অফিসিয়াল
সিক্রেটস আইনে গ্রেপ্তার প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম জামিন
পাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে রোববার পর্যন্ত।
ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লা বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল কোর্টে দুই পক্ষের
বক্তব্য শোনার পর আদেশ অপেক্ষমান রাখেন। পরে জানানো হয়, আদেশ দেওয়া হবে
রোববার। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ
আবু অবশ্য বলছেন, রোববার আরও শুনানি হবে, তারপর আদেশ। ব্যক্তিগত কারণে
আবদুল্লাহ আবু এদিন নিজে শুনানিতে ছিলেন না। রোজিনার জামিনের বিরোধিতা করে
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান
হিরন। তিনি বলেন, “আসামির কাছ থেকে আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে জামিন
দেওয়া ঠিক হবে না।”
অন্যদিকে রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি বলেন,
“এজাহারে সেরকম কোনো আলামতের বর্ণনা নেই। যে আলামতের কথা বলা হচ্ছে, তা পরে
ম্যানিপুলেট করা।”
রোজিনার পক্ষে শুনানিতে আরও ছিলেন আইনজীবী আশরাফ উল আলম, প্রশান্ত কর্মকার ও আমিনুল গণী টিটো।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্লাস্টের মশিউর রহমান এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মো. আবদুর রশীদও উপস্থিত ছিলেন।
রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম ও পরিবারের সদস্যরা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হকসহ কয়েকজন সহকর্মীও এসেছিলেন আদালতে।
তবে ভার্চুয়াল শুনানি হওয়ায় রোজিনাকে আদালতে আনা হয়নি। তাকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।
গ্রেপ্তারের পরদিন মঙ্গলবার পুলিশ রোজিনাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়।
সেদিন জামিনের আবেদন করা হলে আদালত বিষয়টি রোববার শুনানির জন্য রাখে। এখন বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য রাখা হল।
কী ঘটেছিল:
রাষ্ট্রীয়
গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা
ইসলামকে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায়
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।
পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে
ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দ-িবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা
করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
রোজিনা ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ
অস্বীকার করেছেন। আর তার সহকর্মীরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাকে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে ব্রিটিশ
আমলের এক আইন ব্যবহার করে।
সচিবালয়ে আটকে রাখার সময় রোজিনাকে
‘শারীরিকভাবে হেনস্তা’ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তার স্বামী
মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি ‘পাল্টা মামলা’ করার কথা ভাবছেন।
প্রতিক্রিয়া:
রোজিনা
ইসলামকে ‘হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের’ প্রতিবাদে সারা দেশেই রাস্তায় নেমেছেন
ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। দেশে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে’ প্রশ্ন
তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা
আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট- সিপিজে এবং রিপোর্টার্স
উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) রোজিনাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আর
জাতিসংঘ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সাংবাদিকদের ‘হয়রানিমুক্তভাবে’
কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। রোজিনাকে কেন সেদিন দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হল, সেই
ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রী জাহিদ মালেক দুদিন আগে
সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি ‘সরিয়েছিলেন’
যেগুলো প্রকাশ হলে ‘দেশের ক্ষতি’ হতে পারত। আর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
বলেছেন, ‘ভুল’ রোজিনারও থাকতে পারে, সাংবাদিকদের ‘আবেগপ্রবণ না হয়ে
বাস্তবতার নিরিখে’ বিষয়টি দেখা উচিত। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল
কাদের মনে করেন, সেদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দায়িত্বশীলরা’ সাংবাদিকদের
‘ব্রিফ’ করলে হয়ত ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হত না।
আর রোজিনাকে গ্রেপ্তারের
ঘটনাকে ‘দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ
কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার হচ্ছে সংবাদপত্রবান্ধব
সরকার। আমরা কখনো আপনাদের নিষেধ করি না। উই হ্যাভ নাথিং টু হাইড। যে ঘটনা
ঘটছে, খুব দুঃখজনক ঘটনা।”