ইসাবেলা নামের এক তরুণী নিজের মাকে খুন করেছেন। ১৮ বছরের ইসাবেলা গুজম্যানের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর মা একসময় ইউন মি হো রিচার্ড নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে মায়ের সঙ্গে রিচার্ডের মেলামেশা একেবারেই পছন্দ করতেন না ইসাবেলা। এ নিয়ে মা-মেয়ের ঝগড়াও হয়।
ইসাবেলা মায়ের সঙ্গে জগড়া করতেন এই বিষয়ে, মায়ের গায়ে থুতুও দিয়েছেন। বেশির ভাগ সময় ঘরের দরজা বন্ধ করেই থাকতেন ইসাবেলা। ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর। ইসাবেলার মা ইউন মি রিচার্ডের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে গোসল করতে চলে যান বাড়ির ওপরতলায়। এ সময় রিচার্ড নিচে বসে টিভি দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি ইউন মির চিৎকার শুনতে পান। তার নাম ধরে চিৎকার করছিলেন ইউন মি।
সে সময় রিচার্ড ওপরে গিয়ে দেখতে পান বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ আর ইসাবেলা তার মায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছুরিকাঘাত করছেন। রিচার্ড দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। দ্রুত তিনি পুলিশকে ফোন দেন। ইসাবেলা যখন বাইরে বেরিয়ে আসেন; তখন হাতে তার মায়ের রক্তে লাল হওয়া ছুরিটিও ছিল। সেখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে। আর ইসাবেলার সারা শরীরে রক্ত।
ইসাবেলা পালিয়ে যান পুলিশ আসার আগেই। আর ইউন মিও মারা যান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই। বেরিয়ে আসার সময় ইসাবেলার মুখে রিচার্ড সন্তুষ্টির ছাপ দেখেছিলেন বলে পুলিশকে জানান। এরপর ইসাবেলা পুরোপুরি লাপাত্তা হয়ে যান। ইসাবেলার ছবি পোস্টার করে লাগিয়ে দেয় পুলিশ শহরজুড়ে। পুরস্কারও ঘোষণা করে তাকে ধজরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিছুদিন পর এক ব্যক্তি পার্কিং লটে থাকা একটি গাড়ির ডিকিতে একটি রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে ফোন দেন।
পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখতে পায়, পুরো শরীরে রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছেন ইসাবেলা। মাকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটিও ছিল সঙ্গে। পুলিশ ইসাবেলাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের সঙ্গে নিজেকে সমর্পণ করেন। মুখে ৩১ বার এবং ঘাড়ে ৪৮ বার মোট ৭৯ বার ছুরিকাঘাত করেন তার মায়ের শরীরে। এই সময় ইসাবেলা নিজেও কিছুটা আহত হয়েছিলেন। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ছুরি চালাতে অদক্ষ হওয়ায় আঘাত করার সময় হাত ফসকে নিজের শরীরেও কিছু জখম করে ফেলেন তিনি।
ইসাবেলা আদালতেও এমন ভাব করছিলেন যেন কিছুই হয়নি। তার সেই মুখভঙ্গি ধরা পড়েছে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। আটকের পর তার মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ইসাবেলা প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন আদালতে।
ইসাবেলা গুজম্যানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে পুয়েবলোতে কলোরাডো মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য। পরে অবশ্য তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ২০১৫ সালে একজন কারারক্ষীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ইসাবেলা।
মায়ের হত্যাকারী ইসাবেলা যেভাবে স্বাভাবিক ও হাসিমুখে আদালতের কাঠগড়ায় উঠেছিলেন, সেসব ভিডিও ও ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। টিকটকেও রয়েছে ইসাবেলার নামে একাধিক আইডি এবং ফ্যান গ্রুপ। টিকটকে না থেকেও জনপ্রিয় টিকটকার বনে গিয়েছেন ইসাবেলা। টিকটকে ইসাবেলার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুইট বাট সাইকো’।
তাঁর ভক্ত অনুরাগীরা ইসাবেলার ওই সময়ের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওর অঙ্গভঙ্গিকে অনুকরণ করে শত শত ভিডিও তৈরি করছেন। টিকটকে বর্তমানে ভাইরাল ‘ট্রেন্ড’ হয়েছেন ইসাবেলা। আবার তাঁর ফ্যান গ্রুপের সদস্যরাও মানসিকভাবে বিকৃত বলে অনেকে বলেছেন। তবে তাঁর চেহারা, সৌন্দর্যের প্রেমেই এসব গড়ে তুলেছেন বলে জানান ভক্তরা।