রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ১৯ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে পাঁচ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাকিদের মধ্যে ১২ জন উপসর্গ নিয়ে এবং দুই জন করোনামুক্ত হয়ে পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় মারা গেছেন। বুধবার (১৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল ৮টার পর্যন্ত মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ছয় জনের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। বাকিদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন জন, পাবনার ছয়, নাটোর ও নওগাঁর দুই জন করে রোগী রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং চার জন নারী। এদের মধ্যে সাত জনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছয় জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে চার জন ও ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে একজন রয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সকাল পর্যন্ত) করোনা আক্রান্ত, উপসর্গ ও করোনামুক্ত হওয়ার পর পরবর্তী জটিলতা নিয়ে ২৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত জুন মাসে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা যান ৪০৫ জন।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৫ জন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ৪৫৪টি বেডের বিপরীতে ভর্তি আছেন ৫০৭ জন। বাকিদের ওয়ার্ডে মেঝে ও বারান্দায় অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২০ জন রোগী।
করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৫০৭ জনের মধ্যে ২৫১ জনের করোনা পজিটিভ রয়েছে। উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ২০৩ জন। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা নিয়ে করোনামুক্ত হয়েও পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় চিকিৎসাধীন ৫৩ জন।
এদিকে রাজশাহীতে টানা চার দিন বাড়ার পর কমেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। বুধবার রাতে দুটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৬৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
যা আগের দিনের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে করোনা শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগে গত সোমবার সংক্রমণের হার ৩৩ দশমিক ৬৯, গত রবিবার ছিল ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং গত শনিবার সংক্রমণের হার ছিল ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ।
রামেক ল্যাব সূত্র জানায়, বুধবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল পৃথক দুটি ল্যাবে তিন জেলার ৭৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ এসেছে ১৭৬ জনের। রাজশাহী জেলা ছাড়াও নওগাঁ জেলার আট জনের নমুনা পরীক্ষা করে সবার নেগেটিভ এসেছে। এছাড়াও চাঁপাইনবাগঞ্জের ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।
গত ঈদের পর থেকে রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় গত ১১ জুন সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে সেটি দুই দফা বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। এর পর ১ জুলাই থেকে নতুন করে সরকার ঘোষিত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে।