শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ||
পর্ব-০৪
পশ্চিমাংশের কথা
আমার শহর ‘কুমিল্লা’র পশ্চিমাংশ হলো আধুনিক শহরের নব রূপায়ণ। এ নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে, তারপরও বলছি এ কারণে যে, রাজগঞ্জের পশ্চিমে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যেমন কুমিল্লা জেলা স্কুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল, মহেশবাবুর ঈশ্বরপাঠশালা, ফয়জুননেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, পুরাতন চৌধুরীপাড়ার প্রবেশ মুখে বঙ্গবিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা হাই স্কুল এবং শিক্ষাক্ষেত্রের আলোকবার্তিকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। পরবর্তীতে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা মহিলা কলেজ এবং আওয়ার লেডী অব ফাতেমা বালিকা বিদ্যালয়, ফরিদা বিদ্যায়তন, মডার্ণ স্কুল, রেলওয়ে হাই স্কুল সহ আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করলাম না এজন্য যে, প্রায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে এ প্রতিষ্ঠান সহ কিন্ডার গার্ডেন স্কুল এবং দুটি আইন কলেজ- কুমিল্লা আইন কলেজ ও বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজ। এরূপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভীড়ে পূর্বাংশে এখনও একবিংশ শতাব্দীতে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
পশ্চিমাংশে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ। আদালত অর্থাৎ জজকোর্ট, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, জেলা পুলিশের কার্যালয় ও পুলিশ লাইন, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড, কেন্দ্রীয় জেলখানা, চিড়িয়াখানা, ফায়ার সার্ভিস, রেলস্টেশন, ঐতিহাসিক বীরচন্দ্র নগরমিলনায়তন ও গণপাঠাগার, কুমিল্লা কাব, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম, ঈদগাহ, সার্কেট হাউজ, জেলার প্রধান ডাকঘর, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, ও পার্কসহ নানা স্থাপনা।
চকবাজার পূর্বাংশে অবস্থিত, রাজগঞ্জ বাজার শহরের মাঝামাঝি প্রধান বাজার, নিউমার্কেট আধুনিক সময়ের শপিংমল ও কাঁচাবাজার, রাণীর বাজার এবং অস্থায়ী টমসমব্রিজ বাজার ইত্যাদি।
আবাসনের দিক বিবেচনা করলে শহরের পশ্চিমাংশ প্রাধান্য পেয়েছে। ঝাউতলা, বাদুরতলা, বকুলতলা, অশোকতলা, বাগিচাগাঁও, ঠাকুরপাড়া, কান্দিরপাড়ের চারদিক, মনোহরপুর, পুরাতন ও নতুন চৌধুরীপাড়া-ইত্যাদি পাড়া বা মহল্লাগুলো ছিল স্বস্তি ও নি:শ্বাস ফেলার জন্য নিরাপদ বাসস্থান। এখন নতুন আবাসনে ঠাসা। দম ফেলা কষ্টকর।
কিছুটা পেছনে হাঁটলে আমার শহর ‘কুমিল্লা’ ছিল উন্নত বসবাসযোগ্য নিরাপদ বাসস্থান। চাকরি বা ব্যবসাসূত্রে এ শহরে এসে অনেকেই এখন স্থায়ী বাসিন্দা। এমন কি কুমিল্লা জেলার উপজেলা থেকে অনেকে এসে শহরে আবাস গড়ে তুলেছেন। কুমিল্লা শহরের আদি নিবাসী যারা, তারা আছেন শহরতলিতে, বিকশিত কুমিল্লার অংশদারী হতে পারলেন না। বরং তাদের জমিজমা কিনে নিয়ে বাইর থেকে আগত বিত্তবানরা হয়েছেন প্রতিবেশী এবং ক্ষমতাধর। কুমিল্লা শহরে যারা রাজনীতি করছেন, সরকারি আমলা রয়েছেন, শিক্ষক ও ব্যবসায়ী রয়েছেন অর্থাৎ কুমিল্লা শহরকে যারা বর্তমানে নানাভাবে নানা অঙ্গনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত অধিবাসীরা আঞ্চলিক সমিতি গঠন করেন, মিলনমেলায় নস্ট্যয়ালজিয়ায় আপ্লুত হন, তাদের সংখ্যা সমষ্টিগতভাবে একত্র করলে মূল নিবাসীর সংখ্যা ১০% হবে না। এভাবেই হয়ত বা নানা কারণে ও সুবিধায় নগর ও শহর গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে কুমিল্লা শহর তো ব্যতিক্রম হতে পারে না। তবে শহরের ভূমিপুত্রদের সুবিধাগুলো আরও দেয়া উচিত। কারণ, তাদের জমিতেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি। শহরতলিতে যাতায়াত করলে দেখা যায় পাঁচ বছরে একবার তাদের কাছে গিয়ে হাত পা ধরে ওয়াদা দিয়ে নিজেদের ভাগ্য নির্মাণ করেন যারা, তাদের মানবিক শুভবুদ্ধি উদয় হোক, একজন সংবেদনশীল সাধারণ নাগরিক হিসেবে অবশ্যই প্রত্যাশা করতে পারি।
পুরনো ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা শহর অবস্থান করছে একটি সীমিত গ-িতে। তার পূর্বদিকে সীমান্ত, উত্তরদিকে গোমতীর তীর, পশ্চিমে সেনানিবাস এবং দক্ষিণেই কেবল উন্মুক্ত দরজা। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক নগরায়নের যে দৃষ্টিনন্দন আবাসন বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাজানো যেত, তা হয়ে উঠেনি। এমনকি কোনো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। যেমন দুদকের কোনো নিজস্ব অফিস নেই, শিশু একাডেমির অফিস বা চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নেই, সমাজকল্যাণ অফিসটিও ভাড়া বাড়িতে ইত্যাদি। এজন্যই হয়ত বা কুমিল্লা শহরে গড়ে উঠেছে সুউচ্চ আবাসন বা অট্টালিকা ও শপিংমল। রাস্তাঘাট হয়েছে সংকুচিত, রাস্তা ঘাটের অবস্থাও নাজুক, জলাবদ্ধতা তো স্থায়ী যন্ত্রণার ক্ষত। এলাকার উন্নতি নির্ভর করে স্থানীয় কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে নানা প্রতিকূলতার জগদ্দল পাথর বা বাধা। আমি যে পাড়ায় এখন থাকি, এখানে বিগত ত্রিশবছর যাবত পৌরসভা এবং এখন সিটি কর্পোরেশনের কোনো স্পর্শ লাভ করেনি কেন? তার উত্তর জানা আছে, বলার সাহস থাকলেও প্রতিকার বা সুবিধা আদায়ের ক্ষমতা বা তাবেদারি করার যোগ্যতা নেই। তাতে ক্ষোভ আছে, হতাশা আছে, আছে নেতৃত্বের প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শহরটি যেমন স্পষ্ট দু’ভাগে বিভক্ত, তেমন নেতৃত্বের মধ্যেও ভাগাভাগি রয়েছে স্পষ্ট।
ষাটের দশকে যখন আমার শহর ‘কুমিল্লা’য় এসেছিলাম, ছবির মতো রাস্তাঘাট-দোকানপাট-বাজার ইত্যাদি পরিবেশ দেখেছিলাম, লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে, মানুষের অর্থবিত্ত-বৈভব বৃদ্ধির ফলে, আত্মগত চাহিদার উত্তাপে যেরূপ শৃঙ্খলাপূর্ণ হতে পারতো তা হয়নি। আবুল হাসনাত তাঁর ‘হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে’ স্মৃতিকথায় কুমিল্লা সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতার কথা লিখেছেন এভাবে- ‘১৯৬৫ সালের মে মাসে ... কুমিল্লা স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার পর আমার মুগ্ধতার শেষ নেই। ছিমছাম বাড়িঘর, গাড়ি দেখা যায় না বললেই চলে। নগরজীবনের কোনো বিলোড়ন নেই, শান্ত ও ¯িœগ্ধ, অধিকাংশ বাড়িঘর টিনে ছাওয়া, বাড়ির সম্মুখে ছোট পুকুর ও জলাশয়।’
নগরপতি যখন আত্মশ্লাঘায় বলেন- তিনি কুমিল্লা শহরের সুউচ্চ আবাসন ও শপিংমল দেখে বিমোহিত। তাঁর তৃপ্তিটুকুও অঢেল। মনে পড়ে জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের কথা। নায়ক করিমবক্স টাকার অভাবে হালচাষের জন্য গরু কিনতে পারে না। তাই চারটি বিয়ে করে তাদের দিয়ে জমি চাষ করায়। এদিকে চার বিবির প্রত্যেকের ২/৩টি সন্তানের জন্ম হয়ে গেছে। একদিন রাতের খাবারের পর করিমবক্স তামাক সেবন করছে, আর ঘরের মেঝেতে সারিবদ্ধ দশ সন্তান ঘুমাচ্ছে, তা দেখে তৃপ্তি অনুভব করছে। ঠিক আমাদের মেয়রের মতো। দালান-কোঠা-দোকানপাট যদি উন্নয়নের পূর্বশর্ত বা চাবিকাঠি হয়, তাহলে সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটে। এ কথাটি মেয়র সাহেব কি বুঝেন, জানেন? আমাদের সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খেলার মাঠ নেই, সংস্কৃতিচর্চার জন্য অডিটরিয়াম নেই, বিনোদনের জন্য যে পার্ক রয়েছে, এটি এখন মার্কেট ও অস্বাস্থ্যকর। অপরিকল্পিতভাবে শৌচাগার করতে প্রশাসনকে বাধা দিতে হয়। সিটি কর্পোরেশন হলো নগরবাসীর বান্ধব প্রতিষ্ঠান-অথচ এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নগরবাসীকে যুদ্ধ করতে হয় অবান্ধবজনিত আচরণে। যেমন হোল্ডিং কর, জলের কর ইত্যাদি অস্বাভাবিক ধার্যের কারণে। এ কথাগুলো বলতে হলো অনিচ্ছাসত্ত্বে, কারণ ভুক্তভোগীরা মুখ বুজে কতদিন থাকবে? যাক আমি আমার শহর ‘কুমিল্লা’ নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে চাইছি, তাতেই সীমিত থাকতে চাইব। আমি যখন ষাটের দশকের প্রথম দিকে শহর কুমিল্লায় আসি, তখন জানতে পারি শহরের বিভিন্ন এলাকায় কালীবাড়ি রয়েছে, সংখ্যা প্রায় ষোলটি, শহরের পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তে দুটি শ্মশান, সার্বজনীনভাবে ধর্মীয় আলোচনার জন্য মহেশবাবুর মহেশাঙ্গন, পৃথকভাবে রামকৃষ্ণ আশ্রম, রামঠাকুরের রাসস্থলী এবং তালপুকুরের পূর্বপাড়ে ব্রাহ্মমন্দির, এখন আরও একটি মন্দির ‘সর্বধর্ম মিশন’ মন্দির, ঈদগাহের উত্তরাংশে একটি গীর্জা, ধর্মসাগরের দক্ষিণপাড়েও একটি গীর্জা, ঠাকুরপাড়ায় কনকস্তূপ বৌদ্ধ মন্দির এবং এলাকায় এলাকায় মসজিদ রয়েছে, রয়েছে বিশাল ঈদগাহ। তন্মধ্যে মুগলটুলি বা গাঙচরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘সুজাবাদশার মসজিদ’, মৌলভীপাড়ার জানুমিঞা চৌধুরীর মসজিদ, ছাতিপট্টির মসজিদসহ অনেক মসজিদ ছিল ও আছে। হিন্দুদের দেবালয়গুলোর অধিকাংশই ত্রিপুরার রাজার বদান্যতায় স্থাপিত হয়েছে। ফলে প্রতিটি দেবালয়ের জন্য মন্দির ও রক্ষণাবেক্ষণ জন্য আয়ের উৎস হিসেবে জমি বরাদ্ধ ছিল, এখনও আছে। কিন্তু এসব জায়গাগুলো ব্যক্তিগত দখলে চলে গেছে বিভিন্ন কৌশলে। এদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মুসলমানদের নামাজের জন্য ব্যাপকহারে মসজিদ নির্মিত হয়েছে। এই মসজিদগুলো নির্মিত হয়েছে ব্যক্তি বা সমষ্টিগত উদ্যোগে, কোনো কোনো মসজিদ বিতর্কিত জমিতে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লা শহরে বিভিন্ন পর্যায় বিভিন্ন এলাকায় এত মসজিদ নির্মিত হয়েছে, শহরটি মসজিদের শহরও বলা যেতে পারে। এককালে শহর ‘কুমিল্লা’য় প্রচুর পুকুর ছিল, এখন তাদের অস্তিত্ব নেই, ব্যাংক ছিল অনেক, আবার ব্যাংক হারিয়ে গেলেও পূর্বরূপ ফিরে এসেছে। এধারায় অস্বাভাবিকভাবে মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে ধারণাতীত অভিধায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস চত্বর ছাড়াও প্রতিটি শপিংমলেও মসজিদ রয়েছে।
ষাটের দশকে শহর কুমিল্লায় সর্বত্র সার্ভিস লেট্রিন ছিল, মেথরদের উপস্থিতি ছিল শহরময়। মুচিসম্প্রদায়ের ছোট ছোট ছেলেরা বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে জুতা রং করত, সেলাই করত। এখন তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এখন সেনিটারি ব্যবস্থাপনা খুবই উন্নত। এমন কি পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাও রয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে শহর ‘কুমিল্লা’ এগিয়ে গেছে, কিন্তু পারিপাট্যের পরিকল্পনায় সমন্বয় না থাকায় বিশেষত বাড়িগুলোর অবস্থান খুবই ক্রুটিপূর্ণ ও অনান্দনিক। এ বিষয় পরিচর্চা করার দায়িত্ব যাদের একতিয়ার তারা ব্যক্তি স্বার্থের কারণে সুবিবেচনা করতে চাননি। তাই আমার শহর ‘কুমিল্লা’ এখন নগর খাঁচা ও দোকান-গহ্বর মেলবন্ধনে অনঢ় হয়ে গেছে। শহরের যেদিকেই চলাচল করলে শুধু নগর খাঁচা ও দোকানই দেখা যায়। বিনোদনের জন্য মুক্ত স্থান নেই, হাঁটার জন্য রাস্তা নেই, রাস্তার উপর অপরিকল্পিত দোকানপাট।
আমার শহর ‘কুমিল্লা’য় সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, বেসরকারিভাবে অর্ধশতাধিক কিনিক, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, শহরের পশ্চিমে অন্ধকল্যাণ সমিতি পরিচালিত চক্ষু হাসপাতাল ইত্যাদি রয়েছে। তাতে সুচিকিৎসা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। তার প্রধান কারণ, অব্যবস্থাপনা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব ও আন্তরিকতার ঘাটতি। বিত্তবানরা তো দেশে চিকিৎসা নিতে চান না, মধ্যবিত্তরা রাজধানী ঢাকায় গিয়েও অনেক সময় সুফল পান না। আমি যখন শহর ‘কুমিল্লা’য় আসি তখন দয়াবান চিকিৎসকের কথা শুনতে পেতাম। ডা: প্রমোদ পাল, ডা: মহিউদ্দিন, ২টাকার ভিজিটের ডা: সুলতান আহমদ, ডা: আবদুল মান্নান, ডা: সত্যেন মজুমদার প্রমুখের নাম মুখে মুখে উচ্চারিত হতো। এছাড়া মেডিকেল ট্রেনিংপ্রাপ্ত ডাক্তাররাও স্বনামে খ্যাত ছিলেন। শহরের পূর্বাংশে ডা: নিত্যহরি রায়ের কথা এখনও মানুষ স্মরণ করে। এধারায় শহরে এখন হাজারের উপরে ডিগ্রিধারী ডাক্তার আছেন, কতজনেরই বা নাম জানি, তাদের খ্যাতির কথা শুনি? পূর্বে যাঁরা চিকিৎসক ছিলেন, তাঁরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা-সেবা না দিলেও রোগীদের প্রতি ছিলেন দয়াবান, বিবেচনার মাত্রাটা ছিল মানবিক। উল্লেখিত ডাক্তাররা বিত্তবান ছিলেন না। এখন আমার শহর ‘কুমিল্লা’য় ডাক্তাররা অবশ্যই বিত্তবান এবং নানামাত্রায় প্রভাবশালী। সরকারি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও কুমিল্লায় এখন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আমার জানা মতে তিনটি। চিকিৎসা এখন সেবা নয়, ব্যবসা। এজন্য এই মহৎ কর্মযজ্ঞটি হয়ে গেছে আতংকের। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের সঙ্গে যোগ হয়েছে দালালচক্রের দৌরাত্ম।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কুমিল্লা এগিয়ে চলেছে ঠিকই, মান ও আন্তরিকতার দিক দিয়ে মানবিক বিষয় যেন কৃত্রিম হয়ে গেছে।
(ক্রমশ)
লেখক: সাহিত্যিক, গবেষক ও সাবেক অধ্যাপক
মোবাইল: ০১৭১১-৩৪১৭৩৫