জহির
শান্ত: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে
শূন্য হওয়া কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বইছে উপ নির্বাচনে
হাওয়া। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন দলের বিভিন্ন
পর্যায়ের নেতারা। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতার পাশাপাশি
দলের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা
করে চলেছেন। আসনটি শূন্য হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনও তফসিল ঘোষণা
করা হয়নি।
আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও বিষয়টি নির্ভর করছে করোনা সংক্রমণ
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। তবে তফসিল ঘোষণা না হলেও আওয়ামী লীগের
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে
কুমিল্লা-৫ আসনের উপ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী হতে মাঠ চষে
বেড়াচ্ছেন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অন্তত ২ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা। এর
মধ্যে আঁটঘাট বেধে মাঠে আছেন প্রায় ১০ নেতা। প্রয়াত নেতার কবর জিয়ারত,
শোকসভা, মিলাদ মাহফিল, ত্রাণ বিতরণ, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়সহ নানা আয়োজনে
সম্ভাব্য প্রার্থীতার আগাম ঘোষণা দিয়ে মাঠে আছেন তারা। সেই সাথে দিচ্ছেন
নানা প্রতিশ্রুতিও।
এ আসন থেকে আবদুল মতিন খসরু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী
হয়ে ৫ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেছেন
আইনমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন দলটির সভাপতি
মন্ডলীর সদস্য। তাই স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছেÑ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া
আসনে কে হচ্ছেন একসময়ে দলের অপ্রতিদ্বন্দ্বি নেতা এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর
উত্তরসূরী? শূন্য আসনটিতে কে পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নÑ এ নিয়ে চলছে নানা
মুখরোচক আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা।
প্রাঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়ে মারা যান কুমিল্লা-৫ আসনের পাঁচবারের সাবেক এমপি ও সুপ্রিম
কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরু। মৃত্যুর এক
সপ্তাহ পর ২২ এপ্রিল তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি নির্বাচন
কমিশনের বৈঠক শেষে জানানো হয় ২৪ মে এ আসনের উপ নির্বাচনের তসফিল ঘোষণা করা
হবে। আর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। নিয়ম অনুযায়ী আসন শূন্য ঘোষণার ৯০
দিনের মধ্যে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাদকতা রয়েছে।
এদিকে মতিন
খসরুর মৃত্যুর পরপরই এ আসনটিতে তৎপরতা চালাতে থাকেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সময় যতো বাড়তে থাকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকাটাও ততো
দীর্ঘ হতে থাকে। আর শেষ পর্যন্ত এ তালিকায় যোগ হয়েছে অন্তত ২৪ জনের নাম। এর
মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত খসরুর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ছাড়াও তাঁর
স্ত্রী-পুত্র ও ভাইয়ের নামও। তবে সবার মুখেই শোনা যাচ্ছে প্রায় একই কথা। দল
যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। ‘নৌকা যার-আমরা তার’।
এ
প্রসঙ্গে প্রয়াত এমপির স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু বলেন, আমি এলাকার মানুষের
সাথে কথা বলেছি, নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছি। তারা আমাকে প্রার্থী
হিসেবে চায়। এখন দল যদি মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করবো। এ আসনের অসমাপ্ত
কাজগুলো সমাপ্ত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।
এ আসনের আরেক
হেভিওয়েট প্রার্থী ও আবদুল মতিন খসরুর দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী,
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুড়িচং উপজেলা
পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমি
মনোনয়ন চাইবো। খসরু ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। তাঁর সকল উন্নয়ন
কর্মকা-ে পাশে ছিলাম। দল যদি আমাকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তবে
এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারবো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বুড়িচং সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন,
আমার
বিশ্বাস মাননীয় প্রাধনামন্ত্রী আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। এর আগে আমি ৬ বার
দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে মাথা পেতে
নিয়েছি। এবারও মনোনয়ন চাইবো। আশা রাখি দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
এবার আমাকে মনোনয়ন দিয়ে খসরু ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ
দিবেন। তারপরও দল যদি অন্য কাউকে সিলেক্ট করে- আমি তার পক্ষেই কাজ করবো।
মাঠে বিএনপির এক নেতা:
এদিকে
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য
প্রার্থীদের পদচারণায় মাঠ গরম থাকলেও একেবারেই নিরব বিএনপি। বিএনপি
নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দলটির নেতা-কর্মীরা
নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেও মাঠে আছেন তাদের এক নেতা। তিনি
হচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাবেক সহ সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা
বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি এ এস এম আলাউদ্দিন ভূইয়া। এর আগে দু’টি জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আলাউদ্দিন
ভূইয়া।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে জানতে চাইলে আলাউদ্দিন ভূইয়া বলেন,
এখানকার জনগণ আমাকে অভিভাবক হিসেবে পেতে চায়। গেলো কিছুদিনে আমি দুই
উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময়
করেছি। তারা আমাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এখন আমি
বিষয়টি বিবেচনা করবো। যদি ফেয়ার ইলেকশন হয়; সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ থাকে তাহলে
নির্বাচনে যাবো।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির
সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন, নির্বাচনের মাঠে আলাউদ্দিন ভূইয়ার প্রচার
প্রচারণা কিংবা নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে আমরা কিছুই জানি
না। আমাদের কথা হলো- কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি নির্বাচনে যাবে
না। আমরাও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না।