‘শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন’ ইউএসএ শাখার উদ্যোগে দেবীদ্বারের করোনা রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্যসেবায় “পাশে আছি কোভিড-১৯ সেবা” চালু করা হয়েছে। দেশের করোনা সংক্রামন বৃদ্ধি ও মহামারীর প্রাদূর্ভাবে দেশ যখন এক অস্থির সময় পার করছে, তখন দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে হাজার মাইল দূরে থেকেও দেশের মা- মাটিকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের কথা ভেবে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অ্যাম্বুলেন্স, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার, খাদ্যসহ চিকিৎসাসামগ্রী এবং একদল তরুন চিকিৎসক ও দেশপ্রেমিক সেচ্ছাসেবক নিয়ে চিকিৎসা সহায়তায় মানুষের পাশে দাড়ালেন ‘শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন’ ইউনাইটেড ষ্ট্যাট অব আমেরিকা (ইউএসএ) শাখার সভাপতি করোনা যোদ্ধা মানবতার সেবক ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার।
চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ১জুলাই থেকে ‘শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন’ ইউএসএ শাখার সভাপতি ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার’র উদ্যোগে “পাশে আছি কোভিড-১৯ সেবা” কার্যক্রম চালু হয়েছে।
উক্ত সেবা কার্যক্রমে সেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র মেডিকেল অফিসার (ডিজিজ কন্ট্রোল) ডাঃ সোহেল রানা, মেডিকেল অফিসার ডাঃ আরিফুর রহমান মূন্সী, মেডিকেল অফিসার ডাঃ শামীম কাউছার, মেডিকেল অফিসার (কনসাল্টেন্ট) ডাঃ সফিকুর রহমান, পল্লী চিকিৎসক মোঃ কবির আহাম্মেদ (নন কোভিড), পরামর্শক নিউইয়র্ক প্রবাসী রেহানা পারভিন, সেচ্ছাসেবী সংগঠক কাউছার হায়দার, রীমা আক্তার, বিল্লাল হোসেন ডালিম, মনির হোসেন, শাহীনূর লিপি। গত ১জুলাই থেকে ১টি এ্যাম্বুলেন্স ১জন গ্রাম্য চিকিৎসকের নেতৃত্বে ২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী ঔষধসহ সার্বক্ষনিক (২৪ ঘন্টা) ফ্রি সার্ভিস চালু রয়েছে। উপজেলার দূর্গম এলাকাসহ যেখানেই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আবেদন পাওয়া যাবে সেখান থেকে উপজেলা সদরে আনা নেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে ওই এ্যাম্বুলেন্সসেবা। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে নন কোভিড রোগীরাও এসেবা কার্যক্রমের সহযোগীতা পাবে।
সেচ্ছাসেবী সংগঠকরা প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যানুসারে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ ও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এ ছাড়াও একটি চিকিৎসক টিম ২৪ ঘন্টা মাঠে কাজ করছেন। ওই সেচ্ছাসেবক টিম উপজেলা সদরে দায়িত্বরত উচ্চ পর্যায়ের একটি চিকিৎসক টিমের সাথে রাগীদের কোআপারেট করে দিচ্ছেন। চিকিৎসকদল সেল ফোনের মাধ্যমে রোগীদের আরোগ্যলাভে পরামর্শ¦ ও ব্যাবস্থা পত্র দিয়ে আসছেন। সেচ্ছা সেবক টিম প্রতিদিন করোনা রোগীদের বাড়িতে যেয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর ফলফলাদী ও ঔষধ সরবরাহ করে আসছেন।
সেচ্ছাসেবী একাধিক কর্মী আরো বলেন, আমেরিকা প্রবাসী মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত, করোনা যোদ্ধা ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার শুধু করোনা সহযোগীতাই নয়, তিনি দেবীদ্বারের বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছেন, রান্না প্রশিক্ষণ, পাটের সামগ্রী তৈরীর প্রশিক্ষণ, সেলাই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা, অসহায়দের সেলাই মেসিন সহ নানা উপকরণ দিয়ে কয়েকশত নারী-পুরুষকে স্বাবলম্বী করেছেন।
দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, জনদূর্ভোগখ্যাত জনগুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কার, বিভিন্ন মসজিদ- মন্দিরে সহায়তা প্রদান, ৫শত দরিদ্র রিক্সা-ভ্যান শ্রমিকের মাঝে চাউল সহায়তা প্রদান, বেদে, শিক্ষক, ঋষি, সাংবাদিক, হিন্দুসম্পদায় ও পুরুহীত পরিবারের মাঝে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ও সমপরিমান সামগ্রী দিয়ে সহায়তা প্রদান, বাড়ির আঙ্গীনাকে অক্সিজেন ফ্যাক্টরী তৈরী করতে হাজার হাজার পরিবারের মাঝে ফলদ ও কাঠের চারা বিতরণ, অসহায় দরিদ্র পরিবারের পঙ্গু, কিডনি ও ক্যান্সারে আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগীতা, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ ও ঘরের আসবাব সামগ্রী প্রদান, হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগল পালনে সহায়তাদান। গত শীতে শত শত পরিবারের মাঝে শীত কম্বল বিতরণ, রমজান মাসে প্রতি দিন ২শত ভ্যান ও রিক্সাচালকের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ, বিশ^বাসীর নিকট দেবীদ্বারকে পরিচিত করতে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, যুব- তরুনদের মাদক মুক্ত রাখতে ‘শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন’ ইউএসএ শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন খেলা-ধূলা ও টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন।
এছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যসেবার উপর প্রশিক্ষণ, পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের বুণিয়াদী ও ক্যামেরা চালানো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অবহেলীত সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ৫শত মসজিদের মাধ্যমে এলাকার মৃত ব্যাক্তিদের দাফন কাজে খাটিয়া, দা’ কোদাল, খাড়ি, খন্তা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনী সামগ্রী প্রদান কর্মসূচী নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সেচ্ছাসেবক কাউছার হায়দার বলেন, করোনা মহামারীর প্রাদূর্ভাবের প্রথম ধাপেও তিনি দেশের মানুষের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে, পুলিশের সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ও সেবামূলক দপ্তরে, ডাক্তার- নার্সদের জন্য বিপুল পরিমান চিকিৎসা সামগ্রী, পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সরবরাহ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা হোম কোয়ারইন্টেনে থাকা অবস্থায় সেল ফোনে রোগীদের পরামর্শ¦দান, সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষার ঔষধ, খাদ্য, অর্থ ও পুষ্টিকর ফলফলাদী সরবরাহ করেছেন। এছাড়াও আমেরিকা প্রবাসী বাঙ্গালী কমিউনিটিতে থাকা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নানাভাবে পরামশর্^সহ সহায়তাদান, তার নিজস্ব একটি অনলাইন পোর্টালে দেশ বিদেশে থাকা বাঙ্গালীদের করোনাকালে করনীয় এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রতিদিন আলোকপাত করেছেন, যা এখনো অব্যাহত আছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সেবায় ফ্রী মেডিকেল টিম সার্ভিস, চক্ষু শিবির এবং দেবীদ্বারের জন্য উন্নতমানের বিনামূল্যে ৩টি উন্নতমানের কনসেন্টেটর প্রদান করেছেন।
প্রচার বিমূখ আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রবাসী, দেবীদ্বারের কৃতিসন্তান করোনা যোদ্ধা ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার ইতিমধ্যে দেশের মানুষের কাছে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামে খ্যাতি অর্জন করেন।
“পাশে আছি কোভিড-১৯ সেবা” কার্যক্রমটি শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ শাখার সভাপতি ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন বাব’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবেন শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র সভাপতি এফ এম শাহীন।
এব্যাপারে আমেরিকা প্রবাসী ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার সেল ফোনে জানান, বাংলাদেশের জনগন চলমান করোনা সংক্রামণ ভাইরাসের কারনে এক কঠিন সময় পার করছেন। বিভিন্ন সময়ে আমার সাধ্যমতো বাংলাদেশের জনগনের পাশে থাকার সহযোগীতাদানে চেষ্টা করেছি। বর্তমানে হঠাৎ করোনা সংক্রামন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার জনগনের জীবন রক্ষায় লকডাউন পালনের বিভিন্ন নির্দেশনা ঘোষণা করেছেন। এতে জনগনের সাময়িক কষ্ট হলেও তা মেনে চলতে হবে। আমি প্রবাস থেকেও দেশের অন্যান্য এলাকার পাশাপাশি নিজ উপজেলা দেবীদ্বারবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে আমার নিজস্ব অর্থায়নে “পাশে আছি কোভিড-১৯ সেবা” কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা বিনামূল্যে ডাক্তার, অক্সিজেনসেবা, ঔষধ, প্রয়োজনীয় খাদ্য, ফলফলাদী সেবাদান ব্যবস্থা চালু রেখেছি। সেচ্ছাসেবীরা আপনাদের সেবায় সার্বক্ষনিক নিয়োজিত। তাদের দেয়া সেল ফোনে যোগাযোগ করলেই সেবাটিম চলেযাবে আপনার দুয়ারে।
তিনি আরো বলেন, জাতির এ কঠিন সময়ে কুমিল্লা জেলা ও দেবীদ্বারসহ দেশবাসীর পাশে দাড়াতে পেরে আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত। আশা করছি এই সেবা টুকু মানুষের কাজে লাগবে। বর্তমানে দেবীদ্বারে এ সেবাটি চালু করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় সম্প্রসারিত করা হবে।