ছোটগল্প ---- বষি - ১
ইকবাল আনোয়র । ।
'কছরিুদ্দীরে সাপে কাটছ।ে' শষে রাত।ে বউ যনেো টরে না পায়, যথাসম্ভব শব্দ সৃষ্টি না কর,ে কউেয়ার খুলে সে বাইরে আস।ে জানালাটা খোলা ছলিো। সারা রাত ফুলরে সুবাস পয়েছে।ে ঘুম একদম হয় নাই। পহর না হতইে ঠাহর করে করে সে ফুল গাছটার কাছে গলেো। এতো ঠাহররে দরকার ক!ি সুবাস যে দকিে ঘন, চোখরে ব্যবহার ছাড়াই সে দকিে গলেইে হয়! কন্তিু না। চোখরেও কাজ আছ।ে সুবাসরে কাছে যাওয়ার আগে যনেো, উষ্টা না খায়, সে দকিে নজর রাখতে হব!ে ঝোপরে কাছে গছেে কছরিুদ্দী। তার মনে বড় ভাব আসছ।ে ছোটবলোয় পড়া একটা কবতিার কথা মনে পড়লো। মা শখিয়িছেলিো। মা নাই। কবতিা আছ-ে 'ফুলরে গন্ধে ঘুম আসনো, একলা জগেে রই...।' কছরিুদ্দী আহ্ করে উঠ।ে হাসনাহনোর গাছরে তলে সাপ থাক।ে পরম সুবাসটা, এ চতেনটা এতক্ষণ ধরে চাপা দয়িে রখেছেলিো। সাপরে কামড় খয়েে কছরিুদ্দী ঘরে আসলো। মরণটা না হয় ঘরইে হোক। সময় শষে। তবে নস্তিারও বট।ে বষিাদে একটা আনন্দরে স্বাদও আছ।ে সে কাউকে ডসির্টাব করবনো বলে ঠকি করলো, কারো কাছ থকেে কোন সাহায্যও নবেনো। সে কলমো শাহাদাত পড়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নলিো। বষিরে জ্বালায় তার গুঙ্গানি শোনা যায়। বউ সজাগ হয়ে হচকতি হয়ে বল-ে :আপনার কি হইছ?ে :সাপে কাটছ।ে কাউরে বলবা না। যত বলবা বষি তত বাড়ব।ে গোপন রাখ। আমি তো মরুম। সময় একটু বশেী পাইল,ে যত পাপ করছ,ি সইে সব স্মরণ কইরা তওবা করতে পারুম। পইল্লা পরথম, তুমি মাফ করো। :কতিা যনে কন, আপনি কোন পাপ করনে নাই। :মানুষ সকলইে কম বশেী পাপ কর।ে বউ কছরিুদ্দীকে না বলে আঁধার রাতে ওঝা বাড়তিে রওয়ানা দলিো। সে হামলি। দৌড়ানো মানা। হাঁপয়িে উঠলো দৌড়ানোর চোট।ে এক বাঁশরে পুলটা দনিরে বলোতওে সে ডরে পার হয় না, সইে পুল সে পার হয়ে গলেো। ওঝার বাড়ি এক মাইল দুর।ে ওঝার বাড়তিে গয়িা ওঝারে বলবে কী, সে শোনে তারওে সাপে কাটছ।ে ওঝারে সাপে কাটন মান,ে দশেরে অবস্থা খারাপ! যে রক্ষক, তারে যদি ভক্ষকে ধরে তবে তো সব আশা শষে। ওঝা অন্যরে বষি ছাড়ায়, ওঝার বষি ছাড়ায় ক?ে এ কথা এ গ্রামে কারো জানা ছলিোনা। কনেনা এমন আচানক ঘটনা ইতপর্িুবে আর ঘটে নাই! বউ এর নাম ঝনিুক। সাপে কাটার ঘটনাতো। এতক্ষণ বলতে মনে ছলিো না। কছরিুদ্দীর বউএর নাম কোনো ববি-ি টবিি হইলে মানায়। ঝনিুক কমেন উড়াল পক্ষী জাতরে নাম! তবে কছরিুদ্দওি তার এ জাতরে নামটা বদল করে নাই। দাদার দয়ো নাম। অল্প শক্ষিতি দাদা। দাদায় বলতো- নাম দয়িা কাম ক,ি কাম দয়িাএনা নাম। কছরিুদ্দি জীবনে অনকে কাজ করছে,ে তবে কোনটাতইে নাম হয়নাই! ২ সাপে কাটার এক বরিল ঘটনা এটা; একই সঙ্গে 'ঝারখাঅইন্না' ও 'ঝারঅইন্না', দুইজনরে।ে এ ঘটনা জানাজানি না হয়ে পার?ে সকাল হতে না হতে সকল মানুষ জড়ো হয়ে গলেো। তারা ওজার বাড়রি কাছে স্কুল মাঠে মটিংিএ বসলো। দশ গ্রামরে মুরব্বী আসলো। তনোর নাম জহরি কাজী। তনিি আলোচনা শুরু করনে। : এইটা কোনো যনেো তনেো বষিয় না। আমাদরে চন্তিা হইলো একই সাপ দুইজনরেে কাটছ?ে না সাপ ভন্নি! এক ছমেরা বল-ে : এইটা কোন কথা হইলো? সাপে কাটছ,ে এই হইলো ঘটনা, এখন কি করা, সে কথা বলনে? জহরি কাজী বলনে- : বয়োদপটারে কানে ধইরা বাইর কইরা দওে তোমরা। সঙ্গে তার মাষ্টররওে র্বডার পার করো। যে মাষ্টার বয়োদপ ছাত্র পয়দা কর,ে তার দোষ বশেী। আবার সভার আলোচনা সামনে বাড়তে লাগলো। একদল বলে -সাপ একটাই। আরকেদল বলে - সাপ একটা হয় কমেন!ে দুইটা। 'এক সাপরে দল'এর বয়ান সংক্ষপে:- :এইটা আসমানরে বালা। সাপটা জনি-সাপ। ভন্নি জাতরে। আজাবরে সময় এমন বহু আচানক ঘটনা ঘট।ে জনি- সাপ একই সংগে বহু জায়গায় যতেে পার।ে 'দুই সাপরে দল'এর বয়ান সংক্ষপে:- : আসমানি বালা তো অবশ্যই। এইটা কবেল আজাব! এইটা মানতে পারনিা, এইটা গজবও । তবে যাই হোক, সাপ একটাই হইতে হব!ে এইটা কোন্ কতিাবে লখো আছ!ে এই নয়িে যখন ববিাদ; এমন কি মারামারি প্রায় রক্তারক্তরি র্পযায়,ে তখন কছরিুদ্দী এসে বলে - : আমারে সাপে কাটে নাই। ঝনিুকে কাটছ।ে এই কথা শোনে ববিাদমান দল দুটি এক হয়ে গলেো। তারা কছরিুদ্দীর দকিে তড়েে এলো, বললো - : তরে ঝনিুকে কাটছ,ে কাটুক, তবে সাপে যে কাটছ,ে এইটাতে কোন ভুল নাই। যদি তরে সাপে না কাট,ে তবে কি আমরা অর্নথক ঝগড়া করতাছ?ি তরে শুধু সাপে কাটইেনাই, তোর মরণও হইছ।ে কনেনা সত্য হইলো- সাপে কাটা রোগীরে ওঝা না ঝাড়লে সে বাঁচনো। সত্যরে কখ্খনো মথ্যিা দয়িা ঢাকন যায় না! এই বলইে দুইদল এক হয়ে কছরিকে গুম করে দয়িে তাদরে গুরুত্বর্পূন ববিাদে ফরিে গলেো। কছরিরে দাদার কথা এভাবে সত্য হলো- নাম দয়িা কাম কী, কাম দয়িা এনা নাম। সাপে কাটনরে এমন কামই কছরি ঘটয়িছেে য,ে তার নাম ছড়য়িে গলেো।
তবুও তোমাকে চাই হিমাদ্রিশেখর সরকার ||
গোলাকার চাঁদের দিকে এখন তাঁর চোখ। তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময় । তাঁর ভাবনার শেষ ছিল না। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না অনেকক্ষণ। হাতে তো আর কিছু নেই। যা কিছু সুন্দর সবই গেছে নর সৃষ্টির পেছনে। কিন্তু নারী? নারী না হলে কেমন করে হয়? এবার তিনি নারী সৃষ্টিতে মন দিলেন।
আরো কিছুটা সময় কেটে গেল। চাঁদের গোলাকৃতি নারীর মুখে বসিয়ে দিলে কেমন হয়? তিনি তাই করলেন । স্তব্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ চন্দ্রাননা নারীর দিকে। ‘চন্দ্রাননা’ ক্ষণকালের জন্যে হলেও তাঁকে নেশাগ্রস্থ করল।
ওর দেহে যদি লতাগুল্মের বক্রগতি আরোপ করা যায় তাহলে কেমন হয়? আর যদি জুড়ে দেওয়া যায় ফুলের ফুটন্ত স্বভাব কিংবা ঘাসের ডগার কম্পন। অথবা নখ থেকে চুল পর্যন্ত সবুজ পাতার কমনীয়তা। আর সারা দেহে যদি ছড়িয়ে দেয়া যায় বাতাসের চঞ্চলতা, কেমন হয় তাহলে ?
এবার ওর চোখ নিয়ে ভাবনায় পড়লেন সৃষ্টিকর্তা। হরিণীর চাহনি থেকে ধার করলেন নারীর চোখের অবয়ব।
না, এখানেই শেষ তো নয়। এবার নারীর স্বভাবের দিকে নজর দেয়া যাক। প্রথমেই তিনি দিলেন ওকে হাতির শুঁড়ের কর্মমুখরতা । ওর স্বভাবে আরো জুড়ে দিলেন মেঘের ক্রন্দন। আরো দিলেন ময়ূরীর অহংকার। দিলেন তোতা পাখির বুকের লোমের কোমলতা। পাশাপাশি পাথরের কঠিনতা আর বাঘের হিং¯্রতা দিতেও ভুললেন না।
আগুনের দাহ্যতার পাশাপাশি আবার দিলেন বরফের শীতলতা।
কন্ঠে দিলেন কোকিলের কুহুতান আর চড়–ই পাখির কিচির মিচির।
নারীর সৌকর্যের কাছে মৌমাছির মধুচাকও হার মানল।
সারসের শঠতার পাশাপাশি চক্রবাকের বিশ্বস্ততা দিতেও ভুললেন না সৃষ্টিকর্তা।
অতঃপর জীবন দান করে সৃষ্টিকর্তা নারীকে তুলে দিলেন পুরুষের হাতে।
এক সপ্তাহও কাটল না। পুরুষটি নারীটির সম্পর্কে এন্তার অভিযোগ নিয়ে ওর সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাজির।
প্রভু, যে জীবটি আমাকে দিয়েছেন ‘ও’ আমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ‘ও’ সবসময় বক্বক্ করে আর আমাকে অসম্ভব রকমের গালিগালাজ দেয়। আবার আমাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও যায় না কোথাও। সবসময় ওকে আদর দিতে হয়। কারণে-অকারণে মেঘের মত কাঁদে। হরিণীর মত তাকিয়ে থাকে। আবার ময়ূরীর মত অহংকারী। অতএব, ওকে ফিরিয়ে নিন প্রভু। ওর সাথে সহবাস আমার কর্ম নয়।
সৃষ্টিকর্তা বললেন, তথাস্তু। তুমি আসতে পারো। ‘ও’ আমার কাছেই থাকবে।
আবার এক সপ্তাহ পরে পুরুষটি এসে সৃষ্টিকর্তাকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করল।
প্রভু, একটা কথা বলি, ওকে ফিরিয়ে দেয়া অবধি আমি খুব নিঃসঙ্গ। আমার সময় একটুও কাটে না। এখন কেবলি মনে পড়ে, ‘ও’ কোকিলের মতো কি চমৎকার গাইতো, দোয়েল-শ্যামা-ফিঙ্গের মতো নাচতো, হরিণীর মতো আমার চোখের দিকে কেমন নির্নিমিখ তাকিয়ে থাকতো! আহা! এসব কেমন করে ভুলি!
প্রভু, ‘ও’ ছিল মায়াবী লতাগুল্ম । কেমন মায়ায় মায়ায় জড়িয়ে রাখতো আমাকে। ওর হাসিতে যাদু ছিল। যাদুর স্পর্শে আমার হৃদয় গলে জল হয়ে যেতো। তোতা পাখির বুকের চেয়েও ছিল ওর নরম বুক। আহা! প্রভু, এর তুলনা কোথায়?
প্রভু, এখন আমার দুঃখ ভুলাবে কে বলো না? ওর স্পর্শে আমি সব দুঃখ ভুলে যেতাম। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। চুপ করে থেকো না প্রভু। ওকে তুমি আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
সৃষ্টিকর্তা হেসে বললেন, তথাস্তু। ওকে নিয়ে যাও পুরুষপ্রবর।
তিনদিন যেতে না যেতে পুরুষটি আবার এসে হাজির।
প্রভু বললেন, আবার কি হলো হে প্রেমিক প্রবর?
পুরুষটি বললো, প্রভু আমি বুঝতে পারছি না কেন এমন হয়। ‘ও’ আমার কাছে আনন্দের চেয়ে নিরানন্দের কারণই বেশী। ওকে আমার প্রয়োজন নেই। আপনার জীব আপনি ফিরিয়ে নিন। ‘ও’ আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
সৃষ্টিকর্তা এবার ক্ষেপলেন। এবার তাঁর জলদগম্ভীর অথচ কর্কশ কন্ঠ ভেসে এলো।
দূর হয়ে যাও আমার সম্মুখ থেকে। আমি একই কাজের পুনরাবৃত্তি করতে পারবো না। আমার হাতে বহু কাজ। তোমাকেই যে কোনভাবে ওকে আয়ত্তে এনে ওর মন জয় করতে হবে।
পুরুষটি অনড়। বললো, প্রভু এ কর্ম আমার নয়। একবার আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
সৃৃষ্টিকর্তা এবার আরো ক্ষেপলেন। তিনি ধমকের সুরে বললেন, এ কেমন কথা? একবার বলছো ওকে ছাড়া বাঁচবেনা আর বার বলছো ওর সাথে বাস করা অসম্ভব! ওসব হবেনা বাপু। ওকে তোমার গ্রহণ করতেই হবে এবং এভাবেই চলবে তোমাদের জীবন।
সৃষ্টিকর্তা এবার পুরুষটির মুখ থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন।
সৃষ্টিকর্তার আদেশ অমান্য করার তো জো নেই । আবার মহাপাপও বটে। পুরুষটি নারীটিকে গ্রহণ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
কি আর করা। হায়রে নারী! তোমাকে নিয়ে বাঁচিনা আবার তোমাকে ছাড়া বাঁচাও দায়।
[একটি আদিবাসী লোকগাঁথার ছায়া অবলম্বনে]
হিমাদ্রিশেখর সরকার ঃ প্রাবন্ধিক, গবেষক ও ছোটগল্পকার। মোবাইল ০১৭২০২১২৮৫৬ email
[email protected]
একদিন মরে যাবি তুই
আবেদীন মাওলা।
কতো শতো ঘাস দূর্বা চাপড়া বাদাল
বাতাসে ছড়ায় আজন্ম শৈশব সুবাস
কাঁচি খুপড়ি নিড়ি হাতে মাঠে ক্ষেতে
আইলে গিয়েছি, পেছনে পেছেনে ঝুহিন
গরুর মতো ডেকেছি, বেড়েছে নানিকে
মা ডাকার ঋণ।
কেটে গেছে বুড়া আঙুল কাঁচির দাঁত লেগে
রিফুজি লতার কষে বেঁধেছি নিজেকে
আজও আছে সেই দাগ, আর আছে
মাকে কাছে না পাওয়ার রাগ বিরাগ
তারপর লেখা পড়া এসে শিক্ষার ক্ষত দিল এঁকে
নাকে মুখে চোখে মগজ- মস্তকে।
জ্ঞানহীণ শিক্ষা, চলছে বহাল তবিয়তে
জনে জনে তথ্যের ভা-ার, কত কিছু জানি
জিতে গেছি , বগল বাজাই তবু চারদিকে শীত
জগতের পাছায় ফু দিলে বাজে করোনার গীত
সঙ্গে বাজে বোতল শিশি এবং বাদুরের মিথ
শ্বাস বড় বা ছোট হলে দেহ হারায় দেহের সম্বিৎ
ভেকসিন হাঁ ভেকসিন না সঙ্গে পুঁজ ও পুঁজির সুঁই
ঘাসের সুবাস বুকে নিয়ে একদিন মরে যাবি তুই।
কতিপয় পুরনো চিঠি পুড়ছে মো. আরফিুল হাসান ||
পোস্ট অফিসের উত্তর গেটে স্তুপিকৃত চিঠি পুড়ছে
বহুদিনের পুরনো, প্রাপক পাওয়া যায়নি যাদের
অথবা যার প্রেরক মরে গেছে অপো করে
ফিরতি চিঠির।
কালো ধোঁয়া উড়ছে আকাশে, কাগজপোড়া ছাই
কুণ্ডলী বাতাসে ছড়াচ্ছে আশেপাশে। কেউ একজন
একটা কিছু দিয়ে উষ্কে দিচ্ছে আগুন। পুড়ছে
কতিপয় পুরনো চিঠি।
কার ঠিকানাটা পুড়ে গেলো? কার নামের অর
নির্দয়ভাবে পুড়ে যাচ্ছে পলকে। কার যেনো আদর,
কার যেনো ভালোবাসা, কার যেনো স্বপ্ন পুড়ছে
পোস্ট অফিসের উত্তর গেটে।