করোনা
মহামারি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন ১২ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত
হচ্ছে। মারা যাচ্ছে দুই শতাধিক মানুষ। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে এসেছে কোরবানির ঈদ। সরকার বাধ্য হয়েছে চলাচলের কঠোর
বিধি-নিষেধ তুলে নিতে। ফলে শুরু হয়েছে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চের
চলাচল। এক্সপ্রেস ট্রেনে নিয়ম-কানুন কিছুটা মানা হলেও অন্য সব যানবাহনে
প্রায় কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ মানুষ মাস্কও পরছে না। এর মধ্যে
সবগুলো সড়কেই শুরু হয়েছে দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে রাস্তায়
বসে থাকতে হচ্ছে। গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফেরিঘাটগুলোতে পারাপারের
অপোয় হাজার হাজার যানবাহনে দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। যানজটে আটকা পড়েছে
কোরবানির পশু বহনকারী যানবাহনও। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আটকে থাকা যানবাহনে
অনেক পশুর মৃত্যুও হয়েছে।
লকডাউন শিথিল করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। ঈদুল
ফিতরের সময় কিংবা লকডাউন ঘোষণার পরপরই এভাবে লাখ লাখ মানুষকে ঢাকা ছাড়তে
দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ফেরি বন্ধ রেখেও কোনো লাভ হয়নি। মানুষ
হেঁটে ঢাকা ছেড়েছে। ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে বাড়ি গেছে। ফেরি বন্ধ
থাকায় ছোট ছোট নৌকায় করে পদ্মা ও যমুনার মতো বড় নদী পাড়ি দিয়েছে। তাতে করে
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি বেড়ে যায় দুর্ঘটনার শঙ্কা।
এবার ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রেন চলাচলের সুযোগ
দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনই দেখা গেছে প্রচ- ভিড়। গত দুই দিনে ভিড় আরো
বেড়েছে। বাস-ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেকে আগের মতোই ছোট ছোট যানবাহনে ঢাকা
ছেড়েছে। ফেরিতে যেভাবে গাদাগাদি করে মানুষকে উঠতে দেখা গেছে, বর্তমান
প্রোপটে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাসগুলোতে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের কথা
থাকলেও বাস্তবে তা খুব কমই দেখা গেছে। একইভাবে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজারের
ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। একই অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশের পশুর
হাটগুলোতে। মার্কেট, শপিং মলগুলোতেও উপচে পড়া ভিড়। এসব স্থানে
স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য উপযুক্ত নজরদারিরও অভাব রয়েছে।
ঈদের এখনো
তিন দিন বাকি। এ সময়ের মধ্যে যাত্রী ও যানবাহনের ভিড় বাড়তেই থাকবে।
সড়কগুলোতে যানজট ক্রমেই তীব্র হতে থাকবে। সেই সঙ্গে বাড়বে নিরাপত্তাহীনতা।
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। তা না
হলে এবারও বহু মানুষকে হয়তো রাস্তায়ই ঈদ করতে হবে। ঈদের পর কয়েক দিনের
মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষ আবার ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করবে। যদিও ২৩ জুলাই থেকে
শুরু হচ্ছে আবারও কঠোর লকডাউন। তখন গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানাও বন্ধ থাকবে।
ফলে কর্মস্থলে ফেরার প্রয়োজন কিছুটা কম থাকবে। সেই ভিড় কিভাবে সামাল দেওয়া
হবে, এখন থেকেই তা ভাবতে হবে।