ঘোষনগরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টা-পাল্টি মামলা
Published : Sunday, 25 April, 2021 at 12:00 AM
বিশেষ প্রতিবেদক: কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় আওয়ামীলীগের একাধিক গ্রুপের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ। সম্প্রতি দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে দুই গ্রুপের বিরোধীতা চরম পর্যায়ে রূপ নেয়।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আবুল কালাম আজাদকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করায় স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেননি এমপি গ্রুপ। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এর আপন চাচা এএফএম তারেক মুন্সি ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এমপি গ্রুপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নৌকার বিরোধীতাই করেন। অবশেষে ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হওয়ার পরও দুই গ্রুপের বিরোধীতা থেমে নেই।
ওই নির্বাচনে দেবীদ্বার উপজেলার ধলাহাস গ্রামের আজাদ আহম্মেদ সালাউদ্দিন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ এর পক্ষে অবস্থান নেয়। একই উপজেলার আসাদনগর গ্রামের নাছির উদ্দিন নেছার এমপি গ্রুপের নির্দেশনার বাহিরে যাননি। নির্বাচনের দিন দুই গ্রুপের মধ্যে চরম বাক-বিতন্ডাও হয়। শুরু হয় দুই পক্ষের অন্ত:দ্বন্দ্ব।
গত ১৮ এপ্রিল (রবিবার) সন্ধ্যায় বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। সংঘাতে দুই গ্রুপের ৩জন আহত হয়। তারা হলেন- দেবীদ্বার উপজেলার ধলাহাস গ্রামের মোখলেছ মিয়ার ছেলে আজাদ আহাম্মেদ সালাউদ্দিন (৩৫), একই উপজেলার আসাদনগর গ্রামের নাছির উদ্দিন নেছার (৪০), বুড়িচং উপজেলার ঘোষনগর গ্রামের মৃত হোসেন মিয়ার ছেলে গোলাম আব্বাস গনি (৪৫)।
আর সংঘাতের ঘটনায় দুই পক্ষের পাল্টা-পাল্টি মামলায় ১২জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আহত সালাউদ্দিন গ্রুপের অভিযোগ- সালাউদ্দিন পরিবার নিয়ে কয়েক বছর যাবৎ ঘোষনগর এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করে। ঘটনার দিন সালাউদ্দিন বাসা সংলগ্ন মসজিদের সামনে অবস্থান করা অবস্থায় নেছার ও গণি প্রাইভেটকার যোগে এসে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে পহরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে চাপাতি দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় আহত সালাউদ্দিন এর স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে ৫জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে সুমি আক্তার জানান- ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ইফতারের পর আমার স্বামী মসজিদের সামনে গেলে উল্লেখিত আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে।
আহত সালাউদ্দিন জানায়, গত কিছুদিন পূর্বে অনুষ্ঠিত দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নেছার ও গনি ধানের শীষের প্রার্থীর পে আওয়ামীলীগ ভোটার ও নেতা কর্মীদের হুমকি ধমকি প্রদানের বিষয়ে আমার সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় আমার ওপর হামলা ও হত্যার চেষ্টা করতে থাকে। মুলত ব্যক্তিগত কোন বিরোধ না থাকলেও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করা গনিসহ অন্যান্য আসামীরা আমার উপর হামলা করে।
তবে প্রতিপক্ষ গোলাম আব্বাস গণি জানান- দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে নেছার ও সালাউদ্দিন এর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। নেছার আমার সাথে চলাফেরা করে। গত কয়েকদিন যাবৎ তাকে হত্যা করতে তারা কয়েক জায়াগায় গোপন বৈঠক করে এবং মোবাইলে হুমকি দেয়। ঘটনার দিন আমি গাড়ি চালিয়ে নেছারসহ আরও ৩জনকে সাথে নিয়ে আমার নিজ এলাকা ঘোষনগর গ্রামে এক দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছিলা। আমার উত্তর ঘোষনগর মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছতেই পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা সালাউদ্দিন এর নেতৃত্বাধীন বাহিনী আমার গাড়ির ভিতরে মরিচের গুড়া ছুড়ে মারে। আমি চোখ খুলতে না পারায় গাড়িটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। এসময় তারা আমাকে ও নেছারকে এলোপাথারী কোপাতে থাকে। নেছারসহ আমি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। নেছারের অবস্থা আশঙ্কা জনক। এ ঘটনায় নেছার এর মা আফিয়া খাতুন বাদী হয়ে ৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে বুড়িচং থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান- আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটুকু জেনেছি আহত সালাউদ্দিন ও আহত নেছার এর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। ওই দ্বন্দ্বে বুড়িচং উপজেলার ঘোষনগরে এসে সংঘাতে রূপ নেয়। আমরা দুই পক্ষের পৃথক অভিযোগ পেয়ে মামলা রেকর্ড করেছি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।