তানভীর দিপু ||
করোনায়
মা’কে হারানোর পর ৬ মাসের ব্যবধানে বাবাকেও হারালেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক জাকি উদ্দিন। বুধবার দিনগত রাতে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তারই তত্ত্বাবধানে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাকি’র বাবা সালাউদ্দিন (৬৬)। তবে তার বাবা
করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না- জানা যায়নি, তার নমুনা পরীক্ষার জন্য নেয়া
হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাস ছয়েক আগে মৃত্যুবরণ করেন জাকি উদ্দিনের মা
জাহানার নাসরিনও (৫৬)। সে সময় তার পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী সবাই
ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালে
করোনার চিকিৎসা নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে আইসিইউতে থাকা অবস্থায়
মৃত্যুবরন করেন তার মা।
৬ মাসের ব্যবধানে পিতা-মাতাকে হারানোর দায়
নিজের কাধে নিচ্ছেন চিকিৎসক জাকি। বুধবার রাতে বাবা হারানোর পর ফেসবুকে
আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে জাকি জানান, ‘করোনা ইউনিটে চাকরি করে বাবা-মাকে মেরে
ফেললাম। আমি আর এ পেশায় থাকতে চাইনা।’
তার স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- আমার
বাবা ও মায়ের জন্য দোয়া করবেন... covid rooster e night duty te silam...
abbur obostha kharap shune ami duty theke ambulance niye giye hospitale
niye ashlam..Bt atkaite parlam na...gyan thaka obosthay
boltesilo....Boro babu bebostha korbe....
ami abbu ammur khub shundor bebostha kore disi...ekdom etim hoye gesi 6 masher vitor
covid
diye infected kore mere felsi...No parents deserve a child like me, who
kills their parents within 6 months... i think i shall not continue
this profession anymore.
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসাপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জানান, জাকি উদ্দিন
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করার পর এক বছর আগেই ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে
আবার এই হাসপাতালেরই করোনা ইউনিটে চিকিৎসক হিসেবে চাকুরিতে যোগ করেন।
কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্সে একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতেন
তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে। তার বাবা-মায়ের
মৃত্যুতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
জানা গেছে, ডা. জাকি উদ্দিন কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেডিকেটেড কোভিড ইউনিটে রোস্টার হিসেবে দায়িত্ব
পালন করতেন। তার একাধিক সহকর্মীর কাছ থেকে জানান গেছে, তিনি তার বাবা মায়ের
মৃত্যুর জন্য কোভিড ইউনিটে দায়িত্বপালন করাকে দায় দিচ্ছেন। তারা বলছেন,
করোনা চিকিৎসকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বন্ধ করে দেয়ার পর তিনি
বিভিন্ন সময় বাসাতেই কোয়ারেন্টিন পালন করতেন। যে কারনে জাকি উদ্দিন হয় তো
বলতে চেয়েছেন - তার মাধ্যমেই তার বাবা মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এছাড়াও
তারা জানান, করোনা ইউনিটের চিকিৎসকদের জন্য গত বছর এক সময় বিনামূল্যে
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ব্যবস্থা করে সরকার। কিন্তু কয়েক মাস
পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। আর্থিক অবস্থার কারনে অনেক জুনিয়র ডাক্তারই নিজ খরচে
আলাদা হোটেলে থেকে কোয়ারেন্টিন করতে পারেননি। যাদের অনেকেই বাসায় থেকেছেন।
যা তাদের পরিবারের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ন।
বাংলাদেশ ম্যাডিকেল
এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম জানান,
কুমিল্লায়ও করোনা চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আলাদাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক
কোয়ারেন্টিনের জন্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ও কুমিল্লা
ক্লাবে ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক
কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা থাকলে করোনা চিকিৎসকদের পরিবার বা স্বজনরা করোনার
ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকেন।
এদিকে ৩৯ তম বিসিএস ক্যাডার পরিবারের
পক্ষ থেকে জাকিউদ্দিনের বাবা ও মায়ের মৃত্যুতে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়।
শোকবার্তায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী করা হয়, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায়
যুক্ত চিকিৎসকগণের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে চিকিৎসকগণের
সংগনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) ভাতা কিংবা আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য।