Published : Friday, 21 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 21.05.2021 1:51:35 AM
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
৫০
হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও স্বশুর বাড়ির লোকজনের অত্যাচার সইতে
না পেরে সুমি আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার
অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ যৌতুকলোভী স্বামী ও শ^শুরকে আটক করে
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগর
উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়,
মোচাগড়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের মেয়ে সুমি আক্তারকে প্রায় দুই বছর পূর্বে
একই গ্রামের আক্কাস মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেনের নিকট বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের
পর থেকে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজন ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য সুমি
আক্তারকে প্রায় অত্যাচার নির্যাতন করতো। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে
আনুমানিক ৭ মাস পূর্বে সে বাবার বাড়ি চলে আসে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ
দরবারে সুমি আক্তারকে শ^শুর বাড়ি যাওয়ার কথা বলা হলেও অত্যাচার নির্যাতনের
ভয়ে যায়নি। এরমধ্যে বিগত ৪ মাস পূর্বে সে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। ছেলের
মুখের দিকে তাকিয়ে সে শ^শুর বাড়ি যাইতে রাজি হয়। ঈদুল ফিতরের পরদিন অর্থাৎ
শনিবার স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজনের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সুমি আক্তারকে
তুলে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়,
স্বামীর বাড়ি যাওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় অর্থাৎ বুধবার সকালে সুমি আক্তার
অসুস্থ্য বলে স্বামী বিল্লাল হোসেন তার শ^াশুড়িকে বাড়ি গিয়ে জানায়। খবর
পেয়েই পাশের বাড়ির জ¦া সাজিয়া বেগমকে নিয়ে মেয়ের বাড়ি আসে মোর্শেদা বেগম।
ঘরে ঢুকেই দেখে তার মেয়ে সুমি আক্তার একটি বস্তার উপর অজ্ঞান অবস্থায় বসে
আছে। তাকে ধরা মাত্রই সে পড়ে গেলে দেখতে পায়, ঘরের একটি নীচু তীরের মধ্যে
ওরনা দিয়ে সুমি আক্তারের গলা বাধাঁ। ওই সময় গলার বাঁধ খুলে দিলে সে মাটিতে
পড়ে যায়।
বুধবার দুপুরে বিষয়টির ব্যাপারে থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল
পৌঁেছ সুরতহালপূর্বক লাশ ও উক্ত ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যৌতুকলোভী স্বামী
বিল্লাল হোসেন (২২) ও তার বাবা আক্কাস মিয়াকে (৪৫) আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় বুধবার বিকেলে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে সুমি আক্তারের মা
মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে কুমেক হাসপাতাল
মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সুমি আক্তারের লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।
দুপুরে আটক অভিযুক্ত দুই আসামীকে কুমিল্লার আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ
বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এ দিকে মামলার বাদী
মোর্শেদা বেগম বলেন, তার মেয়েকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য পরিকল্পিত ভাবে
হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। যৌতুকের জন্য পরিবারের সকলেই তাকে মারধর করতো।
মেয়ের ননদ রুপালী বেগম ও দেবর স্বপন মিয়াকে আসামী করতে চাইলে পুলিশ করেনি,
পরে করা যাবে বলে জানায়। আমি আমার মেয়ে হত্যা কারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার
চাই।
মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আত্মহত্যার
প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। আটক অভিযুক্ত দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে
কারাগারে পাঠিয়েছি।