নিজস্ব প্রতিবেদক: রেকর্ড শনাক্তের পরদিন নতুন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে; করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে গত এক দিনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পৌনে ৪২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১২ হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৩ জনের।
আগের দিন দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তার আগে রোববার রেকর্ড ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সোমবার মারা যায় ২২০ জন। এ নিয়ে টানা তিন দিন দুইশর বেশি মানুষের মৃত্যু হল করোনাভাইরাসে, শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও দুদিন ধরে ১২ হাজারের বেশি।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের যে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে, তা ঈদের জন্য নয় দিন শিথিল করার ঘোষণা এসেছে মঙ্গলবার। ঈদের পর আবারও পুরনো বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনার কথা বলেছে সরকার।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জনে। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৮৪২ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৭২৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৩৯ শতাংশের কাছাকাছি। চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩৪৩ জন।
আর যে ২০৩ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬১ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৭ হাজার ৬৪৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬২৭টি ল্যাবে ৪১ হাজার ৭৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৯টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ, আগের দিন যা ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় গত এক দিনে ৩ হাজার ২০১ জন, ফরিদপুরে ১৯২ জন, গাজীপুরে ১৮৯ জন, কিশোরগঞ্জে ১২৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৪১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৩১ জন, টাঙ্গাইল জেলায় ২৭২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯৫৫ জন, কক্সবাজারে ২২৪ জন, ফেনীতে ১৭৬ জন, নোয়াখালীতে ২১৪ জন, চাঁদপুরে ১১০ জন, চাঁদপুরে ১৫৪ এবং কুমিল্লায় ৪৫১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৯৯ জন, নওগাঁয় ১১৫ জন, পাবনায় ১৮৬ জন, সিরাজগঞ্জে ১০৯ জন এবং বগুড়ায় ১৪৪ জন নতুন রোগী মিলেছে।
খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় ১৩৬ জন, যশোরে ৩৬৫ জন, খুলনায় ৩২০ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২৯১ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।
এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে দিনাজপুর জেলায় ১৩৮ জন, সিলেট জেলায় ৩১৪ জন, বরিশাল জেলায় ৪৯২ জন, ঝালকাঠি জেলায় ১০৭ জন, ময়মনসিংহ জেলায় ২৬৫ জন এবং নেত্রকোনা জেরায় ১১২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ১৪ জন খুলনা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
মৃত ২০৩ জনের মধ্যে ১১৮ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৩৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের ১৩২ জন ছিলেন পুরুষ, ৭১ জন ছিলেন নারী। ১৫৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৪ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, সেদিনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়ায়।
বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৭৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।