পবিত্র
ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। জিলহজ মাসের ১০
তারিখে পালিত হয় এই উৎসব। ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। কোরবানি
শব্দটির অর্থ ত্যাগ ও নৈকট্য। মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি এবং মানবকল্যাণে
সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করাই মূলত ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের তাৎপর্য। প্রায়
পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে
কোরবানি করার প্রস্তুতি নিয়ে অনন্য ত্যাগের আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।
কোরবানির ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে অগ্রসর হয় মুসলিম জাতি।
কোরবানি
মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাঁদের ওপর জাকাত ওয়াজিব, তাঁদের
ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। পশু কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর
আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ ও
সম্পদত্যাগই হলো কোরবানি। কোরবানি শুধু একটি আনন্দ উৎসব নয়, এর সঙ্গে
জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিা ও দর্শন। ঈদুল আজহা আত্মত্যাগের প্রেরণায়
উজ্জীবিত এক অনন্য আনন্দ উৎসব। যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের
জীবনে, তার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের এক প্রতীকী আচার এই কোরবানি। ঈদুল
আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির
মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরে থাকা পশুশক্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা,
পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকেই ত্যাগ করতে হয়। তাই শুধু পশু নয়, প্রয়োজন
পশুত্বের কোরবানি। কোরবানিদাতা শুধু পশুর গলায় ছুরি চালান না, তিনি তাঁঁর
সব কুপ্রবৃত্তির ওপরও ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করেন। এটাই হলো কোরবানির
মূল শিা। পশু কোরবানির েেত্র এই অনুভূতি অবশ্যই প্রয়োজন।
আজ এমন এক সময়ে
ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে, যখন সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি
ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো টিকা বা ওষুধ বাজারে আসেনি।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুই লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮৩-তে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ।
অনেক ুদ্র ব্যবসায়ী এই করোনাকালে হারিয়েছেন পুঁজি। অনেকের আত্মীয়-স্বজন
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। তাঁদের বাড়িতে ঈদের আনন্দ নেই। অন্যদিকে
দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ বন্যাপীড়িত। করোনার সঙ্গে বন্যা ও বর্ষাজনিত
রোগ জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া যেমন আছে, তেমনি ডেঙ্গু,
ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, টাইফয়েডের মতো রোগে ভুগছে দেশের বিভিন্ন এলাকার
মানুষ। ওই সব এলাকার মানুষের দুঃখকষ্টের কথা স্মরণ করে মানুষের প্রতি
সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির অঙ্গীকার করতে হবে।
বিত্ত-বৈভবের প্রতিযোগিতা ও মহড়া না দেখিয়ে দুস্থ ও দুর্গত মানবতার পাশে
দাঁড়ানো এই সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সেবার মানসিকতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে
দুস্থ ও আর্ত মানুষের পাশে।