল্লায় পৌঁছেছেন। চাঁদপুর যাবার কোন গাড়ি
পাওয়া যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম থেকে টাঙ্গাইলগামী লোকমান হোসেনও থেমে
গেছেন পদুয়ারবাজারে। চট্টগ্রাম থেকে ১৫০০ টাকা খরচ করে কুমিল্লায় এসে
অপেক্ষা করছেন ঢাকাগামী যানবাহনের। তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রোবাসে
করে গাঁদাগাদি করে এসেছি। টাকা খরচ করেও যানবাহন পাওয়া যাচ্ছেনা।
মহাসড়কের
কুমিল্লা অংশে অপেক্ষমান যাত্রীদের বেশির ভাগই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম,
চাঁদপুর, ফেণী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী। লকডাউনের পাশাপাশি
অনেকে রমজানের প্রথম দিন পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য ফিরছেন বাড়িতে।
এদিকে
লকডাউনের আগে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন সড়কেও গতকাল ছিলো অসহনীয় যানজট। সকাল
থেকেই নগরীর সড়কগুলোতে সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশার ভিড় লেগেই ছিলো। চকবাজার,
রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, টমছমব্রীজে যানজটের কারনে অনেকেই হেঁটে যাতায়াত
করেছেন। বাজার এলাকাগুলোতে এই চিত্র ছিলো আরো প্রকট। রিকশায় করে কান্দিরপাড়
থেকে টমছমব্রীজ যেতেই সময় লেগেছে আনুমানিক ৪০মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।
টমছমব্রীজ
এলাকার বাসিন্দা সাইফুদ্দিন জানান, লকডাউনের কথা শুনলে রাস্তায় মানুষের
ভিড় বেড়ে যায়। সবাই হুড়োহুড়ি করে নিজেদের কাজকর্ম সেরে ফেলার চেষ্টা করে।
কারোরই মধ্যে যেন করোনার ভয় নাই।
১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে
জরুরী সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে এই ঘোষণায় আগে থেকেই বাজার সদাই করে নেয়ার
জন্য গতকাল বাজারগুলোতে ছিলো নাগরিকদের ভিড়। ৭দিনের প্রয়োজন রসদ কিনে নেয়ার
জন্যই যেন ভিড়। এই ভিড়ে অনেকেই অমান্য করেছেন স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক
ব্যবহার ছাড়াও বাজারে গেছেন অনেকে। সামাজিক দূরত্বও মাানেননি কেউ।
রাজগঞ্জে
বাজার করতে আসা জুলকার নাইন জানান, বাজারে এসে অবাক হয়ে গেছি। এত মানুষ!
কেউ করোনাকে ভয় পাচ্ছেনা, সবাই যেন লকডাউনকে ভয় পেয়েই বাজার করতে আসছে।
এদিকে গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮২ জন।