মাসুদ আলম।। পশু কোরবানির ঈদের বাকি এখনও ৬ দিন। এদিকে সারাদেশের মতো কুমিল্লাজুড়ে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। বেড়েছে আক্রান্তদের মৃত্যুও। মোকাবেলায় প্রশাসন হিমশিম খচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও কুমিল্লা জেলার ৩৬৩ স্থানে বসছে পশুর হাট। সংক্রমণের দিক দিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকা রেড জোনের আওতায় থাকলেও এই নগরীতে বসছে ৪টি বড় পশুর হাট। সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪টিসহ জেলায় ৩৬৩টি হাটে পশু বেচা-বিক্রি হবে। এতোমধ্যে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে ইজারাদারদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পোস্টার, ব্যানার, রং বে-রংয়ের গেট, মাইকিংসহ বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ভয়াবহ আকার ধারণ করায় পশুর হাটে ভিড় জমাতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা। অনেকে অনলাইনে পশু কিনছেন। কেউ কেউ সরাসরি বিভিন্ন খামার ঘুরে কোরবানির পশু পছন্দ করে কিনছেন। কেউবা বায়না করে রাখছেন।
কুমিল্লায় জেলায় ৩০ হাজার ১৮৮ জন খামারি’র মধ্যে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রঘুরামপুর এলাকার এফ আর এগ্রো ফার্ম এ বছর কোরবানির জন্য ৭০টি পশু প্রস্তুত করেছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে অর্ধেক কোরবানির পশু। যার অধিকাংশই খামার থেকে সরাসরি ক্রয় করেছেন ক্রেতারা। অনলাইনেও বেড়েছে বিক্রি। প্রতিদিনই ভিড় করছেন নতুন নতুন ক্রেতা। হাঁকাচ্ছেন দর-দাম। অনেকেই অনলাইনের ওপর নির্ভর হতে পারছেন না। তাই সরাসরি খামারে উপস্থিত হয়ে গরু কিনছেন।
এফ আর এগ্রো ফার্মের পরিচালক মো. নাজমুছ সায়াদাত জানান, করোনা কারণে তাদের খামার থেকে কোন গরু হাটে নিচ্ছেন না। খামারে রেখেই গরু বিক্রি করছেন। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত গরুর মধ্যে এতোমধ্যে ৩৪টি বিক্রি হয়ে গেছে। অধিকাংশ ক্রেতা অনলাইন পশুর হাট থেকে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করে খামারে উপস্থিত হয়ে গরু ক্রয় করেছেন। বিক্রি হওয়া ৩৪টি গরুর মধ্যে জেলার বাহিরে ঢাকায় চারটি, ফেণীতে চারটি, চট্টগ্রামে একটি ও ব্রাহ্মণপাড়ায় দুইটি।
তিনি আরও জানান, ঈদের আগেই বাকি গরু গুলো খামারে রেখেই বিক্রি করতে পারবেন। হাটে উঠাতে হবে না।
কোরবানির গরু কেনাবেচার বিষয়ে আইয়ান মিহান ডেইরি ফার্মের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এই খামারটি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভরের মুড়া ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম। ফার্মের পরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানান, তারাও তাদের ফার্মের কোন গরু হাটে তুলেন না। ফার্মে রেখেই কোরবানির জন্য গুরু বিক্রি করছেন। খামারে থাকা ১১৫টি গরুর মধ্যে এ বছর কোরবানির জন্য তারা ৪০ গরু প্রস্তুত করেছেন। ঈদের বাকি আর মাত্র ৬দিন। এতোমধ্যে খামার থেকে ২৩টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রি হওয়া অধিকাংশ গরু বায়না দিয়ে ক্রেতারা রেখে গেছেন। ঈদের দুই একদিন আগে ঠিকানা অনুসারে বিক্রয়কৃত গরু ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দিবেন। বাকি গরু ঈদের আগেই বিক্রির আশা করেন তিনি।
খামারে গরু কিনতে আসা আকতার হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকলে কোরবানি পশুর হাটে গিয়ে গরু কেনা অসম্ভব হয়ে যাবে। এখন অফিস বন্ধ। হাতে ব্যাপক সময়, তাই কয়েকটি গরুর খামার ঘুরে দেখছি। পছন্দও করেছি। এখন দর-দাম করে যেখানে সুবিধামতো পাবো সেখানেই কিনবো। পশুর হাটে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে গরু কিনতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সবকিছু বিবেচনা করে খামার থেকেই কিনলে ভালো হয়।
খামারে গরু কিনতে আসা উম্মে হাবিবা নামের একজন ক্রেতা বলেন, কোরবানির জন্য আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। বিভিন্ন খামার ঘুরে দর-দাম দেখে এখানে পছন্দ করে গরু নিয়েছি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত খামারেই থাকবে গরু। খামারিরা তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে তাদের গাড়িতে করে গরু বাসায় পৌঁছে দিবে। কোনো হয়রানির শিকার হতে হবে না। আর পশুর হাটে মানুষের ভিড় থাকে। পছন্দ করা কষ্টকর হয়। গরু বাসায় এনে রাখতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এক্ষেত্রে সরাসরি খামার থেকে গরু নিলে সেসব সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লায় জেলায় ৩০ হাজার ১৮৮ জন খামারি রয়েছেন। জেলায় এই বছর ২লাখ ৩৭ হাজার গবাদিপশুর বিপরীতে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩৪৫ গবাদি পশু মজুদ রয়েছে। উদ্বৃত্ত আছে ১ হাজার ৩৪৫ টি পশু। গবাদিপশুর মধ্যে এক লাখ ৮১ হআজার ১৬৮ টি ষাঁড়, ৪০ হাজার ৭৪১টি ছাগল ও ৩ হাজার ৪৪৯টি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া দেশি কৃষকদের রয়েছে ১৫ হাজার ৯৪টি গবাদিপশু।
আরও জানা যায়, এসব কোরবানির পশু কেনাবেচায় হাট বসবে ৩৬৩টি স্থানে। হাটে অসুস্থ ও রোগা পশু শনাক্তে থাকে প্রাণিসম্পদের ৬৩ টি মেডিকেল টিম এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা টিম।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, লকডাউন ও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে কোরবানির পশু ঘরে থেকেই মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে বেচাকেনা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুমিল্লায় জেলায় ৩৬৩টি পশুর হাট বসবে। সরকারি নির্দেশনা বান্তবায়ন করেই বসবে এসব হাট। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করে হাটে আসতে হবে। কেউ যাতে বিধি ভঙ্গ করতে না পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহলে থাকবে।