কুমিল্লা-৫
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াসহ তিনটি সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে
অংশ নিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের হিড়িক পড়েছে আওয়ামী লীগে। ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫
এবং সিলেট-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চান ৯৪ জন। এর মধ্যে কুমিল্লা-৫
আসনের মনোয়ন ফরম তুলেছেন সর্বোচ্চ ৩৫ জন। এছাড়া, ঢাকায়-১৪ আসনে ৩৪ এবং
সিলেট-৩ আসনে ২৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন।
এত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী
দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, রাজনীতির
মাঠে কার্যত বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির জনপ্রিয়তা না থাকা এবং দলগুলোর
সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সবাই আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান। এছাড়া,
এবারের উপ-নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তও মনোনয়নপ্রত্যাশী
বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে, ঢালাওভাবে মনোনয়ন চাইলেও দলের দুঃসময়ে যারা
ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তাদেরই মূল্যায়ন করবে আওয়ামী লীগ।
এ সম্পর্কে
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘সমস্যা
হচ্ছে-সবাই এমপি হতে চায়। মনোনয়ন যে কেউ চাইতেই পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ
ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের হাতেই নৌকার হাল তুলে দেবে।’
দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবার মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক প্রার্থীর সংখ্যা
অনেক। খুব একটা অসুবিধা নেই, এই কথা মনে করে অনেকই আবার প্রার্থী হচ্ছেন।
পায় আর না পায়, প্রার্থী হতে চায়। কারণ, বিএনপি নেই, শুনেছে। সেজন্য
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাপ বেড়েছে।’
ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে,
জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নেত্রীর সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিষয়ে আলোচনা
হয়নি। সাধারণ একটি গাইডলাইন তিনি দিয়েছেন। সেটা হলো—তিনি ত্যাগী ও পরীক্ষিত
কাউকে মনোনয়ন দেবেন। যারা জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং দুঃসময়ে দলের
পাশে ছিলেন। এমন একটি ধারণা তিনি আমাকে দিয়েছেন।’
‘এখানে গোয়েন্দা
রিপোর্ট থাকবে। দলীয়ভাবেও রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। নেত্রীরও নিজস্ব একটি টিম
আছে। সেই টিম দিয়ে তিনি মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আশা করি, আমরা
যথাযথ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারব।’
ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ
সদস্য আসলামুল হক, কুমিল্লা-৫ এ দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এবং সিলেট-৩ এ মাহমুদুস সামাদ চৌধুরীর
মৃত্যুতে আসন তিনটি শূন্য হয়। এই তিন আসনে আগামী ২৮ জুলাই উপ-নির্বাচন হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে শনিবার (১১ জুন) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের
সভায় চূড়ান্ত হবে কারা পাচ্ছেন দলের টিকিট।
তিন আসনের মধ্যে সবচেয়ে
আলোচিত ঢাকা-১৪। আলোচনা চলছে—কে হচ্ছেন আসলামুল হকের উত্তরসূরি। এখানে
হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের
নেতারাও। অবস্থানগত দিক দিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৪ আসনে বিগত
নির্বাচনে যারা মনোনয়নের জোরালো দাবিদার ছিলেন তারাও এবার নৌকার কা-ারি হতে
চান। আসনটিতে মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৩৪ জন।
একই সময় হতে
যাওয়া কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক
নেতাকর্মী দলের মনোনয়ন চেয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ ও সিলেট-৩ এ
২৫ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
সংসদীয় আসনে
‘যোগ্যতা না থাকা’র পরও অনেকের মনোনয়ন ফরম কেনা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেছেন, ‘আগে ৩৫০টি
সংসদীয় আসনে যারা নির্বাচন করতে চাইতেন, তাদের অন্তত আশি শতাংশকে চিনতাম,
জানতাম। কিন্তু এখন যারা মনোনয়ন কিনছেন, তাদের মনোনয়ন ফরম কেনা উচিত কি না,
সেটি একবারও ভেবে দেখে না। সবাই এমপি হতে চায়। এই যে তিন আসনে এত
মনোনয়নপ্রত্যাশী, সংসদীয় বোর্ডের সভায় বসলে দেখা যায়, বেশিরভাগই অপরিচিত
মুখ।’
তিনি বলেন, ‘মূলত অনেকে মনে করছেন, যেহেতু বিএনপি এই মুহূর্তে
মাঠে নেই, তাদের জনপ্রিয়তা বা সাংগঠনিক তৎপরতাও নেই, তাই আওয়ামী লীগের
মনোনয়ন মানে নিশ্চিত সংসদ সদস্য। এই ধারণা থেকে সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
চাচ্ছেন।’
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ওই তিন আসনের উপ-নির্বাচনে
আগামী ১৫ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ জুন।
১৮, ১৯ ও ২০ জুন আপিলের দিন ঠিক করা হয়েছে। প্রার্থিতা বাতিলের শেষ দিন ২৩
জুন। প্রতীক বরাদ্দের তারিখ ২৪ জুন।