বৈশ্বিক করোনা মহামারি কানাডার ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্পকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা নষ্ট হওয়ায় এ খাতে কর্মরত থাকা কয়েক হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ফলে কানাডার অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
কানাডায় বছরের প্রায় আট মাসই বরফে আচ্ছাদিত থাকে। গ্রীষ্মের এই সময়ে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে কানাডা। কিন্তু গত দুই বছরের চিত্র পুরোপুরিই ভিন্ন। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব আর সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) প্রকাশিত বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রভাব প্রতিবেদন বলছে, পর্যটন শিল্পের পতনের ফলে গত বছর কানাডার অর্থনীতিতে ৫৯.২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ফলে চাকরির বাজারে প্রভাবও ছিল মারাত্মক। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে এই শিল্পে নিয়োজিত ৩ লাখ ৭৩ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীদের কাজ হ্রাস পাওয়ায় এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমজীবী নারী ও পুরুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে এই খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১.৮ মিলিয়ন। যা ২০২০ সালে ১.৪ মিলিয়নে নেমেছে।
কানাডার লিবারেল সরকারের মজুরি ভর্তুকি কর্মসূচি না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। তবে ডব্লিউটিটিসি বলছে, এই খাতের শ্রমিকরা এখনও ঝুঁকিতে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দ্রুত পুনরুদ্ধার না করা হলে আরও চাকরি হ্রাস পেতে পারে। আরও ছাঁটাইয়ে অর্থনীতির উপর বিস্তৃত প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে টয়োটা কানাডার লেজার বিপণন পরিচালিত একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, ভ্রমণ পিপাসু কানাডিয়ানরা ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত এবং এ বছর তারা ছুটিতে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
এ বিষয়ে উন্নয়ন গবেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা শুধুমাত্র জীবন-জীবিকাকে বিপর্যয়ের মুখোমুখি করেছে তাই নয়, যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতায় সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক বিপর্যয়ও। বহুজাতিক সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ কানাডার অধিবাসীরা অনেকেই অবকাশ বা নানান প্রয়োজনে নিজ জন্মভূমিতে ভ্রমণ করে থাকে। কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধের কারণে এসব ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর বিরূপ প্রভাবে পর্যটন শিল্প যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দীর্ঘ সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ব্যক্তির মানসিক সুস্থতায়ও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কিরণ বনিক শংকর বলেন, বৈশ্বিক মহামারির করোনাকালীন এই সময়ে বেঁচে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার পরিজন নিয়ে আবার ভ্রমণে বের হব, সুদিন ফিরে আসবে এই প্রত্যাশায় আমরা দিন গুনছি।