আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ০ দশমিক ০৯৭ শতাংশ। আর তাতে ‘বিস্মিত, হতবাক এবং ক্ষুব্ধ’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তারা বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে কমপক্ষে ১ শতাংশ করার পাশাপাশি জোটের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি পেশ করেছেন। মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা বিস্মিত, হতবাক এবং ক্ষুব্ধ। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে একটি মানবিক, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিবাদী সমাজ নির্মাণে মানুষের চিন্তায় এবং মননে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশব্যাপী একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ। এই সাংস্কৃতিক জাগরণ শুধু সংস্কৃতিকর্মীদের শিল্পের প্রতি ভালোবাসা এবং একক প্রচেষ্টায় বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ অপরিহার্য। ‘নামেমাত্র অনুদান দিয়ে’ সর্বগ্রাসী সংকট থেকে জাতিকে কখনো রক্ষা করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাংস্কৃতিক জোটের এই নেতা অভিযোগ করেন, দেশে যখন সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিগোষ্ঠীর অপতৎপরতা দৃশ্যমান হয়, নারী-শিশু নির্যাতন, মাদকাসক্তি ও অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটে, মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়- কেবল তখনই সবাই সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসারের কথা বলে থাকেন। তিনি বলেন, কিন্তু এই সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং লালনের জন্যও যে রাষ্ট্রের যথাযথ ভূমিকা থাকা দরকার তা কি আমরা উপলব্ধি করছি? বাজেটে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেখে তা কখনো মনে হয় না। সে কারণেই আমরা বাজেট পাশ হবার পূর্বেই নিন্মোক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আশু এবং দীর্ঘমেয়াদিভিত্তিতে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাজেট প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় জোটের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি পেশ করেন তিনি। দাবিগুলো হলো-
১. গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে হলে সকল ধারার শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে প্রশিক্ষিত করতে প্রত্যেক উপজেলায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে।
২. প্রত্যেক জেলায় আধুনিক মিলনায়তন ও মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সঙ্গীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলার স্থায়ী প্রশিক্ষক দিতে হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক বরাদ্দ দিতে হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি পদে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে ঐ জেলার বরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক বা শিক্ষাবিদকে মনোনয়ন দেয়ার বিধান চালু করতে হবে।
৩. রাজধানীসহ প্রত্যেক জেলায় সরকারি উদ্যোগে একটি করে যাত্রা প্যান্ডেল নির্মাণ করতে হবে।
৪. ঢাকা শহরে প্রতি ৫ লাখ লোকের জন্য একটি আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ করতে হবে।
৫. প্রকৃত অসচ্ছল শিল্পীকে মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৬. সারাদেশে আনুমানিক দশ হাজারেরও বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। সক্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে যাচাই-বাছাই করে অন্তত পাঁচ হাজার সংগঠনকে অনুদানের আওতায় আনা হোক।
৭. জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন এবং জাতীয় পর্যায়ের অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎসব আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৮. করোনা সংক্রমণের কারণে দেশব্যাপী বহু কর্মহীন হয়ে পড়া সংস্কৃতিকর্মী পরিবারের ব্যয় নির্বাহ এবং সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগ্রহী সংস্কৃতিকর্মীদের বিনা সুদে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করতে হবে।
৯. প্রত্যেক জেলায় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য আর্ট গ্যালারি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের জন্য মিনি অডিটরিয়াম নির্মাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- সম্মেলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি জুনায়েদ চৌধুরী, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সালা উদ্দিন বাদল, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি আসলাম সানী, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, শিশু সংগঠন ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ নৃত্য শিল্পী পরিষদের সদস্য ফারহানা চৌধুরী বেবি'সহ আরো অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।