ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে: সিভিল সার্জন, হাসপাতালে শয্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে: জেলা প্রশাসক
Published : Tuesday, 6 July, 2021 at 12:00 AM, Update: 06.07.2021 1:34:40 AM
শহর
জুড়ে এ্যাম্বুলেন্সের ছুটোছুটি, রাত বাড়লে এর সংখ্যাও বেড়ে যায়। অধিকাংশের
গন্তব্যই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা সদর হাসপাতাল।
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া কিংবা জেলার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে আসছে এসব
রোগীরা। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগও বলছে, বিদ্যুৎ গতিতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের
সংখ্যা। ইতিমধ্যে কুমিল্লায় করোনা সংক্রমনের হার ৪২ শতাংশ পার হয়েছে। গত
২৪ ঘন্টায় পাওয়া ৬৭০টি রিপোর্টের ২৮২টিই পজেটিভ। করোনার শুরু থেকে এই
শনাক্তের সংখ্যাই সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ১৩৯ জনই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের।
অর্থাৎ সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকই নগরীর। এদিকে সর্বশেষ কুমিল্লায় আরো ৪ জনে
মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ৩ জনই নগরীর। তবে সরকারি করোনা ইউনিট থেকে প্রাপ্ত
তথ্য মতে, নতুন ভর্তি হতে আসা রোগীদের বেশির ভাগই আসছে গ্রাম থেকে। তারা
আসছে উপসর্গ নিয়ে। জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলছেন, করোনা
সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর সুখবর হলো, খুব শীঘ্রই
আবার করোনা টীকার নিবন্ধন শুরু হতে যাচ্ছে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির
সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, প্রতিটি হাসপাতালেই
বলা হয়েছে করোনা আক্রান্তদের জন্য শয্যা বাড়াতে। অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিয়ে
রাখছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর লকডাউন জোরদারে দিনে রাতে কাজ করছে জেলা
প্রাশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের সচেতনতা দরকার।
কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করোনা আক্রান্ত
ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন। করোনা ইউনিটে পজেটিভ শনাক্ত রোগী আছেন ১৪৯ জন। আইসিইউ
এবং এইচডিইউতে সব বেডই পরিপূর্ন। এছাড়া আইসোলেশন ওয়ার্ডেও উপসর্গ নিয়ে
ভর্তি আছেন অন্তত ৭০ জন। ধারণক্ষমতার চেয়ে ইতিমধ্যে বেশি রোগীকেই চিকিৎসা
দিচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট। বেডের বাইরে অনেকেই
মেঝেতেও শুয়েও নিচ্ছেন অক্সিজেন ও চিকিৎসা। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের করোনা
ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩৮ জন। নতুন করোনা ইউনিটেও ভর্তি হচ্ছে রোগী। করোনা
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মতে, অক্সিজেন সেচুরেশন কমে যাওয়া রোগীরা হাসপাতালে
চলে আসছে। তবে রাতের বেলায় রোগীরা আসছে বেশি তার কারণ হতে পারে সারাদিন
যারা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারাই ছুটে আসে
কুমিল্লা মেডিকেল ও সদর হাসপাতালে।
মহামারি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.
নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, কুমিল্লায় সংক্রমণের যে হার তাতে মনে হচ্ছে
এটা ‘ডেল্টা’। তবে কুমিল্লা থেকে যেসব নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য
পাঠানো হয়েছে সেগুলোতে ডেল্টা ধরা পড়েনি। কিন্তু যেহেতু কুমিল্লার
বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে ভারতীয় সীমান্ত, সেক্ষেত্রে ডেল্টা হবারই কারণ অনেক
বেশি। কিন্তু এখন এসব চিন্তা করে কোন লাভ নেই- সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে আনাটাই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য প্রচুর পরিমানে নমুনা পরীক্ষা প্রয়োজন। আর
উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার।
তিনি আরো বলেন,
কুমিল্লার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা
ব্যবস্থা আছে। প্রাথমিকভাবে অন্তত ৪/৫ জনকে অক্সিজেন গড়ে ৮-১০ লিটার
অক্সিজেন দেয়ার মত সক্ষমতাও আছে। কিন্তু সেখানেও রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে
বিধায়ই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। এভাবে
যদি খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে মানুষ ছুটতে থাকে তবে এই চাপ সামলানো
কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন
জানান, এখন সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। শেষ মুহুর্তে চিকিৎসার জন্য আসতে
থাকলে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বেই। অন্যদিকেই খুব শীঘ্রই কুমিল্লাতে আবারো
করোনা টীকার নিবন্ধন শুরু হতে যাচ্ছে। চীনা সিনোফার্মার টীকা দেয়া হতে
পারে কুমিল্লাবাসীর জন্য।