সৌদিয়ার টিকিট কাউন্টারে প্রবাসীদের চাপা কান্না
Published : Monday, 24 May, 2021 at 12:00 AM
করোনা সংক্রমণরোধে সৌদি সরকার ঘোষিত নিজ খরচে সাতদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নতুন নিয়মের কারণে চারদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত সৌদিপ্রবাসী বাংলাদেশি। নতুন নিয়মের কারণে গত ২০ মে থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সৌদি আরবে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে।
এ মুহূর্তে সৌদি এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) যাত্রী পরিবহন করছে। এ কারণে গত ২০ মে থেকে প্রতিদিন শত শত সৌদিপ্রবাসী রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের ভেতরে অবস্থিত সৌদিয়ার কার্যালয়ে সৌদি নির্দেশনা অনুসারে সাতদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে টিকিট কনফার্ম করার জন্য ধরনা দেন।
রোববার (২৩ মে) সরেজমিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সৌদি এয়ারলাইন্স টিকিট কার্যালয়ে গিয়ে এবং উপস্থিত প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দিনভর প্রচ- গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ টিকিট পাচ্ছেন আবার কেউ বিফল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সৌদি সরকারের নতুন নিয়মের কারণে সৌদিপ্রবাসী বাংলাদেশিদের হোটেলে কোয়ারেন্টাইন বাবদ অতিরিক্ত ৬৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
যারা আগে থেকে ফিরতি টিকিট কনফার্ম করে আসছেন না তাদের অতিরিক্ত দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে। আগে থেকে ফিরতি টিকিট কাটা রয়েছে এমন যাত্রীদের অনেকেই না বুঝে সৌদি সরকার নির্ধারিত আবাসিক হোটেলের বাইরে নিজ উদ্যোগে কিংবা সৌদিতে যে কোম্পানিতে চাকরি করেন তাদের মাধ্যমে হোটেল বুকিং দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছেন।
কিন্তু সৌদি সরকারের নির্ধারিত হোটেল বুকিং না থাকায় তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নতুন করে টিকিট সংগ্রহে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না কেউ কেউ। সৌদি সরকারের আকস্মিক সাতদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনায় যারা স্বল্প বেতনে চাকরি করেন তারা বিপদে পড়েছেন। অনেকেই জমি বন্ধক রেখে কিংবা ঋণ নিয়ে কোয়ারেন্টাইন হোটেলের টাকা জোগাড় করছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক প্রবাসী কর্মী জানান, বিদেশ বিভূঁইয়ে দুই-তিন বছর চাকরি করে ছুটিতে এসেছিলেন তারা। ফিরতি ফ্লাইটের দিনক্ষণও পূর্বনির্ধারিত ছিল। সেভাবেই সবাই সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। টাকা-পয়সা সঙ্গে করে যা নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রায় সবই খরচ করে ফেলেছেন। ফিরে গিয়ে কাজে যোগদান করবেন এমন চিন্তা থেকেই টাকা-পয়সা হাতে রাখেননি।
কিন্তু গত সপ্তাহে সৌদি সরকার এই মর্মে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে, প্রবাসী কাউকে সৌদি আরবে আসতে হলে সরকার নির্ধারিত হোটেলে সাতদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে টিকিট কনফার্ম থাকার পরও তাদের কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা নতুন করে জোগাড় করতে হচ্ছে।
এ খবর শোনার পর থেকে অনেক প্রবাসী কর্মীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অনেকে কষ্ট করে টাকা জোগাড় করতে পারলেও নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন। কেউবা ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে রাখলেও নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে না পারায় আবার কবে ফ্লাইট হবে তা নিশ্চিত হতে না পারায় করোনা পরীক্ষাও করাচ্ছেন না। ফলে প্রতি ক্ষেত্রে তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
অনেক যাত্রী আলাপকালে সৌদি ও বাংলাদেশ সরকার আলাপ-আলোচনা করে হোটেল কোয়ারেন্টাইনের খরচ সরকারিভাবে বহন করার দাবি জানান।