তৃতীয় দিনে চলাচল বেড়েছে রাজধানীতে
Published : Sunday, 4 July, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব
প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের তৃতীয় দিনে তৃতীয়
দিনে রাজধানীতে মানুষের চলাচল আগের দুদিনের তুলনায় বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্যের দোকান ও কাঁচাবাজারগুলোতে শনিবার মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
অলিগলিতেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ভিড় দেখা গেছে। পল্টন, মালিবাগ,
আজিমপুর, মিরপুর, ধানম-িসহ রাজধানীর সব প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপও বেড়েছে।
নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল
এলাকায় রিকশা চলাচল বেড়েছে। পাশাপাশি চলছে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি।
হাতিরপুল
বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে
বিধি-নিষেধ মানাতে নগরীর পথে পথে আগের মতোই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা
রয়েছে। পুলিশের তল্লাশি পেরিয়েই বাইরে বের হতে হচ্ছে সবাইকে। এলিফ্যান্ট
রোড এলাকায় সেনা সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এক সপ্তাহের
‘কঠোর লকডাউনের’ প্রথম দুই দিন ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা ছিল।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরিয়ে এই দুই দিন অনেকেই শাস্তির মুখে পড়েছেন। দুই দিনে আট শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
তবে শনিবার বৃষ্টি না থাকায় মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নিউ
মার্কেট থানার এসআই মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোটর
সাইকেলে দুইজন দেখলে তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সড়কে কোনো গাড়ি কেন বের
হয়েছে, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে।
“কেউ আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
পল্টন,
কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা এলাকায়ও শনিবার রিকশার সংখ্যা ছিল
বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কম থাকলেও জরুরি সেবার পরিবহনসহ পণ্য পরিবহনের
গাড়ি চলতে দেখা যায়।
এ এলাকার রিকশাচালকরা জানান, গত দুই দিন বৃষ্টির কারণে ভাড়া কম পেলেও শনিবার বাড়তি উপার্জনে ‘খুশি’ তারা।
রামপুরার
ডিআইটি রোডে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে কিছু গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের বাইরে বের
হওয়ার কারণ জানতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ সড়ক দিয়ে একটি রিকশায়
চারজন, আরেকটি রিকশায় তিনজন যাত্রী বহন করতে দেখা যায়। পুলিশ রিকশা দুটি
থামিয়ে দুইজনের বেশি যাত্রী বহন না করতে রিকশাচালকদের সতর্ক করে দেয়।
এছাড়া
একজনের বেশি যাত্রী বহন করে চলাচল করা মোটর সাইকেলগুলোও থামিয়ে দিতে দেখা
যায়। শান্তিনগর, রামপুরা ও মালিবাগ রেলগেইট নাস্তা গুলোতে নাস্তা কিনতেও
মানুষদের ভিড় দেখা যায়। তবে ফার্মেসি, খাবারের ও মুদি দোকান সকাল থেকে খোলা
থাকলেও অন্যান্য দোকান বন্ধ ছিল।
একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আহমেদ
আলী বলেন, “দুই দিন বৃষ্টির জন্য বাজারে আসতে পারিনি। আজকে বাজার করছি।
খোলা জায়গায় বাজার বসেছে, এটা ভালো দিক। সংক্রমণের ভয় কিছুটা কম।”
ধানম-ির সাত মসজিদ রোড এলাকায় যান চলাচলও ছিল গত দুই দিনের চেয়ে বেশি।
এখানকার লেবু বিক্রেতা মমতাজ বেগম বলেন, “খামু কী, হাতে টাকা না থাকলে চলমু কেমনে? সামান্য কটা লেবু ছিল, তা বেচতে বাইরাছি।”
ধানম-ির
জাফরাবাদ মোড়ের একটি ছোট রেস্তোরাঁয় বসিয়ে খাবার পরিবেশন করায় হোটেলের
একজন কর্মীকে পুলিশ প্রথমে আটক করে, পরে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই
রেস্তোরাঁর কর্মী ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রথমে আমাদের
একজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিল। পরে সতর্ক করে ছেড়ে দিছে।"
পুরান ঢাকার
আজিমপুর এলাকায়ও গত দুইদিনের তুলনায় মানুষের চলাচল বেশি দেখা গেছে।
আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদ এলাকায় রাস্তার পাশে সবজি, মাছ ও মুদি দোকানে
ক্রেতাদের ভিড় ছিল।
এ এলাকার প্রধান সড়কে রিকশার পাশাপাশি অন্যান্য
গাড়ির চাপও বেড়েছে। তবে আজিমপুর চৌরাস্তায় পুলিশের তল্লাশি পেরিয়েই তাদের
চলাচল করতে হচ্ছে।
মিরপুরের ১০ নম্বর থেকে ১ নম্বর পর্যন্ত সড়কে চারটি চেক পয়েন্টে পুলিশকে তল্লাশি চালাতে দেখা যায়।
ট্রাফিক
পুলিশের উপ-পরিদর্শক সোহেল জানান, “রাস্তায় গাড়ির উপস্থিতি কম। এর মধ্যে
যারা যাতায়াত করছেন তাদেরকে ক্ষণে ক্ষণে রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা
করা হচ্ছে। সকাল থেকে অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা খুব একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।”
গত
সপ্তাহের লকডাউনে যাত্রীর উপস্থিতি ছিল বেশি, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন এর
পরিমাণ ছিল কম। ফলে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ দাম হাঁকাচ্ছিলেন রিকশা
চালকরা।
তবে শনিবারের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ এর বিপরীত।
কয়েকজন
রিকশাচালক জানালেন, এবারের লকডাউনে হয়রানিমুক্তভাবে রাস্তায় রিকশা চালাতে
পারলেও যাত্রী কম। ফলে তাদেরকে মোড়ে মোড়ে অলস সময় পার করতে হচ্ছে।
মিরপুর
১ নম্বর গোল চত্বরে দেখা যায়, শতশত রিকশা যাত্রীর অপেক্ষায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে
আছে। দূরের গন্তব্যের যাত্রীরা জোড়া মিলিয়ে ভাড়া ভাগাভাগি করে গন্তব্যে
যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মিরপুরের রূপনগর ও পল্লবী এলাকায় রিকশা, মোটরসাইকেল ও জরুরী পণ্যবাহী গাড়ির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও কিছুটা বেড়েছে।
রিকশাচালকরা বলছেন, রিকশা বেশি চলাচল করলেও সে তুলনায় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
রূপনগরের
রিকশাচালক মো. বাবুল বলেন, “বাসায় ছোট ছোট তিন বাচ্চা। তিন-চারশ টাকার
সদাই নিতে হবে। কিন্তু সকাল থেকে তিনটি ট্রিপ পাইছি। পকেটে ১০০ টাকার মতো
আছে।”
এই এলাকারা রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান ও কাঁচাবাজারগুলোতে ভিড় ছিল
বেশি। ফলে অলিগলিতেও মানুষের আনাগোনা ছিল বেশি। তবে পোশাক, সেলুন,
বৈদ্যুতিকপণ্যের সকল ধরণের দোকান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
পল্লবীর ২২ তলা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গোলাম মর্তুজা বলেন, “সবজি, মাছ-ডিম তো কিনতে হবে। না হলে খাবো কী? মাস্ক পরেই আসছি।”
এই বাজারের মাছ বিক্রেতা আলী তালুকদার জানান, বৃষ্টি না থাকায় সকাল থেকেই ‘ভালো’ বিক্রি হচ্ছে।
সকাল ৯টার দিকে রূপনগরে পুলিশের একটি দল টহল দিলেও পরে আর দেখা যায়নি। ফলে অনেককে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পলাশীর মোড়ে প্রথম দিন পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও শনিবারও দেখা যায়নি।
আজিমপুর
পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আজ গত দুই দিনের মতো
বৃষ্টি নেই। তবে যেই রাস্তায় নেমেছে-সেই জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে পড়ছে।”