শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
দিন দিন পাট চাষে অনীহা হারাচ্ছে কৃষক। সরকারের নানা মুখী পরিকল্পনা থাকলেও ন্যায্য দাম ও পানির অভাবে দেবিদ্বার উপজেলায় পাট চাষাবাদ কমেছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরিবর্তে শাক হিসেবে পাট বিক্রি বেড়েছে। এক সময়ে ব্যাপক হারে পাটের চাষ হতো গোমতীর চরে। গোমতীর বাঁধে সারিবদ্ধভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুরা পাটের আঁশ ছড়াতো। পাটের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো দূর দূরান্তে। গোমতীর চরে এ দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট। পাট চাষীরা বলেছেন, পাট পচানোর জন্য ডোবা ও খাল বিলে সময় মত পানি না থাকায় ও পাটের ন্য্যয্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ নেই। আধুনিকতার সংস্পর্শে পাটের ব্যবহার কমেছে। স্থানীয় কৃষি অফিসও পাট চাষের ওপর কোন রকম খোঁজ খবর নিচ্ছেন না। কৃষি অফিসের কাগজে কলমে পাট চাষের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তেমন চোখে পড়েনা বলেও জানান কৃষকরা।
বাংলাদেশের এই প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ’ এখন বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলার পুরাতন বাজার, বানিয়াপাড়া, মাছুয়াবাদ ডোন, বড় আলমপুর, জয়পুর বিনাইপাড়সহ বেশ কিছু এলাকায় আগের মত এখন আর পাট চাষ হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু জমিতে তোষা পাট চাষ হলেও তা শাক হিসেবে বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাট চাষ উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে কৃষি অফিস থেকে চাষীদের সাথে যোগাযোগ করে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২০ হেক্টর জমি। সেই জায়গায় দেশি জাতের ৪০ হেক্টর ও তোষা জাতের ৩৪ হেক্টরসহ মোট চাষ হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কম হয়েছে। ফলে চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি পাট চাষে। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ কোন ইউনিয়নে এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের।
ইউসুফপুর ইউনিয়নের পাট চাষী সুলতান আহমেদ বলেন, পাট চাষে অনেক শ্রম দিতে হয়। উৎপাদন খরচও বেশি। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে বীজ বপন থেকে শুরু করে পাটের আঁশ ছড়িয়ে শুকানো পর্যন্ত ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এবং পাট পচাতে জমির আসে পাশে ডোবা না থাকায় ভোগান্তি পেতে হয়। এই হিসাবে এক মণ পাটের দাম ২ হাজার টাকার বেশি হওয়া দরকার। কিন্তু গত বছর পাটের দাম ছিল ১৬শ’থেকে ১৭” টাকা পর্যন্ত। তাই এবার পাট চাষ করা হয়নি।
অপর পাটচাষী মিজানুর রহমান বলেন, ‘ আগের চেয়ে পাট চাষের উৎপাদন খরচ অনেক বেঁড়েছে। ওই তুলনায় পাটের দাম পাওয়া যায়না। ফলে পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই আর। তারপরেও আমরা চাষী মানুষ। এ বছর ২০ শতক জমিতে পাটের আবাদ করেছি। দাম ভালো পেলে আগামী বছর আরও বেশি পাটের আবাদ করব। আর লোকসান হলে বিকল্প ফসল চাষ করব।
পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের দেবিদ্বার উপজেলা শাখার উপ-সহকারী কমকর্তা নুপুর আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, এই বছর দেবিদ্বার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ ১৫শ’ কৃষকের মাঝে পাটের বীজ ও রাসায়নিক সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এই চলতি মৌসুমে কত হেক্টর জমিতে কৃষকরা পাট চাষ করেছে তা সঠিক বলতে পারছিনা। অফিসে আসলে বলতে পারবো। তবে দেবিদ্বার উ”ু এলাকা হওয়ায় পাটোর আবাদ ভালো হয়না। যার ফলে গতবছরের তুলনায় এবার কম পাটের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তবে অফিসে অনপুস্থিতি থাকার প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমার কাজ যেহেতু মাঠে তাই অফিসে কম যাওয়া হয়।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ হারানোর পেছনে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আরও অনেক কারণ রয়েছে; যেমন এই উপজেলার কৃষি জমি গুলো উচু হওয়ায় পানির অভাবে পাটের আঁশ ছড়াতে কৃষকের ভোগান্তি পেতে হয় । তা ছাড়া পাট জাগ দেওয়ার জায়গার ভীষণ সংকট ফলে নিচু জমিগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় অনেক কৃষক বীজ বপন করতে পারেননি। দেবিদ্বার উপজেলা ধান চাষে ব্যাপক লাভবান হওয়ায় পাট চাষ শুধু শাক চাষ হিসেবে চাষ করা হয়, এসব নানা কারণেই দেবিদ্বারের কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।