রণবীর
ঘোষ কিংকর: গ্রীষ্মের অগ্নিঝড়া খড়তাপে পুড়ছে কুমিল্লাসহ গোটা দেশ।
কাঠফাঁটা রৌদ্রে অতিষ্ঠ প্রাণ ও প্রকৃতি। এরই মাঝে কুমিল্লার পথে প্রান্তরে
আপন মহিমায় নিরবে সৌন্দর্য্য বিলাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। প্রচন্ড দাবদাহে
প্রাণহীন রুতাকে ভেদ করে কৃষ্ণচূড়া বয়ে এনেছে একরাশ শান্তির বার্তা।
কুমিল্লা
মহানগরী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ জেলা জুড়ে পথের পাশে ছাতার মত মেলে থাকা
লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়ার ডাল-পালায় অগণিত ফুলে ফুলে অবারিত উচ্ছাস। করোনায়
মন খারাপের মধ্যেও রাজপথে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য্যে মোহিত সবাই।
ঝলমলে রংয়ের খেলা আর কখনও কখনও বাতাসে ফুলের সুধায় আপন গন্ধে ছন্দ তুলে
ধরেছে প্রকৃতি।
কালবৈশাখীর রুদ্রতান্ডব কখনও রোদ্রের খড়তাপ নিয়ে
গ্রীষ্ম। এসময় উচু আসনে লাল বসনে রাণীরবেশে প্রকৃতির মাঝে অনন্য বার্তা যোগ
করে চলছে কৃষ্ণচূড়া। উত্তপ্ত কালো পিচঢালা মরিচিকা দেখা মহাসড়ক রূপসী করে
তুলতে কৃষ্ণচূড়ার ভূমিকাও কম নয়। এর মায়াবি আহবানে করোনাকালিন সময়েও
মহাসড়ের পাশে এবং গ্রামাঞ্চলের পথের ধারে ছুটে আসছে সব বসয়ী মানুষ। এর
মনোমাতানো রংয়ে মাতায়োরা প্রকৃতিকে বিমোহিত করে তুলছে।
সরেজমিনে
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষ্ণচূড়ার অপার সৌন্দর্য্য।
বসন্তে ঝড়ে যাওয়া সবুজ পাতার আদলে কৃষ্ণচূড়া গাছের প্রতিটি ডালায় থোকায়
থোকায় পাপড়ি মেলে ¯্রষ্টার মহিমা জানান দিচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। কুমিল্লা জেলার
বিভিন্ন পথে প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। এ যেন প্রকৃতি প্রেমীদের এক
অনাবিল প্রশান্তি। বাতাসের দোলায় প্রকৃতির সাথে যেন চলছে অকৃতিম ভাব
বিনিময়। গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার পথেই পথচারীরা ণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে
লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য বিমোহিত হয়ে দেখেন।
ইট-কংক্রিটের
কুমিল্লা শহরের প্রধান বিনোদন স্থান ধর্মসাগরপাড়। যেখানে কর্মব্যস্ত
শহরবাসী ভোরে প্রাতঃ ভ্রমনসহ সন্ধ্যায় কান্তি দূর করতে ছুটে আসেন। এছাড়া
বিনোদনের জন্য দিনভার যেখানে থাকে সব বয়সী মানুষের আনা-গোনা। ওই প্রিয়
ধার্মসাগর পাড়ের কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে রহস্য খুঁজতে
থাকে মানুষ।
কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। ধারণা করা হয়,
আবেগ ভালবাসার কৃষ্ণচূড়া ১৯শ শতাব্দির প্রথম দিকে আফ্রিকার মাদাগাস্কা থেকে
ইউরোপ হয়ে উপমহাদেশে এসেছে। আর বহুকাল একক রাজত্ব বিস্তার করে চলছে
বাংলাদেশে। এদেশে কৃষ্ণচূড়া ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে। প্রথম
মুকুল ধরার কিছুদিনের মধ্যেই পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে উঠে। ফুলের প্রধান
বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রঙ। তরুরাজ্যে এত উজ্জ্বল রঙ দুর্লভ। ফুলের পাপড়ির রঙ
গাঢ় লাল হয়ে থাকে।
কৃষ্ণচূড়ার অপার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক
খ্যাতিমান কবিগণ লিখে গেছেন অনেক মনোমুগ্ধকর কবিতা। বিখ্যাত কবিদের থেকে
পিছিয়ে নেই খ্যাতি না পাওয়া অনেক কবিরাও। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার
কুরছাপ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদও কৃষ্ণচূড়া নিয়ে লিখেছেন
কবিতা-
‘ফাগুন মাসে আগুন লেগে কৃষ্ণচূড়া জ্বলছে,
মৌমাছিরা ছুটে এসে গুনগুনিয়ে বলছে’।
কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা
জানান- কৃষ্ণচূড়া অবশ্যই প্রকৃতির শোভাবর্ধণকারী বৃক্ষ। তবে এর অনেক ভেষজ
গুণ রয়েছে। যা আমাদের অনেকেরই অজানা। এছাড়া গ্রীষ্মের খরতাপে ছায়াদান করে
কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ।
তিনি আরও জানান- কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস আফ্রিকার
মাদাগাস্কা দ্বীপে। ১৮২৪ সালে মরিশাস থেকে আসে ইংল্যান্ডে। পরবর্তীতে আসে
ভারতীয় উপমহাদেশে। কৃষ্ণচূড়া বর্তমানে ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকা, হংকং,
তাইওয়ান, চীন, ভারতসহ বাংলাদেশ হয়। কিন্তু ফুল ফোটার মৌসুম বিভিন্ন দেশে
ভিন্ন সময়। আমাদের সকলেরই উচিত অন্তত একটি করে হলেও কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রোপণ
করা। এতে একদিকে বাড়বে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অপরদিকে ভেষজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে
ব্যাপক ভূমিকা রাখবে ।