এ,বি,এম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
চলমান করোনাকালে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মুনাফা লাভের আশা ক্ষিন হয়ে আসছে গরু ও ছাগল খামারীদের। দফায় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে গরু, ছাগল খামারীদেরই শুধু মাথায় হাত পড়েনি দুগ্ধখামারিদেরও একই অবস্থা দাড়িয়েছে। ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই শঙ্কা ঘিরে ধরছে গরু-ছাগল খামারীদের। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এরই মধ্যে সারাদেশে গরুর হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে একই কারনে দুগ্ধজাতীয় পন্য উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরী, কারখানা, মিষ্টির দোকানগুলো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং বিয়ে, খৎনাসহ সামাজিক উৎসবগুলো সীমিত হয়ে যাওয়ায় ৬০/৭০ টাকা লিটারের দুধের দাম কমে ২০/৩০ টাকায় নেমে এসেছে। গরু, ছাগলের খাদ্য, চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় আয়ের দিক থেকে গচ্ছা গুণছে গরু- ছাগল ও দুগ্ধ খামারীরা।
করোনা সংক্রমণের কারণে গেল বছরেও ব্যবসা করতে পারেননি গরু-ছাগল খামারিরা। এবারো যদি একই অবস্থা হয়, তাহলে পথে নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করেন তারা।
দেবীদ্বার উপজেলায় ১৫০টি নিবন্ধনভূক্ত ও অনিবন্ধিত প্রায় ২হাজার ২শতটি গরুর খামার রয়েছে। দুগ্ধজাত গরু খামার হাতেগুণা কয়েকটি হলেও কৃষকের গড়া ১থেকে ৫টি গাভী পালনে কৃষক পরিবার রয়েছেন প্রায় ২ হাজারেরও বেশী।
সরজমিনে যেয়ে এগুলোর মধ্যে দেবীদ্বার পৌর এলাকার ভিংলাবাড়ি হাঁসু ভূঁইয়া ডেইরী খামারে ১২০টি, ধামতী গ্রামের আজহার ডেইরী খামারে ৭০টি, রাধানগর গ্রামের মোঃ ইব্রাহীম খলিল ভূঁইয়ার ‘সুমাইয়া খালিদ এগ্রো’তে ৫৩টি গরু রয়েছে। এসব খামারীদের খামারে মোটা- তাজা ও আকর্ষনীয় গরুর সমাহার দেখা গেলেও, তাদের মনের ভাব প্রকাশে হতাশাটাই বেশী ব্যাক্ত করলেন।
রাধানগর গ্রামের ‘সুমাইয়া খালিদ এগ্রো’মোঃ ইব্রাহীম খলিল ভূঁইয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, ২১৭ সালে ৩টি গরু নিয়ে খামারের যাত্র শুরু করেন। এক সময় ৬৭টি গরু মালিক বনে যান। বর্তমানে ৫৩টি গরু আছে তার খামারে। এগুলোর মধ্যে ‘বাদশা’, ‘বাহাদুর’ ‘রাজা’ ‘তুফান’ নামে ৪টি গরু রয়েছে, সাড়ে ৮-৯ ফুট লম্বা, উচ্চতাও সাড়ে ৫-৬ ফুট, ওজন প্রায় ৯শত কিলোগ্রাম থেকে সাড়ে ১২শত কিলো গ্রাম। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ৫৩টি গরুর মধ্যে ৩২টি গরু বিক্রি হয়েছে।
খামারের দুরাবস্থা ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে পাশর্^বর্তী ‘জারিন এগ্রো’ খামার সম্পর্কে বলেন, এ খামারটি ছিল বৃহৎ আকারের ওই খামারের মালিক জহিরুর ইসলাম ভূঁইয়ার কাছ থেকে দেড় বছর বয়সী শংকর জাতের ‘বাদশা’ নামে একটি গরু ২ লক্ষ টাকায় কিনে এনেছি। এখন ‘বাদশা’র বয়স সাড়ে তিন বছর, লম্বায় ৯ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট, ওজন প্রায় সাড়ে ১২শত কিলো গ্রাম। দাম হাকছি ১২ লক্ষ টাকা, ক্রেতা যে দাম বলছেন, সে দাম খরচের চেয়েও কম। লকডাউনের কারনে বাজারজাতও করতে পারছিনা। তিনি ‘বাদশা’কে যে খামার থেকে কিনে এনছেন ওই খামারটির লস গুনতে গুনতে বর্তমানে বন্ধ প্রায়।
এছাড়াও ছাগলের খামার রয়েছে প্রায় শতাধিক। এগুলোর মধ্যে পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের আব্দুল করিম’র খামারটি সর্ববৃহৎ। এ খামারে প্রায় ১২৫টি ছাগল রয়েছে। এ খামারের অধিকাংশ ছাগলের প্রতিটির মূল্য প্রায় ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
অপরদিকে দেবীদ্বার পৌর এলাকার ভূষণা গ্রামের মোঃ শাহআলম খান জানান, তিনি একজন ছোট কৃষক, ২টি গাভী ও ২টি শংকর জাতীয় গরু রাত দিন চোর পাহারা দেয়া থেকে খানা-খাদ্য দিয়ে সন্তানের মতো লালন পালন করে আসছেন। এরই মধ্যে ‘বাদশা’ নামে একটি গরু আছে, যেটির দাম হাকছেন ৪ লক্ষ টাকা, লম্বায় ৯ফুটের উপরে, উচ্চতায় প্রায় সাড়ে ৬ফুট এবং ওজনে প্রায় ৩০ মনের উপর হবে। গরুটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা এলেও আশানুরুপ দাম বলছেন না কেউ। ভেবেছিলাম এবার ঈদে গরুটি বিক্রি করে কিছু দায় দেনা শোধ করব, গরুটি খরচ পুষিয়ে বিক্রি করতে পারব কিনা শংকায় রয়েছি।
কিছু কিছু খামার ব্যবসায়ি অনলাইনে বিক্রি করে আপাতত ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও কেউ কেউ জানিয়েছেন।
এব্যাপারে শুক্রবার বিকেলে দেবীদ্বার উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাকিম’র সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উপজেলায় ১৫০টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় ২হাজার ২শতটি গরুর খামার রয়েছে। গরু খামারীদের বিবেচনায় আমাদের তত্বাবধানে “কুমিল্লা অনলাইন পশুরহাট” চালু করেছি, ওই পশুর হাটের জন্য খামারীদের কাছ থেকে বেছে বেছে ৭হাজার ৯৮৯টি গরু ৩হাজার ৬২৪টি ছাগল বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করেছি। গত তিন দিনে এক হাজারেরও উপরে পশু বিক্রয় করেছি।
খামারীদের সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত সহযোগীতা, ক্রিমির ঔষধ এবং ইউনিয়ন ভিত্তিক নিবন্ধনকৃত ৪০/৪৫টি খামার মালিকদের মধ্যে ৯২০টি খামারকে ২২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রনোদনা দেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে হাস-মুরগী খামারীদেরও একই নিয়মে প্রনোদনা দেয়া হয়েছে।