মাসুদ আলম ।।
কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে এবং করোনায় আক্রান্ত
হয়ে এ পর্যন্ত (১০ মাসে) মারা গেছেন ১০২৮ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জন করোনায়
আক্রান্ত হয়ে এবং ৮২৩ জন লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। আর গত ১১ দিনে মারা
গেছেন ৬০ জন। এই ৬০ জনের মধ্যে কতো জন লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে এবং কতো জন করোনা
আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। কুমিল্লায় করোনা
শনাক্তের হার বাড়ার সাথে সাথে প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। কেউ
মারা যাচ্ছেন আক্রান্ত হয়ে, আবার কেউ করোনা লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে। কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে করোনা
রোগিদের বাঁচার আকুতি আর স্বজনদের আহাজারি, আর্তনাদ। এই যেন এক বিভীষিকাময়
পরিবেশ। করোনা ওয়ার্ডে স্থাপিত ১৮ শয্যার আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। বেড
সংকট দেখা দিয়েছে আইসোলেশন ও করোনা ইউনিটসহ সব জায়গায়।
সূত্র জানায়,
করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই এপ্রিলের
১১ দিনে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরে ৩ জুন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। সেই জুন মাস থেকে চলতি বছরের ১১
এপ্রিল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ঐ করোনা
ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ হাজার ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই তালিকায়
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড ছিলো গত বছরের আগস্ট মাসে ১৬০ জনের। দ্বিতীয়
ঢেউয়ে করোনায় মৃত্যুর সেই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ডের পথে এগিয়ে যাচ্ছে
এপ্রিল মাসের মৃত্যু তালিকা। এতোমধ্যে ১১ দিনের মাথায় ৬০ জনের মৃত্যু
হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং করোনার লক্ষণ
উপসর্গ জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া এক হাজার ২৮ ব্যক্তির মধ্যে করোনায়
আক্রান্ত ছিলেন ১৪৫ এবং উপসর্গ নিয়ে ৮২৩ জন। আর গত ১১ দিনে মারা গেছেন ৬০
জন। এই ৬০ জনের মধ্যে কতো জন লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে এবং কতো জন করোনা আক্রান্ত
হয়ে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
সূত্রে আরও জানা যায়, সর্বশেষ
আক্রান্ত হয়ে গত ঘন্টায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে
আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সাথে জেলায় নতুন করে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা ওয়ার্ডে স্থাপিত ১৮ শয্যার আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। বেড সংকট দেখা
দিয়েছে আইসোলেশন ও করোনা ইউনিটসহ সব জায়গায়।
করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা ও
উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন জানান, করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যু ও ভর্তি
রোগির যাবতীয় তথ্য প্রতিদিন আমরা সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া হাসপাতালে করোনা রোগির চাপ বাড়ছে। আইসিইউতে বেড খালি নেই। তারপরও
চেষ্টা করছি রোগিদের সেবা প্রদানের।
এবিষয়ে কুমিল্লা জেলার সিভিল
সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে করোনায়
আক্রান্ত মৃত্যুর পরিসংখ্যানমূলক তথ্যগুলো আমরা যথাযথভাবে সরবরাহ করে থাকি।
প্রতিদিনই জ¦র, সর্দি, নিউমোনিয়াসহ নানা লক্ষণে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ
মারা যাচ্ছেন। সেটাকে সরাসরি করোনা বলা যাবে না। তাই এই ধরণের মৃত্যুর
তথ্যগুলো এখন দেওয়া হচ্ছে না।
সোমবার (১২ এপ্রিল) কুমিল্লা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা
ওয়ার্ডে রোগির সংখ্যা বেড়েই চলছে। আইসোলেশন, করোনা ইউনিট ও ১৮ শয্যার
আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। সব জায়গায় শুধুই নেই নেই। মুমূর্ষু রোগির
পরিমাণ বাড়লেও আইসিইউতে শয্যা সংকট থাকায় সেবা পেতে মানুষের পে তা
কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সপ্তাহ তিনেক ধরে কুমিল্লায়
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফলে কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত করোনা ওয়ার্ডে চাপ
বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগিদের বেড দেওয়া যাচ্ছে না। এতে করে
শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা নতুন রোগিদের ভর্তি নিয়ে
বেড দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। করোনা পজেটিভ ওয়ার্ডেও একই
অবস্থা। সেখানেও বেড়েছে রোগির চাপ। খালি নেই আইসিইউতে কোন বেড।
অসুস্থ
হলে সোমবার সকালে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় কুমিল্লার
চৌদ্দগ্রামের কাশিনগরের বড়কাসনাই গ্রামের আলী নোয়াবের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন
(৬০)কে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে গেলে করোনার কোন লক্ষণ না থাকলেও
রোগির গড়াগড়ি দেখে চিকিৎসক তাকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালের
নিচতলার করোনা ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হলে ফোরে রোগির গড়াগড়ি, চিৎকার এবং
স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। কেউ একটু এগিয়ে আসছেন না, সবাই
তাকিয়ে দেখছেন। কারণ তাদের সন্দেহ অসুস্থ নারী করোনা রোগি। পরবর্তীতে একজন
চিকিৎসক এসে ওই নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং করোনা ওয়ার্ডের দোতলায়
নিয়ে যান কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তিনি মারা যান।