তানভীর সাবিক,
গৌরব, সংকট, প্রত্যাশা ও অপূর্ণতায় ১৫ বছর পেরিয়ে ১৬ বছরে পা দিচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। কুমিল্লা মহানগরের অদূরে ৫০ একর জায়গা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন লালমাই পাহাড়ে পাদদেশে প্রাচীন শালবন বিহারের কোলঘেঁষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ৭টি বিভাগ, ৩০০ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক ও ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬ টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তবে প্রতিষ্ঠার পনেরো বছর পর প্রাপ্তির সাথেসাথে নানা-সংকট অপূর্ণতার বেড়াজালে আটকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিভিন্ন বিভাগে তীব্র সেশনজট, আবাসিক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, চিকিৎসা সেবার দূর্বলতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, অপরিসর গ্রন্থাগার, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবসহ নানা সংকটে আবদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টি। এতে ব্যাহত হচ্ছে এর শিক্ষা কার্যক্রম। তবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’র (একনেক) সভায় বিশ^বিদ্যালয়টির উন্নয়নে ১৬৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার একটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন পায়। এতে বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসিক সমস্যা নিরসনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ এবং ভ’মি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।
বাস্তবায়নের পথে মেগা প্রকল্প: বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে ১৬৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ফটক। নতুন করে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে প্রায় ২০০ একর ভ’মি। এ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেডের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অপর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা: প্রতিষ্ঠার তেরোতম বছর শেষে বিশ^বিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। কিন্তু তার বিপরীতে আবাসিক হল রয়েছে ছেলেদের জন্য তিনটি এবং মেয়েদের জন্য একটি। জানা যায়, এ চার হলের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা আট থেকে নয় শত শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থীর হারের সাথে পাল্লা দিয়ে আবাসিক হলের সংখ্যা না বাড়ায় বর্তমানে প্রায় ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থীই আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ আবাসন সংকট খুবই ভয়াবহ। মেয়েদের জন্য নতুন করে শেখ হাসিনা হল নির্মাণ এবং ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্প্রসারণ কাজ চললেও তা চলছে ধীর গতিতে।
অপরিসর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার: বিশ^বিদ্যালয়ের মত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচলালনার জন্য গ্রন্থাগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরও কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেনি কোনো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থাগার। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলার দুটো কক্ষ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বইয়ের স্বল্পতা এবং স্বতন্ত্র ভবন না থাকায় প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চমতলার মাত্র দুটি কক্ষ নিয়ে নামমাত্র সুযোগ-সুবিধা দিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কার্যক্রম। গ্রন্থাগারটির দুইটি কক্ষ মিলিয়ে ৮০ জন শিক্ষার্থীর আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। যা একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের তুলনায় খুবই নগন্য।
নেই আবাসিক ডাক্তার: প্রশাসনিক ভবনে অপরিসর একটি কক্ষে কোনরকমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। মেডিকেল সেন্টারটিতে জনবলের অভাব রয়েছে। আবাসিক চিকিৎসক না থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিংবা রাতে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে পড়তে হয় বিপাকে। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধের অভাবে মেডিকেল সেন্টারটি হতে যে ঔষধ সরবারহ করা হয় তা খুবই নগন্য। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা সংকট: বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন বিশাল অংশে নেই কোনো নিরাপত্তা প্রাচীর। আগে তারাকাটার বেড়া থাকলেও বর্তমানে সেখানে শুধু খুঁটি রয়েছে। এতে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাসের পিছনের অংশে বহিরাগতসহ মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ে। এছাড়াও সংকট রয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর।
পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন জরুরী: বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, ছিসকে চোরের লাগামহীন দৌর্যাত্মে অতিষ্ঠ অতিষ্ঠ সবাই। প্রায়শই ছিনতাই এবং চুরির ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পার্শ্ববর্তী সামাজিক বন বিভাগ, শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, কোটবাড়িসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে অনেকসময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। প্রায়ই হলগুলোতে চুরির ঘটনাও হয়। বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একটি যুগে পদার্পণ করতে যাচ্ছে শীঘ্রই। প্রধান ফটকের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হচ্ছে। ৫০ একরের ক্যাম্পাস ২৫০ একর হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্প যথাযথভাবে শেষ করতে পারলে আগামী ৫০ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন চাহিদা থাকবে না। নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।’ বিশ^বিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার কোভিডের কারণে বৃহৎ পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা করা যাচ্ছে না। তবে করোনার কঠোর লকডাউন উঠে গেলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোভাযাত্রা ও আলোচলা সভার আয়োজন করবো।’