মাসুদ
আলম।।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত কুমিল্লা জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি গুদামে
বোরো চাল ও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই বছর কুমিল্লায় বোরো ধানের আবাদ বাম্পার ফলন হলেও জেলা খাদ্য বিভাগের
ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এই জেলায় বোরো মৌসুমে ৬৭টি
চালকলমালিক বোরো চাল সরবরাহ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আর ধান দেওয়ার
জন্য প্রায় ১০ হাজার জন কৃষক তালিকাভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু সংগ্রহের সময়সীমা
প্রায় শেষ হয়ে এলেও এ পর্যন্ত বোরো চাল লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের সামান্য
বেশি আর বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের অনেক কম সংগ্রহ করা হয়েছে। বুধবার
(৯ জুন) পর্যন্ত খাদ্য গুদামে ধান-চাল কেনার পরিসংখ্যান অনুসারে এ বছর
লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না এ বিষয়ে খাদ্য বিভাগ অনেকটা নিশ্চিত। জেলা
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম
যথাক্রমে গত ২৮ এপ্রিল এবং ৭ মে থেকে শুরু হয়েছে। কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১
আগস্ট পর্যন্ত। চলতি বোরো মৌসুমে খাদ্য গুদামে সরবরাহের জন্য মিল মালিকদের
সিদ্ধ চাল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, আতপ চাল ৩৯ টাকা এবং খাদ্য গুদামে
তালিকাভুক্ত কৃষকরা ২৭ টাকা কেজি ধান বিক্রি করতে পারবে। এ বছর জেলায় সিদ্ধ
চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন, আতপ চাল ৬
হাজার ৪৭৮ মেট্রিক টন। ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২২হাজার ১৫১ মেট্রিক টন।
এরই মধ্যে সিদ্ধ চাল সরবরাহে ৬৭টি ও আতপ চাল সরবরাহে চুক্তি ১৪টি মিল
চুক্তি করেছে। কিন্তু বুধবার (৮ জুন) পর্যন্ত সিদ্ধ চাল ৬ হাজার ১০৮
মেট্রিক টন ও আতপ চাল সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন।
একাধিক
মিল মালিক জানান, লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে লোকসান জেনেও তারা সরকারের সাথে
চুক্তি করেছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে চালের দাম বেশি
হওয়ায় চুক্তি অনুসারে তারা চাল দিতে পারছে না। গত বছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা
কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল
কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় গত বোরো ও
আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কুমিল্লায় ধান-চাল কিনতে পারেনি খাদ্য
বিভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক মিল মালিক জানান, বাজার
থেকে ২৭ টাকা কেজিতে এক মন (৪০ কেজি) ধান কিনতে খরচ হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। এক
মন ধানে চাল পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ২৬ কেজি। ৪০ টাকা কেজি ধরে সিদ্ধ চালের
মুল্য হয় ১ হাজার ৪০ টাকা। এছাড়াও পরিবহন, বস্তা, সংরক্ষণ, লেবার, চাল
প্রক্রিয়াজাত করে সরকারি গুদামে পৌছে দেয়া পর্যন্ত ৪৩-৪৫ টাকা খরচ হয়ে যায়।
তাই এতো লোকসান দিয়ে অনেকেই চাল সরবরাহ করতে পারছে না।
কুমিল্লা শহরের
ধান-চাল ব্যবসায়ী অজিত কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বেশি।
এতে চাল উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাঁরা এখন লোকসান দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী
গুদামে চাল সরবরাহ করছেন। চালের সংগ্রহমূল্য বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি
আহ্বান জানান তিনি।
কুমিল্লা সদর উপজেলার জালুয়াপাড়া এলাকার কৃষক
মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ধানের সংগ্রহমূল্য আর
বাজারমূল্য প্রায় সমান। বাজারে সহজেই ধান বিক্রি করা যায়। ঝক্কিঝামেলা কম।
আর গুদামে ধান দিতে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হয়।
অধিকন্তু পরিবহন খরচও বহন করতে হয়। তাই গুদামে ধান দেওয়ার চেয়ে বাজারে
বিক্রিতেই সুবিধা বেশি।
কুমিল্লা জেলা রাইস মিল মালিক সমিতির সিনিয়র
সহ-সভাপতি আবদুর রব চেয়ারম্যান জানান, এমননিতেই করোনার কারণে আমাদের
ব্যবসায় মন্দা। লোকসান দিতে দিতে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকার দেশের বাহির
থেকে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে চাল আমদানী করার কথা শুনালেও দেশে
আনার পর খোলা বাজারে সেই কম দামের চাল আরও বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লা
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস.এম কায়সার আলী জানান বলেন, চাল সরবরাহ নিয়ে মিল
মালিকরা একটি ভুল ব্যখ্যা দিচ্ছে, কারণ প্রতি মন ধান থেকে পাওয়া চালের দাম
অনেকটা সমান থাকলেও ধান থেকে চাল তৈরীর সময় অবশিষ্ট তুষ ও কুড়া বিক্রি করেও
মিলাররা লাভবান হচ্ছে। সুতরাং মিল মালিকদের লোকসান হওয়ার তথ্য সঠিক নয়।
তিনি
আরও বলেন, এবার খাদ্য গুদামে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে অনেক প্রচারণা চালানো
হয়েছে। তাই এরই মধ্যে ২ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। অপর দিকে
মিলারদের নিকট থেকে সিদ্ধ চাল ৬ হাজার ১০৮ মেট্রিক টন ও আতপ চাল ১ হাজার
১১৮ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান-চাল কেনার
পরিমান অনেক কম।