Published : Tuesday, 1 June, 2021 at 12:00 AM, Update: 01.06.2021 1:04:02 AM
লকডাউন ও কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ঢাকায় কিছুটা কমেছে। কিন্তু বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। মিলছে ভারতীয় ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত অনেক রোগী। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবং বাগেরহাটের মোংলায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি আরো কয়েকটি জেলায় লকডাউন আরোপের সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য প্রয়োজন বিবেচনায় সরকার লকডাউন শিথিল করার বেশ কিছু পদপে নিয়েছে। শপিং মল, বিপণিবিতান খুলে দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, নৌযানসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দুর্বল লকডাউনের চেয়েও বেশি জরুরি হচ্ছে সব মানুষকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু সে েেত্রও আমাদের ব্যর্থতা অনেক বড়। আমরা টিকার জন্য শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর নির্ভর করে প্রায় হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু ভারতে মহামারি তীব্র রূপ নেওয়ায় ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদেরও অনেকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। অনেক দেরিতে হলেও সরকার চীন ও রাশিয়ার টিকা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদতার কারণে চুক্তি সম্পাদন ও টিকাপ্রাপ্তি বিলম্বিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে মহামারির তা-ব ঠেকানো সম্ভব হবে কি?
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে ৩ শতাংশ মাত্র। অথচ ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশে এই সংখ্যা শতভাগের কাছাকাছি এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে তা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশকে হার্ড ইমিউনিটির স্তরে নেওয়ার জন্য শুরুতে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে। আর প্রবাসী ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের বাদ দিয়ে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই ল্য পূরণে খুব দীর্ঘ সময় লেগে গেলে টিকা কর্মসূচির উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কাজেই টিকা কার্যক্রম দ্রুততর করার চেষ্টাই আমাদের করতে হবে। চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে। দ্রুত তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তিতে আসা প্রয়োজন। কারণ যেভাবে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসছে কিংবা থেকে থেকেই সংক্রমণ ব্যাপক হচ্ছে, তাতে টিকার প্রয়োজন থাকবেই। উৎপাদিত টিকা বিদেশে রপ্তানিরও সুযোগ থাকবে।
করোনা মহামারি রোধে আমাদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এ বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকার আওতায় আনার ল্য নির্ধারণ করেছে। একই ল্য নিয়ে আমাদেরও এগোতে হবে।