লাফিয়ে লাফিয়ে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকা কুমিল্লায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও। গত ২৪ ঘন্টায় মহামারী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলাজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে ১২জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড কুমিল্লায়। এর আগে গত ১১ জুলাই কুমিল্লায় করোনা আক্রান্ত হয়ে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। বুধবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় কুমিল্লায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৩ জন। তাদের মধ্যে ১৭৬ জনই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগী সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮ হাজার ৯৭৩ জনে। তাদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬২ জন।
বুধবার সন্ধ্যায় শানক্ত ও মৃত্যুর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়।
জানা যায়, বুধবার ১৪ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ১ হাজার ৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ১৭৬ জন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে আদর্শ সদরে ৩১ জন, সদর দক্ষিণের ছয়জন, বুড়িচংয়ে ২৭, ব্রাহ্মণপাড়ার ১৪, চান্দিনার ৩৬, চৌদ্দগ্রামের ১৮, দেবিদ্বারে ২৭, দাউদকান্দিতে এক, লাকসামে ২২, লালমাইয়ে আট, নাঙ্গলকোটে ৩৩, বরুড়ায় ৯, মনোহরগঞ্জে তিন, মুরাদনগরে ৯, মেঘনায় আট, তিতাসে ছয় ও হোমনা দশ জন শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে আক্রান্ত হয়ে মারা ১৬ জনের মধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫জন, আদর্শ সদর তিন, বুড়িচং, চান্দিনা ও দাউদকান্দিতে একজন করে, লাকসামে দুইজন এবং মুরাদনগরে তিনজন।
মারা যাওয়াদের মধ্যে ১২জনকে কুমিল্লা সামাজিক সংগঠন “বিবেক” এর সদস্যরা গোসল-কাফন-দাফন ও জানাজা সম্পন্ন করেছেন।
তারা হচ্ছেন, কুমিল্লা মহানগরীর ২৬নং ওয়ার্ড ধনেশ্বর এলাকার আব্দুল লতিফ খন্দকারের ছেলে জাপান প্রবাসী আব্দুল করিম খন্দকার (৫২), কুমিল্লা সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শাসনগাছা মহাজন বাড়ির ফরিদ মিয়ার স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫৩), কুমিল্লা ডিসি অফিসের সাবেক ল্যান্ড রিকুইজিশন অফিসার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন বাগিচাগাঁও ভুতের গলি এলাকার মরহুম মোঃ আলী আহমেদের ছেলে মোঃ মাজহারুল হক (৮৩), কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ২নং উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকার মোঃ হিরন মিয়া’র ছেলে মোঃ আবুল কালাম (৬০), কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কামারচর সরকার বাড়ীর মোঃ জমির উদ্দিনের ছেলে মোঃ মনোয়ার হোসেন মাষ্টার, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা উত্তর ফাল্গুন কড়া এলাকার মোঃ জুনাব আলী'র স্ত্রী রওশনারা বেগম(৫২), একই উপজেলার চিওরা কাজী বাড়ীর (সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজি জাফরের বাড়ী) মরহুম কাজী মোঃ আহামাদুল হকের ছেলে ছেলে কাজী মোঃ হামাহাদুল হক(৮৭), কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মনোহরপুর চায়না ডেন্টাল গলি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়দেব বর্মন, কুমিল্লার সদর দক্ষিন উপজেলার মোহাম্মদপুর এলাকার মরহুম মোঃ আবদুর রহমানের ছেলে মোঃ শাহ্ কালাম (৫৫), লাকসাম উপজেলার শ্রীপুর এলাকার মরহুম মোঃ মুরশিদ উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে মোঃ মহিউদ্দিন ভুঁইয়া, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা ২নং উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এবং গণপূর্ত কলোনি মোগলটুলি এলাকার মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়া, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়ন কৈতড়া গ্রামের মরহুম মোঃ ইজ্জত আলী'র ছেলে মোঃ গিয়াস উদ্দিন(৭৫)।
সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, কুমিল্লায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। যদি এ মুহুর্তেও মানুষের মাঝে সচেতনতা না বাড়ে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে সর্বসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে প্রতিদিনই মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,চলমান শাটডাউনে অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণও করা হচ্ছে। আমরা চাই বিনা প্রয়োজনে কেউ যেন ঘর থেকে না বের হয়।