রোববার রাত ৩টা। ফোন দিয়ে এক কিশোর জানালেন, করোনা আক্রান্ত তার মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। অক্সিজেন লেভেল একেবারে নেমে গেছে। মাকে বাঁচাতে একটি সিলিন্ডার খুব দরকার। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন সদস্য একটি সিলিন্ডার নিয়ে পৌছে যান ওই কিশোরের বাড়িতে। এভাবে বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌছে দেয়ার পাশাপাশি এবার বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছেন হ্যালো স্বেচ্ছাসেবকলীগ টিম। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল’র অর্থায়নে চলছে এ কার্যক্রম। হামলাবাড়ি গ্রামের করোনায় আক্রান্ত মোশারফ হোসেনের স্বজনরা বলেন, ফোন দেয়ায় বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এসেছেন টিমের কয়েকজন সদস্য। আমরা কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। এলাহাবাদ গ্রামের নাছরিন আক্তার এবং পোনরার আবদুর রশিদের স্বজনরা বলেন, অক্সিজেন অভাবে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। চারদিকে খোঁজ নিয়ে অক্সিজেন ব্যবস্থা করতে না পেরে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। এ পর্যায়ে একজন হ্যালো স্বেচ্ছাসেবকলীগের একটি নম্বর দেন,ওই নম্বরে কল করলে বাড়ি ও নাম- ঠিকানা জেনে আধাঘন্টার মধ্যে অক্সিজেন পৌছে দিয়েছে।
হ্যালো স্বেচ্ছাসেবকলীগ টিমের সমন্বয়ক মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, আপাতত ৩০টি সিলিন্ডার দিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি। চারদিক থেকে প্রচুর ফোন আসছে। অক্সিজেনের হাহাকার দেখেছি নিজের চোখে। আমরা ফোন পাওয়ার সাথে সাথে ঠিকানা জেনে যত দ্রুত সম্ভব অক্সিজেন পৌছে দিচ্ছি। আমাদের রয়েছে ৫১ জন স্বেচ্ছাসেবী সদস্য। যারা দিন রাত পরিশ্রম করছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি হলে তা সংগ্রহ করা, খালি সিলিন্ডার রিফিল করা, ফোন কল রিসিভ করা, বাড়ি বাড়ি পৌছে দেয়াসহ প্রত্যেকটা কাজের জন্য আলাদা আলাদা সদস্য রয়েছেন। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মানুষকে এ সেবার আওতায় এনেছি। অক্সিজেনের অভাবে যাতে কোন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়েন সে দিকে শতভাগ খেয়াল রাখছি। এ জন্য জরুরি প্রয়োজনে একটি হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে, যা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে। নম্বরটি হলো ০১৩০৩০৫৯৪০৯। তিনি আরও বলেন, এমনও কল আসে, যাদের একই পরিবারের একাধিক সদস্যের সবাই করোনায় আক্রান্ত। অক্সিজেন লেভেল একেবারেই কম। আমরা তাদের জন্যও অক্সিজেন ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারা বর্তমানে সবাই সুস্থ রয়েছেন। অনেকেই আছেন দরিদ্র হওয়ায় তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে পারছিলেন না। আমরা তাদেরকেও এ সেবা দিয়েছি।
দেবিদ্বার প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, তাদের এই মহতি উদ্যোগের বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা যা করছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও সাহসী একটি কাজ। তাদের মতো অন্য সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে করোনা রোগীরা অন্তত অক্সিজেন সেবা পাবেন।
ইউএনও রাকিব হাসান কুমিল্লার কাগজকে বলেন, মহামারির এ সংকটকালে মানুষ নিজের জীবনের চিন্তাই করছেন বেশি। কিন্তু হ্যালো স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্যরা জীবনের চিন্তা না করে সর্বাধিক ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মাঝে এ সেবা পৌছে দিচ্ছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল কুমিল্লার কাগজকে বলেন, আক্রান্ত রোগীদের বেশি দরকার অক্সিজেন, যেটার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছেন। দেবিদ্বারের হ্যালো স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে। আমি তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাই।