ঢাকা,
খুলনা ও চট্টগ্রামে সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে দেশে এক দিনে শনাক্ত কোভিড রোগীর
সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল
পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪ হাজার ৮৪৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ
ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের।
এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত নয়
সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৪
এপ্রিল এক দিনে ৫ হাজার ১৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল।
গত এক
দিনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমলেও নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দুইশর বেশি।
সোমবার দেশে ৪ হাজার ৬৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা
জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার রয়েছে
১৯ শতাংশের উপরে।
শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১৪৯৬ জনই ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।
নতুন
রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬১
হাজার ১৫০ জনে। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৭০২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।
সরকারি হিসাবে একদিনে আরও ২ হাজার ৯০৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৫ জন।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে
যায় গত ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার
৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮
মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১
জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর
খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৮৮ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষের।
সংক্রমণের
দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সরকার এপ্রিলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর মে মাসে
দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে এসেছিল।
কিন্তু
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি
ট্রান্সমিশন ঘটায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু গত কয়েক সপ্তাহ
ধরে আবার বাড়ছে।
ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৪৯৬ জন
কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী জেলায় ৩২৬ জন, খুলনা জেলায় ২৬৮
জন, যশোরে ২৫৩ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ২২৬ জন, টাঙ্গাইলে ১২১ জন, কুষ্টিয়ায়
১১৯ জন, জয়পুরহাটে ১১০ জন এবং দিনাজপুরে ১১০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের
সংখ্যা আগের দিনের ১৮৩৭ জন থেকে বেড়ে ১৯৬৭ জন হয়েছে, যা সারা দেশের মোট
শনাক্তের প্রায় ৪১ শতাংশ।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা
আগের দিনের জন ৪৬১ থেকে বেড়ে ৫৩২ জন এবং খুলনা বিভাগে ৯৪৫ জন থেকে বেড়ে ৯৯৮
জন হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী আগের দিনের ৭৯৯ জন থেকে কমে ৭৬৩ জন
হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫২৮টি
ল্যাবে ২৫ হাজার ২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৩
লাখ ৭৬ হাজার ৮১৯টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের
হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩
দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং
মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের
হার আগের দিনের ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, খুলনা
বিভাগে ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ শতাংশ
থেকে বেড়ে ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ
থেকে কমে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার। গত এক দিনে যারা
মারা গেছেন, তাদের ১৪ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের। খুলনা বিভাগে ২৭ জন, রাজশাহী
বিভাগে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, বরিশাল
বিভাগে ২ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩
জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে। মৃতদের মধ্যে ৪২ জন পুরুষ এবং ৩৪ জন নারী।
তাদের ৬২ জন সরকারি হাসপাতালে, ১০ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায়
মারা গেছেন ৪ জন।
তাদের ৩৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২৩ জনের
বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৮ জনের
বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।