প্রতিবেশী দেশ
ভারতে করোনা মহামারি এখনো ভয়াবহরূপে বিরাজ করছে। দৈনিক মৃতের সংখ্যা ছয়
হাজার পর্যন্ত হচ্ছে। ভারতে এমন ভয়াবহ সংক্রমণের জন্য করোনাভাইরাসের যে
ভেরিয়েন্ট বা ধরনটি দায়ী, তার নাম ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। এই ভেরিয়েন্টের
সংক্রমণক্ষমতা যেমন বেশি, তেমনি এতে মৃত্যুহারও বেশি। ভাইরাসের এই ধরনটি
বাংলাদেশে, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমেই তা
রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায়ও ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ
নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে
সংগ্রহ করে আনা নমুনায় ৮০ শতাংশই ছিল ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। সীমান্তবর্তী বেশির
ভাগ এলাকায়ই এখন দৈনিক করোনা শনাক্তের হার ২৫ থেকে ৭০ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে
সর্বাত্মক লকডাউন বা বিধি-নিষেধ আরোপ করেও তা খুব একটা ঠেকানো যাচ্ছে না। এ
অবস্থায়ও করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। বহুল আলোচিত জেকেজি,
রিজেন্ট হাসপাতালের মতো আরো চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির ঘটনা ধরা
পড়ে। সে কারণে সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, আল-জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার,
স্টিমজ হেলথকেয়ার বিডি লিমিটেড ও মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের
(মিরপুর ব্রাঞ্চ) পরীক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর।
আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে
সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। অন্যান্য এলাকায়ও বাড়ছে সংক্রমণ। রাজশাহী ও
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। রাজশাহী মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যা ২৭১টি। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত
এখানে রোগী ভর্তি ছিল ২৯৭ জন। সীমান্তবর্তী বেশ কিছু জেলার হাসপাতালে
আইসিইউ সেবা না থাকায় রোগী নিয়ে স্বজনদের ছুটতে হচ্ছে দূরের হাসপাতালে।
পথেই অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। শুধু রাজশাহী, খুলনা বা সীমান্তবর্তী
জেলাগুলোই নয়, সারা দেশেই বাড়ছে শনাক্তের হার। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার আগের
২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৩.২৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সারা দেশের
চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই হবে না। অক্সিজেন
সংকট তীব্র হবে। প্রায় বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হবে। তাই সংক্রমণের
ঊর্ধ্বগতি রোধ করতেই হবে। এ জন্য নামমাত্র লকডাউন নয়, সর্বাত্মক লকডাউন
বাস্তবায়ন করতে হবে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাইকে বাধ্য
করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকার
আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু আমরা টিকার সংকটে পড়ে গেছি। উপহার হিসেবে চীনের
দেওয়া সামান্য টিকা দিয়ে ঢিমেতালে চলছে কার্যক্রম। বলা হচ্ছে, এ মাসেই চীন
থেকে কেনা ৫০ লাখ টিকাসহ কোভ্যাক্স ও অন্যান্য উৎস থেকে আরো কিছু টিকা
আসবে। আশা করি, অচিরেই কেটে যাবে টিকা সংকট। পাশাপাশি বাড়াতে হবে উন্নত
চিকিৎসার ব্যবস্থা।