Published : Monday, 12 July, 2021 at 12:00 AM, Update: 12.07.2021 12:03:28 AM
শিফট শেষে হওয়ায় রাজীব হোসেন কারখানার বাইরে এসে খাচ্ছিলেন। স্ত্রী আমেনা বেগমের শিফট তখনো চলছিল। হঠাৎই নিচতলার ফ্লোরগুলোতে আগুন দেখতে পান রাজীব। স্ত্রীর কথা চিন্তা করে লাফ দিয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওপরে ওঠার দুটো সিঁড়ির গোড়ায় অনেক আগুন থাকায় আর ভেতরে যাওয়া হয়নি রাজীবের।
রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে কথা হচ্ছিল রাজীবের সঙ্গে। চার বছরের ছেলে রাফিনের অপেক্ষা মায়ের জন্য। রাফিন এখনো জানে না তার মা আর ফিরবে না। নানা মুর্শিদ মিয়া মেয়ের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ নমুনা দিয়ে এসেছেন। মুর্শিদ ঠিক বুঝতে পারছেন না কেন তিনি হাসপাতাল মর্গের সামনে অপেক্ষা করছেন।
বাবার কোলে চড়ে ছোট্ট রাফিন অবাক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাচ্ছে। কাছে যেতেই রাজীব বললেন, ‘ভাই, ওরে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। ও এখনো কিছু জানে না। ও জানে মা দাদাবাড়ি গেছে। কালকে আসবে।’
রাজীব জানালেন, আগুন লাগার পর চারতলায় তাঁর স্ত্রী আমেনার সঙ্গে থাকা একজন বাইরে থাকা এক সুপারভাইজারকে মোবাইলে কল করে বলছিল, ‘আমরা দম নিতে পারতেছি না। আমাদের বাঁচান। কিন্তু ওই ফ্লোরে তালা মারা থাকায় কেউ বের হতে পারেনি।’ রাজীব অভিযোগ করেন, এই কারখানার বিভিন্ন সেকশনে বাচ্চাদের খাবার তৈরি হওয়ার কারণে কেউ যাতে খাবার না নিয়ে যেতে পারে বা বাইরে থাকা কেউ যেন ঢুকতে না পারে, তাই ফ্লোরগুলোতে সব সময়ই তালা মেরে রাখা হতো।
রাজীব ৬ হাজার টাকা এবং আমেনা ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন সেজান জুস কারখানায়। রাজীব বলছিলেন, ‘তারা (কারখানা মালিক) কোটি কোটি টাকার মালিক। তাদের সঙ্গে কি পারব? বিচার কি আর হইব? আমাদের চাওয়ার কিছু নাই। লাশটা যেন পাই।’
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করতে নমুনা দিতে এসেছেন আমেনার বাবা মুহাম্মদ মুর্শিদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার নাতিটা এতিম হয়ে গেছে।’
গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় আগুনে ৫২ জন মারা যান। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় লাশের পরিচয় নিশ্চিত করতে স্বজনদের নমুনা নিচ্ছে সিআইডি। এখন পর্যন্ত ৪৫টি লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য ৬৩ জনের নমুনা নিয়েছে সিআইডি।