আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যেতে থাকার মধ্যে তালেবান গোষ্ঠীর বড় ধরনের অগ্রযাত্রা দেখে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আফগান মিশনের শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল স্কট মিলার।
মঙ্গলবার সতর্ক করে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে দেশটির নেতারা যদি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারেন, তাহলে আফগানিস্তান গৃহযুদ্ধ এবং ‘খুবই কঠিন সময়ের’ মুখোমুখি হতে পারে ।
আফগানিস্তানে একের পর এক হামলায় বহু জেলা তালেবান যোদ্ধাদের দখলে চলে যেতে থাকায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করার কয়েকদিনের মাথাতেই শীর্ষ মার্কিন কমান্ডারের কাছ থেকে এ সতর্কবার্তা এল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আফগানিস্তান বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেবোরাহ লিয়নস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছিলেন, মে মাস থেকে এ পর্যন্ত দেশটির ৩৭০টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি দখল করে নিয়েছে তালেবান। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নগরী তালেবান যোদ্ধারা ঘিরে ফেলতে শুরু করেছে এবং রাজধানী কাবুলের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
মার্কিন সামরিক কমান্ডার স্কট মিলার এক বিরল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এখন আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভাল নয়। বর্তমানে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে নিশ্চিতভাবে গৃহযুদ্ধের পথে এগুবে আফগানিস্তান। বিষয়টি বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের যে চুক্তি হয়েছে সে অনুযায়ী তারা কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেন মিলার। তিনি বলেন, তালেবান গোষ্ঠী সহিংসতা কমিয়ে আনছে না।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের অন্তত ১০০ জেলা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান জঙ্গিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথে আফগান বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ঘাটতি থাকায় এমন হচ্ছে। তবে তালেবানের বিরুদ্ধে আকাশপথে হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি জেনারেল স্কট মিলার।
তিনি বলেছেন, “আমরা কোনও বিমান হামলা চালাতে চাই না। কিন্তু বিমান হামলা বন্ধ হোক তা চাইলে আপনাদেরকে সব সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে ক্ষমতা থেকে তালেবানদের উৎখাত করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে টুইর টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেন ও অন্যান্য আল কায়েদা নেতাদের আশ্রয় দিয়েছিল তালেবান গোষ্ঠী।
কিন্তু পশ্চিমাদেশগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য আফগানিস্তান আর বিদেশি জিহাদিদের স্বর্গভূমি হবে না সে নিশ্চয়তার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন সেখান থেকে বাদবাকী সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তানে তালেবান সহিংসতা বেড়েছে।
আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব সেনা প্রত্যাহার হওয়ার কথা। কেবল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এবং সেখানকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য রাখা হতে পারে প্রায় ৬৫০ মার্কিন সেনা।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দাবি, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তালেবান জঙ্গিদেরকে ঠেকাতে সক্ষম। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, বিদেশি সেনারা চলে গেলে আফগানিস্তান আবার তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।