করোনাভাইরাসের দ্রুত
সংক্রমণক্ষম ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল
৮টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা গেছে ৮১ জন এবং এই সময়ের মধ্যে শনাক্ত
হয়েছে ছয় হাজার ৫৮ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৯.৯৩
শতাংশ। তার আগের দিন এই হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এই হিসাবের ভিত্তিতে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেছেন, দেশে তৃতীয় দফায়
করোনা সংক্রমণ চূড়ায় উঠে গেছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা খালি
নেই, সাধারণ শয্যারও অভাব দেখা দিয়েছে। অথচ এখনো রাজধানী ঢাকায়
সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত, শিল্প-কলকারখানা, শপিং মল, মার্কেট,
দোকানপাট, রেস্তোরাঁ-সব কিছুই চলছে পুরোদমে। গণপরিবহনেও ঠাসাঠাসি ভিড়।
পথে-ঘাটে চলাফেরায় বা অলিগলিতে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই নেই। ঢাকা
থেকে বের হওয়া বা প্রবেশে দূরপাল্লার ট্রেন, বাস, লঞ্চে যাত্রী পরিবহন বন্ধ
থাকলেও থেমে নেই ভাঙা ভাঙা পথে মানুষের চলাচল। বিমানেও যাত্রী চলাচল
স্বাভাবিক। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে গায়ে গায়ে ভিড় যাত্রীদের। বিমানের ভেতরে
এক সিট ফাঁকা রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালের
ইনডোর-আউটডোরেও দেখা যাচ্ছে একই রকম ভিড়। এ অবস্থায় সারা দেশে একটানা ১৪
দিনের সম্পূর্ণ শাটডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয়
কারিগরি পরামর্শক কমিটি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, শাটডাউন দেওয়ার
জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে, যেকোনো সময়ই এই সিদ্ধান্ত আসতে
পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতীতে যেভাবে লকডাউন বা কঠোর বিধি-নিষেধ
আরোপ করা হয়েছে, সেভাবে শাটডাউন দেওয়া হলে কোনো ফল আসবে না। মহামারির ভয়াবহ
বিস্তার কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না। তার কারণ এবারের এই বিশেষ ধরনের
ভাইরাস বা ডেল্টা ভেরিয়েন্টের উচ্চ সংক্রমণক্ষমতা। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ
কারফিউ ঘোষণা এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, অফিস-আদালত, কলকারখানা, মার্কেট ইত্যাদি খোলা রেখে মানুষের চলাচল
নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যানবাহন বন্ধ করে দিলেও ভেঙে ভেঙে নানা ধরনের
যানবাহনে মানুষ আসা-যাওয়া করবে। তাই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস,
কারখানা, মার্কেট ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন
ছাড়া মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,
করোনার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত কমপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা
কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমরা টিকাসংকটে পড়ে গেছি। কবে নাগাদ
ক্রয়কৃত টিকা হাতে আসবে তা-ও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। এ অবস্থায়
মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তার ওপর
আসছে কোরবানির ঈদ। ঈদ যত কাছে আসবে, মানুষের ঢাকা ছাড়া কিংবা হাট-বাজারের
ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা ততটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের
মাধ্যমে করোনার বিস্তার কমিয়ে আনার এখনই সময়।