শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
বাদশা ও বীর বাহাদুর। নামেই রয়েছে রাজকীয় ভাব। চার বছর বয়সী বাদশার গাঁয়ের রঙ কালো। খুবই শান্ত স্বভাবের বাদশার ৬ ফুট উচ্চতা ৯ ফুট লম্বা। ৩৫মণ ওজনের বাদশাকে দূর থেকে দেখে মনে হবে ছোটখাটো একটি হাতি। অপরদিকে, ১৮মণ ওজনের বীর বাহাদুরের বয়স তিন বছর। ৫ফুট উচ্চতা ও ৮ ফুট লম্বা বীর বাহাদুরের গাঁয়ের রঙ কালো ও সাদায় মেশানো। ফ্রিজিয়ান জাতের বাদশা ও বীর বাহাদুরকে ঘিরে খামারি ইব্রাহীমের স্বপ্ন অনেক বড়। বাদশার জন্ম এ খামারেই আর বীর বাহাদুরকে ইব্রাহীম অন্য একটি খামার থেকে ক্রয় করেছেন।
বীর বাহাদুর ও বাদশাকে নিয়ে এলাকাবাসীর কৌতুহলের শেষ নেই। ক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যাপারীরা খামার ঘুরে যান দাম শুনে কারোই সাহস হয়না ক্রয়ের। কোরবানীর ঈদে বাজার কাপাঁবে ইব্রাহীমের বাদশা ও বীর বাহাদুর। বিক্রেতা ইব্রাহীম খলিল জানান, বাদশার দাম চাওয়া হবে ১৫/১৬ লাখ আর বীর বাহাদুরের দাম ১০/১২লাখ। তবে বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে চাহিদার কাছাকাছি আসলেই বাদশা ও বীর বাহাদুরকে বিক্রি করবেন তিনি।
ইব্রাহীম আরও জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বাদশা ও বীর বাহাদুরকে দেখতে ভীড় করছে খামারে। মজা করে অনেকেই বাদশার ও বীর বাহাদুরের সঙ্গে সেলফিও তুলছেন। বাদশা ও বীর বাহাদুরকে এবার বাজারে তুলবেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাধানগর গ্রামের খামারী ইব্রাহীম খলিল। খামারী ইব্রাহীম বলেন, ২০১৭ সাল থেকে সফল খামারী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাত্র ৩টি গরু দিয়ে শুরু করি খামার। এখন আমার খামারে ৫৪টি মোটাতাজা গরু রয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনেও বেচাবিক্রি ও দরদাম কষাকষি চলছে। এ বছর কোরবানী ঈদকে উপলক্ষ করে বাদশা ও বীর বাহাদুরকে মোটাতাজা করেন ইব্রাহীম। এরইমধ্যে খামারে থাকা ২৪টি বিক্রি করে ফেলেছেন তিনি। এখন ইব্রাহীমের খামারে শুধুই বাদশা ও বীর বাহাদুরের আধিপত্য চলছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেয়ে কুমিল্লার ছোটরা এলাকা থেকে ইকরামুল হক রুবেল পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন ইব্রাহীমের খামারে। তারা দুটি শাহীওয়াল জাতের গরু কিনেছেন সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিয়ে। ইকরামুল হক রুবেল এ প্রতিবেদককে বলেন, গরু কিনে এখানেই রেখে দিয়েছি। ঈদের আগের দিন ইব্রাহীম তার নিজস্ব পরিবহন দিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে। তবে আমার মনে হয়েছে, ক্রেতারা বাজারে না ঘুরে এখানে এলে ভালোদামে দেখে শুনে গরু কিনতে পারবেন।
ইব্রাহীম আজকের পত্রিকাকে জানান, গত চার বছর ধরে বাদশা ও তিন বছর ধরে পরম যতেœ বীর বাহাদুরকে গড়ে তুলেছেন তিনি। এ্যাংকার ভুষি, খৈল, রাব, মিষ্টি কুমড়া, সহযোগে তৈরি করা বিশেষ খাবার প্রিয় বাদশা ও বীর বাহাদুরের। নিয়ম করে তাদের খাওয়ানো ও পরিচর্চা করার জন্য সকাল-বিকাল দু’জন প্রতিদিন কাজ করছেন। আছেন একজন নিয়মিত পশু চিকিৎসকও। মাঝেমধ্যে ইব্রাহীমের নিজস্ব খামারে উৎপাদিত নেপিয়ার ঘাস খাওয়ান বাদশা ও বীর বাহাদুরকে।
পরিচর্চাকারী আবদুল কাদের ও খলিলুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, খুবই শান্ত স্বভাবে বাদশা। ঘাড়ে-গলায় হাতু বুলিয়ে দিলে সহসাই যেকোন খাবারই খাওয়ানো যায়। অন্যদিকে, বীর বাহাদুর বাদশা উল্টো। সময়মত খাবার দিতে দেরী হলেই চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। খুব রাগী আরও জেদী। তবে খুব যতœসহকারে এদের পরিচর্চা করি।
পশু খাবারের উচ্চ মূল্যের কথা উল্লেখ করে ইব্রাহীম জানান, ছয়মাস আগে এ্যাংকর ভুষির কেজি ছিলো ৩০ টাকা, এখন ৫০ টাকা। গত পরশু এক বস্তা ৮০০ টাকায় কিনলেও শুক্রবার কিনতে হয়েছে ৯৫০ টাকায়। পশু খাদ্যমূল্যের বাজার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের দাবী জানান ইব্রাহীম। ক্ষতিকর স্টেরয়েড ব্যবহার করে পশুর ওজন ও আয়তন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইব্রাহীম বলেন, কোন স্টেরয়েড বা ক্ষতিকারক ইনজেকশান ব্যবহার করা তো দূরের কথা, এসব চিন্তাও আসেনা। অনেক আদর যতেœ বাদশা ও বীর বাহাদুরকে গড়ে তুলেছি। সৌখিন ব্যক্তিরাই ওর কদর বুঝবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে গরু দুটো ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. আবদুল হাকিম লিটন বলেন, ইব্রাহীমের খামার পরিদর্শন করেছি। তাকে বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাঁর খামারে পশু চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে। বাদশা ও বীর বাহাদুর খুব মোটা তাজা হয়েছে। এছাড়াও তাঁর খামারে বহু জাতের গরু রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রাকিব হাসান বলেন, সরকার খামারিদের নতুন প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে তাদেরকে প্রণোদনা প্রদান করছে, প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবাও দিবে। ইব্রাহীম খলিলের খামারের বিষয়টা আমি জানি, সে একজন সফল খামারি। বাদশা ও বীর বাহাদুর নামে দুটি গরু রয়েছে তার খামারে । আশা করি সামনের ঈদে সে ন্যায্য মূল্যে বাদশা ও বীর বাহাদুরকে বিক্রি করতে পারবে।