রণবীর
ঘোষ কিংকর: চলমান বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতেও কুমিল্লার চান্দিনায়
বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনা। শুধুমাত্র এক সপ্তাহে চারজনের আত্মহত্যার ঘটনা
ঘটেছে এ উপজেলায়। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি
আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
আত্মহত্যার ওই তালিকায় দিনমজুর,
সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবি, গৃহীনি, শিক্ষার্থীর নামও যুক্ত হয়েছে। বয়সের
ব্যবধানে ১৭ বছর থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ্ব রয়েছে। আর ১৬টি আত্মহত্যার
ঘটনায় ১৫ অপমৃত্যু মামলা করা হয় একটি গোপনেই ধামাচাপা দেয় স্থানীয়রা।
পারিবারিক কলহ, ঋণগ্রস্থ, অভাবের তাড়না ও চরম হতাশায় বাড়ছে এসব আত্মহত্যার ঘটনা বলে জানিয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ
নিয়ে জানা যায়- চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত (২২ মে) এ উপজেলায়
১৬জন আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ১১জন নারী ও পুরুষ ৫জন। আশঙ্কা জনক হারে
আত্মহত্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে চলতি মাসের ঈদের দিন (১৪ মে) থেকে ২০ মে
পর্যন্ত সাত দিনের ব্যবধানে ৪টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২জন নারী ও
পুরুষ ২জন। ওইসব আত্মহত্যার ঘটনার পেছনে রয়েছে নানা কারণ।
১৯ মে
(বুধবার) উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে বিষপানে আত্মহত্যা
করেছে নূরজাহান আক্তার ভবি (২০) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। গত ৮ মাস
পূর্বে প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর দাম্পত্য কলহে বেঁচে
থাকতে পারেনি ওই নারী। তবে নিহতের পিতা নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার
মোহাম্মপুর গ্রামের ওবায়দুল হক খোকনের দাবী যৌতুকের দাবীতে স্বামী ও তার
পরিবারের ধারাবাহিক নির্যাতনে আত্মহত্যা করেছে ভবি।
১৫ মে জোয়াগ গ্রামে
ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ৪টি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার পর ২টি পরিবার নিয়ে সংসার করছিল। পারিবারিক কলহের জের ধরে ফাঁসিতে
ঝুলে জাহাঙ্গীর।
একই দিন মহিচাইল ইউনিয়নের জামিরাপাড়া গ্রামের
পারিবারিক কলহের জের ধরে বসত ঘরে গলায় ওড়ানা প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে এক
সন্তানের জনক বিল্লাল হোসেন। এর আগে ঈদের দিন চান্দিনার মহারং গ্রামে গলায়
ফাঁস দিলে আত্মহত্যা করে সোহানা আক্তার (১৭)। তার আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে
হতাশা। ২ বছর আগে এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ ঠিক হয়। এর মধ্যে ফোনে কথোপকথনে
নেমে আসে হতাশা। কোমলমতি কিশোরী কিছু বুঝে উঠার আগেই আত্মহননের পথ বেঁছে
নেয়।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারী চান্দিনার সুহিলপুর ইউনিয়নের বড়ইয়াকৃষ্ণপুর
গ্রামে মিনতি রাণী শীল (৩৬) নামের তিন সন্তানের জননী বিষপানে আত্মহত্যার
মধ্য দিয়ে চান্দিনা উপজেলার ২০২১ সালের ডায়েরী খোলা হয়।
এ ব্যাপারে
কুমিল্লা জেলা পুলিশের জেষ্ঠ্য সহকারি পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি-চান্দিনা
সার্কেল) জুয়েল রানা জানান- অধিকাংশই উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা আত্মহত্যার পথ
বেঁছে নিচ্ছে। এর পিছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলমান লকডাউনে
স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মোবাইলে ফোনে বেশি মনোনিবেশ
করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে উঠছে প্রেমের সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের
টানা-পোড়নে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া আত্মহত্যায় পরকিয়া প্রেম ও
সাংসারিক অনটনেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. মুজিব রাহমান জানান- সামাজিক নিরাপত্তার
অভাব, সামাজিক অনাচার, মানসিক অস্থিরতা, পারিবারিক কলহ, প্রেম গঠিত কারণেই
বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আত্মহত্যা মহাপাপ, তা ধর্মেও উল্লেখ আছে।
আত্মহত্যা রোধে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা, মোবাইল ফোন ব্যবহার কমিয়ে
পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে খোলামেলা আলোচনা করা এবং পরিবারে যাদের
মন খারাপ থাকে তাদেরকে বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরী বলে মনে
করেন এই চিকিৎসক।