আর্জেন্টিনার ভাগ্যে বিগত ২৮ বছরেও কোনো ট্রফি জুটেনি, ১৬ বছর ধরে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে নেই জয়। এছাড়া ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে থাকা লিওনেল মেসিও দেশের জার্সিতে কোনো শিরোপা ঘরে তুলতে পারেননি।
এত এত জয়খরার মধ্যে ২০০৭ সালে শেষবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। সেবার ব্রাজিল ৩-০ গোলের জয় পায়। পরে ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালেও ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয়। তবে ১৪ বছর পর কোপার ফাইনালে আগামী ১১ জুলাই ফের মুখোমুখি হচ্ছে লাতিন আমেরিকার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচ আশা দেখাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও লিওনেল মেসিকে।
ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে রবিবারের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার অনেক অপ্রাপ্তির সমাপ্তি মিলতে পারে যদি মেসি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারেন। এ নিয়ে কোপার ফাইনালে গত চার আসরে তৃতীয়বার উঠল আর্জেন্টিনা। গত আসরে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার আগের দুই আসরে চিলির বিপক্ষে শিরোপা হাতছাড়া করেছেন মেসিরা।
আগে তিনবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, প্রতিবারই জয় তুলেছে সেলেসাওরা। ১৯৩৭ আসর, ২০০৪ সালে এবং ২০০৭ সালে মেসির বিপক্ষেই ৩-০ গোলের জয়ে শিরোপা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ব্রাজিল। এ তো গেল কোপার ফাইনালে মুখোমুখির হিসাব। এমনিতেই তো ১৬ বছর ধরে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে জয়হীন আর্জেন্টিনা।
উল্লেখ্য, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দু’দল এপর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ১০৭ বার। জয়ের পাল্লাটা ব্রাজিলের দিকেই ভারি, তাদের ৪২ জয়ের বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয় ৪০টি, ২৫ ম্যাচে শেষ হয়েছে ড্রয়ে। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ২০০৫ সালের জুনের পর ব্রাজিলের বিপক্ষে জয় নেই আর্জেন্টিনার। বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের সেই ম্যাচে বুয়েন্স আয়ার্সে হুয়ান রিকেলমের নৈপুণ্যে ৩-১ গোলে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
তারপর কেটে গেছে ১৬ বছর। সেসময় কেবল প্রীতি ম্যাচেই কিছু জয় মিলেছে। মেসি যদি রবিবার শিরোপা জিততে পারেন, ১৯৯৩ সালের পর ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে ট্রফির স্বাদ পাবে আর্জেন্টিনা, যা হবে মেসির ক্যারিয়ারে প্রথম জাতীয় দল ট্রফি, কাটবে দীর্ঘ জয়খরাও। এদিন মেসির সামনে থাকবে একাধিক রেকর্ড ভাঙার হাতছানিও।
রেকর্ডগুলো হলো :
১. ফাইনালে মাঠে নামলেই কোপা আমেরিকায় সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করবেন মেসি। রেকর্ড ভাগাভাগি করবেন চিলির সার্জিও লিভিংস্টোনের সঙ্গে। টুর্নামেন্টের শুরুতে মেসির কোপায় খেলায় ম্যাচের সংখ্যা ছিল ২৭টি। ফাইনালে মাঠে নামলে তা দাঁড়াবে ৩৪-এ।
২. এই রেকর্ড ছোঁয়া অবশ্য বেশ মুশকিল। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪ গোল দিতে হবে এ রেকর্ড ছুঁতে। বর্তমানে কোপায় মেসির গোল সংখ্যা ১৩। আর শতবর্ষের এই ১০ জাতির টুনামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা দুজন। ব্রাজিলিয়ান তারকা জিজিনিও এবং স্বদেশি তারকা নরবের্তো রদ্রিগেজ। তাদের গোল সংখ্যা ১৭। আদপে মুশকিল দেখালেও অসম্ভবকে সম্ভব করতে মেসির জুড়ি নেই। হয়েও যেতে পারে সেই রেকর্ড।
এবারের কোপায় ইতোমধ্যে যেসব রেকর্ড মেসির :
১. সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে লাউতারো মার্টিনেজের গোলে নিজের পঞ্চম অ্যাসিস্টটি দেন মেসি, যা কোনো ফুটবলারের পা থেকেই একটি কোপা আমেরিকায় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট সংখ্যা।
২. গোলের সংখ্যায়ও এগিয়ে তিনি। এখন পর্যন্ত ৪ গোল নিয়ে শীর্ষে আছেন মেসি। তাই গোল্ডেন বুটের প্রথম দাবিদার তিনিই।
৩. সতীর্থ হাভিয়ের ম্যাসচেরানোকে (১৪৭) পেছনে ফেলে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে লা আলবিসেলেস্তের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার নজির গড়েছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। বর্তমানে তার খেলা আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা ১৫০।
৪. ম্যাসচেরানোর বদলেই সবচেয়ে বেশিবার ছয়বার কোপা আমেরিকায় অংশগ্রহণকারী আর্জেন্টাইন ফুটবলার এখন মেসিই।