ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিকেলের পর অলিগলিতে বাড়ে জটলা, থাকে না স্বাস্থ্যবিধি
Published : Friday, 9 July, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিন। লকডাউনের কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাস্তাঘাট ও অলিগলিগুলো ফাঁকা থাকলেও বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর রাজধানীর অলিগলির দৃশ্যপট পাল্টে যায় অনেকখানিই।
অলিগলিতে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, মানুষের চলাচল, ব্যক্তিগত গাড়ি সবকিছুর আধিক্য দেখা যায় স্বাভাবিক অবস্থার মতো। বিকেলের পর কিছু টং দোকান খুলে চা-সিগারেট বিক্রি শুরু করে দোকানিরা। এসব দোকানে ভিড়ও লক্ষ করা যায় আগের মতোই। অলিগলিতে মানুষের সচেতনতা ছিল না বললেই চলে। এছাড়াও কাঁচাবাজারে রয়েছে আগের মতোই ভিড়। আবার অনেক গলিতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা বাসা থেকে বের হয়ে সড়কে ক্রিকেট খেলছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, হাতিরঝিল ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
পাড়া-মহল্লার গলির মুখ ভ্রাম্যমাণসহ চা-সিগারেটের দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। এসব দোকানের সামনে এবং মোড়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে কিশোর-যুবকসহ নানা বয়সীদের। টহলে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি দেখলেই স্থানীয়দের অলিগলিতে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে মূল সড়কগুলোতে জনসমাগম কম থাকলেও রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর পুরান ঢাকার অলিগলিতে আগের মতোই ভিড় লক্ষ করা গেছে।
মূল সড়কে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় মানুষের সমাগম কিছুটা কম থাকলেও অলিগলি ও বাজারগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম থাকায় রয়েছে মানুষের জটলা, অনেকের মুখে নেই মাস্ক, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এমন দৃশ্য আরও বেশি নজরে পড়ে। রাজধানীর অলিগলিতে ভ্রাম্যমাণ চা আর সিগারেটের দোকান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে নি¤œআয়ের মানুষ। নিতান্তই পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন তারা। যাদের মূল ক্রেতা হলো লকডাউন ভেঙে বের হওয়া মানুষ।
মোহাম্মদপুরের বসিলা ও ঢাকা উদ্যানে প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে দেখা যায় বেশ জটলা। এক এক দোকানের সামনে ছয়-সাতজন যুবক একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জমিয়ে আড্ডা দেয়। একই দৃশ্য নজরে আসে ধূপখোলা মাঠের সামনেও। তাদের সবারই আলোচনার বিষয় কবে শেষ হবে লকডাউন? কবে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারবেন তা নিয়ে। প্রায় সব অলিগলিতে চার-পাঁচজন জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়ার বিষয়টি এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ দুপুরের পর দোকানপাট, বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।
শ্যামলী মাঠের বিপরীত পাশের কয়েকজন বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই কয়েকজন উঠে চলে যায়। তাদের মধ্যে শামীম নামে একজন বলেন, ‘ভাই, সারাদিন ঘরে থাকতে ভালো লাগে না। যেখানেই যাই পুলিশ তাড়া করে। এখানে একটু কম আসে তাই নিরিবিলি বন্ধুরা মিলে বসে কথা বলছিলাম। ঘরে ভাই একদিন দুদিন বসে থাকা যায়। এর বেশি হলে অস্থির লাগে।’
মগবাজারের ওয়্যারলেস রোডের রেল লাইনের পাশে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন রাকিব। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চা-সিগারেট খেতে বাইরে এসেছি। খাওয়া হলে বাসায় চলে যাব। বাসায় মুরব্বিদের সামনে তো আর চা-সিগারেট খাওয়া যায় না।’
হাতিরঝিলের একটি গলিতে চা খাচ্ছিলেন জসীম উদ্দিন মাহির। তিনি বলেন, ‘বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। সারাদিন বাইরে বের হয়নি। বিকেলে বের হয়েছি। করোনা হলে কিছু করার নেই। এভাবে ঘরবন্দি হয়ে বাঁচা যায় না। আর করোনা যদি হতো গত দেড় বছরেই হতো। আমাদের করোনা হবে না।’

কলাবাগান গলিতে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল পাঁচ কিশোর। তাদের সবাই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষা নিয়ে চলছিল তাদের আড্ডা। তাদের একজন শাকিল বললো, গত বছরের মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ। মাঝখানে কিছুদিন কোচিং খুলেছিল, এখন আবার তাও বন্ধ। কত আর ঘরে বসে থাকা যায়! পরীক্ষা কবে তারও ঠিক নেই। এ সময় পরীক্ষার পড়াও পড়তে ইচ্ছা করে না।
ভ্রাম্যমাণ চা-সিগারেট বিক্রি করছেন রোজিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘দুইডা ছোট পোলা তাদের তো খাওয়া-পরা আমাকেই দিতে হবে। স্বামী দুই বছর হলো ফালাইয়া চইলা গেছে। ঘরে বসে থাকলে কেউ খাওন দিব না। সরকার কত কিছু দেয় কিন্তু আমিতো পেলাম না। আমার কাম আমারই করতো হইবো। চা-সিগারেট বিক্রি করি। যা আয় হয় তা দিয়ে ঘর ভাড়া আর সংসার চালাই। আজ আট দিন হলো লকডাউন দিছে। বেচাবিক্রিও কমে গেছে। কীভাবে ঘর ভাড়া দিমু সেই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে পাড়া-মহল্লায়ও কঠোর অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অনেকেই সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করছেন না। সচেতনতার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, পাড়া-মহল্লায় টহল পরিচালনার সময় দেখেছি, অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বিভিন্ন স্টলে-দোকানে গণজমায়েত দেখা গেছে। সবার প্রতি অনুরোধ- পরিবারের কথা বিবেচনা করে হলেও এই কটা দিন করোনার ঝুঁকিপূর্ণ সময় ঘরে থাকুন। অন্যথায় আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।
এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমি এখানে আসার আগে ১০টি চেকপোস্ট পরিদর্শন করেছি, পাড়া-মহল্লায় গিয়েছি। আপনারা যথার্থই বলেছেন, পাড়া-মহল্লায় অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আজ থেকে পাড়া-মহল্লায় স্পেশাল অভিযান পরিচালনা করা হবে। সম্মানিত নাগরিকদের অনুরোধ করবো পাড়া-মহল্লায় আপনারা জমায়েত হবেন না।