ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় ভারত ফেরত ২৯২জন কোয়ারেন্টিনে
নিয়মিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ার অভিযোগ আইসোলেশন প্রটোকল এড়ানো যাবে না: সিভিল সার্জন
Published : Sunday, 30 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 30.05.2021 12:50:12 AM
কুমিল্লায় ভারত ফেরত ২৯২জন কোয়ারেন্টিনেতানভীর দিপু ||
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসা ২৯২ জন কুমিল্লার বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে আছেন। করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের আশংকায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তাদেরকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পালন করতে হচ্ছে। তাদের কারোরই এখনো পর্যন্ত করোনা পজেটিভ শনাক্ত না হলেও সরকারি আইসোলেশন প্রটোকল হিসেবে থাকতে হবে তাদের। কুমিল্লায় যারা আছেন তাদের অধিকাংশই ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। করোনার লকডাউনে আটকে পঙায় তাদেরকে ফিরতে হচ্ছে আখাউড়া স্থল বন্দর দিয়ে। এদিকে কুমিল্লার বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা অনেকেই করছেন নানান অভিযোগ। হোটেল জমজম এবং হোটেল ময়নামতিতে (বাঁগিচাগাও) অবস্থান করা একাধিক কোয়ারেন্টিনকারী মুঠোফোনে জানিয়েছেন- তারা সময় মত পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যসেবা। এছাড়া কোন কোন হোটেলের কক্ষ স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলেও অভিযোগ অনেকের। কারো আবার শুরু হয়েছে আর্থিক টানাপোড়েন। কেউ আবার চাইছেন নির্ধারিত সময় শেষ হবার আগেই বাড়ি ফিরতে।  
এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, ভারত ফেরতদের জন্য সরকারিভাবে আইসোলেশনের যে প্রটোকল আছে তা কোন ভাবেই এড়ানো সম্ভব নয়। সেই প্রটোকলের মধ্যে থেকেই তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কারো যদি খুব ইমার্জেন্সি হয়- তবে আমরা সেটা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে দেশের সুরক্ষায় কোনভাবেই প্রটোকল ভাঙ্গা সম্ভব নয়। ভারত ফেরতদের সহনশীল হতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হোটেল জমজমে অবস্থান করছেন ৫০ জন ভারত ফেরত। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন আছেন যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে ভারতে গিয়েছিলেন। ভারতে ভয়াবহ করোনা সংক্রমনের পর চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই ফিরেছেন দেশে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ব্যবসার কাজে গিয়েও ফিরেছেন চিকিৎসার নাম দিয়ে। তারাও আছেন কোয়ারেন্টিনে। হোটেল জমজমের কোয়ারেন্টিনে থাকা চট্টগ্রামের বাসিন্দা ক্যান্সার আক্রান্ত আজগর কাদের মুঠোফোনে কুমিল্লার কাগজকে জানান, ২০ মে  তিনি কুমিল্লায় এসেছেন, ২১ তারিখেই ক্যামো থেরাপি নেয়ার কথা। ৪ দিন পর ২৬ তারিখে কুমিল্লা মেডিকেলে নেয়া হলে- সেখানে ক্যামোথেরাপি করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
একই হোটেলে পরিবার নিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকা দিনাজপুরের শুভ দাশ জানান, কুমিল্লায় আসার পর প্রতিদিন ডাক্তারদের খোঁজ খবর নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এখন ৫/৬দিনেও তাদের দেখা পাওয়া যায় না।
কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছায় হোটেল ময়নমতিতে অবস্থান করা ১৯ জনের মধ্যে ফেণীর জহিরুল ইসলাম আছেন স্বপরিবারে। ২ তারিখ তাদের কোয়ারেন্টিন শেষ হবার কথা। জহিরুল ইসলাম জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলে উঠতে হয়েছে। পরে নিজেরাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিয়েছি। আর দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থেকে থেকে টাকা-পয়সাও টানাটানিতে চলে এসেছে। কি করবো ভাবছি।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, ভারত ফেরত যারা কুমিল্লায় আছেন তাদের কারো করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়নি। কোয়ােেরন্টিনের ১৪ দিন শেষে আবার পরীক্ষা করানো হবে। তাদের মধ্যে যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে অথবা প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কুমিল্লায় যেসব হোটেলে তারা থাকছেন সেখানে সামর্থ্য অনুযায়ী দাম ঠিক করে দেয়া হয়েছে। কারো যেন কোন ধরনের সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে জেলাপ্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ। প্রতিটি হোটেলে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রে, মেডিকেল অফিসারসহ পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত কোয়ারেন্টিন পালনকারীদের দেখভাল করছেন।
হোটেল জমজম আবাসিকের ম্যানেজার রাসেল আহমেদ জানান, রোগী ছাড়াও ব্যবসার কাজে গিয়ে আটকে পরা কয়েকজনও আছেন কোয়ারেন্টিনে। এই হোটেলে ২০টি রুম দেয়া হয়েছে ভারত ফেরতদের জন্য। ১ হাজার ও ২ হাজার টাকা দুই ধরনের রুম ভাড়া দেয়া হয়েছে। তারপরও হোটেল মালিক বলেছেন- অবস্থানকারীদের আর্থিক অসঙ্গতি থাকলে বিবেচনা করা হবে।
হোটেল ময়নামতির ম্যানেজার প্রদীপ কুমার রায় জানান, অনেকেই আর্থিক অসংগতির কথা জানান। তারা ১৪ দিনের আগেই বাড়ি ফিরতে চান। ময়নামতি হোটেলে ৩শ, ৪শ, ৫শ টাকা মানের রুম ভাড়া দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা জেলায় হোটেল টোকিওতে আছেন ৪৭ জন, হোটেল জমজমে ৫০ জন, ময়নামিত(বাঁগিচাগাও) ১৯ জন, হোটেল আল ফালাহ ৩০ জন, রেডরুফ ইন ২৩ জন, হোটেল ভিক্টোরি ৩৫ জন, ময়নামতি(আলেখারচর) ৩১ জন, গোল্ডেন ইন ২৯ জন এবং হোটেল পার্কে  ২৩ জন। এছাড়া মেডিকেল কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪ জন। কুমিল্লায় কোয়ারেন্টিনে এসে পরে চিকিৎসা নিতে চট্টগ্রাম গিয়ে মারা গেছেন ১ জন।
হোটেল ভাড়া প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, এ বিষয়ে সরকরি কোন সিদ্ধান্ত নেই। তারপরও কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন তাদের আর্থিক অসংগতির বিষয়টি বিবেচনা করে জেলাপ্রশাসনের সাথে আলাপ করা হচ্ছে।