করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কুমিল্লার
বরুড়া উপজেলার হরিশাপুর গ্রামের প্রবাসী সোহেল পাটোয়ারির সন্তানসম্ভবা
স্ত্রী ফারজানা আক্তার (২৭)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ মে রাতে ফুটফুটে এক
পুত্র সন্তান জন্ম দেন তিনি। কিন্তু জন্মের কয়েক ঘন্টা পর মারা যায়
নবজাতকটি। সন্তানের মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত পরেই সোমবার (৩১ মে) ভোরে মৃত্যুর
কোলে ঢলে পড়েন মা ফারজানাও। সামান্য সময়ের ব্যবধানে নবজাতক ও মায়ের
মৃত্যুর খবরে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতাল প্রাঙ্গণে; শোকে মুর্ছা যেতে থাকেন তাদের স্বজনেরা। খবর পেয়ে
করোনায় মৃতদের দাফনকার্যে নিয়োজিত কুমিল্লার মানবিক সংগঠন ‘বিবেক’ এর
সদস্যরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মৃত নবজাতক ও তার মায়ের লাশ গ্রহণ করে গোসল ও
জানাজা সম্পন্ন করেন। পরে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে দুজনের মরদেহ বাড়িতে
নিয়ে যান স্বজনরা।
গত রবিবার রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
করোনা ইউনিটে গাইনী ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন করোনা
আক্রান্ত ফারজানা আক্তার। গতকাল সোমবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে হাসপাতালের শিশু
ওয়ার্ডে রাখা ফারজানার ২৬ সপ্তাহের শিশুটির মৃত্যুর খবর পায় স্বজনেরা। এর
১০ মিনিট পরেই ১৪ দিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে সাড়ে ৬ টায় মারা যান
ফারজানাও। এসময় হাসপাতালে উপস্থিতি থাকা ফারজানার স্বামী সোহেল পাটোয়ারীর
নিকটাত্মীয় আবদুল হাই সুমন কুমিল্লার কাগজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আবদুল
হাই সুমন আরো জানান, শিশুটির মৃত্যুর খবর ফারজানাকে জানানোও হয় নি। কিন্তু
ওই সময়ই তিনি ছটফট শুরু করেন এবং অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলার চেষ্টা করেন।
১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন জানান, করোনা আক্রান্ত ফারজানা
আক্তার গত ১০ দিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩০ মে রাতে তার বাচ্চা
প্রসব হয়। এসময় নবজাতকটির ওজন ছিলো মাত্র সাড়ে ৭ শ’ গ্রাম। মাত্র ২৪
সপ্তাহে প্রসব হওয়ায় নবজাতকটি ‘ইনমেচিউরড’ ছিলো। কিন্তু আমাদের শত চেষ্টার
পরেও নবজাতকটি মারা যায়। অপরদিকে চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে
মারা যান নবজাতকের মা-ও।
যোগাযোগ করা হলে কুমেক হাসপাতালের করোনা
ইউনিটের আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মোঃ আবদুল মুকতাদির কুমিল্লার
কাগজকে জানান, আগে ফারজানা মারা যান পরে তার শিশুটি মারা যায়। আমরা খুব
চেষ্টা করেও রোগীটিকে বাঁচাতে পারিনি। রাতে ২৬ সপ্তাহের সন্তান প্রসবের পর
ভোরে মা মারা গেলেন- তারপর শিশুটিও মারা গেল। ফারজানা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
এদিকে করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফনে
সহযোগিতাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিবেক এর চেয়ারম্যান ইউসুফ মোল্লা টিপু
ফারজানার পরিবারের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছেন, ১০ মিনিটের ব্যবধানে মারা যায়
মা ও সন্তান। আগে শিশু মারা যায় পরে মারা যায় মা। একই সাথে তাদের জানাজা ও
দাফন সম্পন্ন করে বিবেকের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে,
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের হরিশাপুর গ্রামরে সোহেল পাটোয়ারীর
স্ত্রী ফারজানা আক্তার অন্তসত্ত্বা অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৭ মে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। প্রথমে আইসোলেশন
ওয়ার্ডে থাকলে ও পরে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কুমিল্লা মেডিকেলে আসার
আগে ফারজানা কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেসময় তিনি জ্বর,
কাশিতে ভুগছিলেন। পরে সেখানে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে তাকে কুমেক
করোনা ইউনিটে আনা হয়। ৩ দিন আগে তার স্বামী দেশে আসে।
পরিবার সূত্রে
জানা গেছে, গত ১০ মে ফারজানা করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়েই সৌদী আরব থেকে
বাংলাদেশে আসেন। পরেই তার অসুস্থতা শুরু হয়। সোহেল-ফারজানার আরো ১ মেয়ে এবং
১ ছেলে আছে।