মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতিতে আরও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে সুদান, লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও উগান্ডার মতো দেশও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের চেয়ে।আর বাংলাদেশের পেছনে আছে দুটি দেশ—আফগানিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
ইন্টারনেট অ্যাকসেস ও পারফরম্যান্স অ্যানালিসিস কম্পানি ওকলার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওকলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ইন্টেলিজেন্স, টেস্টিং অ্যাপ্লিকেশন্স এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে।
চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে দেশের অবস্থান দুই ধাপ পিছিয়েছে। আর একই সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশ আরও একধাপ পিছিয়ে প্রায় তলানিতে নেমেছে। বাংলাদেশের নিচে মাত্র দুটি দেশ রয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই বাজে। দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশই মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। তবে ব্রডব্যান্ডে তুলনামূলক একটু ভালো অবস্থা রয়েছে। যদিও আগের মাসের তুলনায় জুনে ব্রডব্যান্ড গতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ দুই ধাপ পিছিয়েছে।
স্পিডটেস্ট ডটনেটে ১৩৭টি দেশের মোবাইল ইন্টারনেট গতির হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড ১২ দশমিক ৪৮ মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। আর আপলোড স্পিড ৭ দশমিক ৯৮ এমবিপিএস। বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভেনিজুয়েলা ও আফগানিস্তান। সর্বশেষ অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের ডাউনলোড স্পিড ৭ দশমিক ৩৭ এমবিপিএস। চলতি জুন মাসে বৈশ্বিক গড় ডাউনলোড গতি হচ্ছে ৫৫ দশমিক ৩৪ এমবিপিএস। আর আপলোড স্পিড হচ্ছে ১২ দশমিক ৬৯ এমবিপিএস।
২০১৮ সালের জুনে মোবাইল ইন্টারনেটের গতির হিসাবে ১২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। সে সময় বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ছিল ৮ দশমিক ৯৭ এমবিপিএস। এ ছাড়া আপলোড স্পিড ৫ দশমিক ৪৬ এমবিপিএস। তিন বছরের ব্যবধানে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কিছুটা বাড়লেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় তা অনেক কম।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, মে মাস শেষে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ। সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার কেউ ইন্টারনেটে সক্রিয় হলেই তাঁকে গ্রাহক হিসেবে গণ্য করা হয়। বিটিআরসির হিসাবে, ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকসংখ্যা ৯৮ লাখের কিছু বেশি।
ওকলার তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট রয়েছে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। ডাউনলোডের গতি ১৯৩ এমবিপিএসের বেশি। এরপরে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, নরওয়ে ও সাইপ্রাস।
অনলাইনে ইন্টারনেটের গতি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান স্পিডটেস্টের চলতি বছরের জুনে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়া, সিরিয়া, উগান্ডা ও সোমালিয়ার মোবাইল ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড হচ্ছে ১৬ দশমিক ৬ থেকে ২২ দশমিক ২ এমবিপিএস পর্যন্ত।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম ৫৮, মালয়েশিয়া ৮৯, কম্বোডিয়া ৯১, নেপাল ১০৫, মিয়ানমার ১০৯, পাকিস্তান ১১৪, ভারত ১২২ এবং শ্রীলঙ্কা ১২৯তম অবস্থানে রয়েছে। সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা পাঁচটি দেশ হলো ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও সুদান।
এদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের তুলনায় ব্রডব্যান্ডে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি সামান্য বাড়লেও বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। স্পিডটেস্টের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ১৮১টি দেশের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৮তম, যা মে মাসে ছিল ৯৬তম। জুনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ২৭ এমবিপিএস, যা আগের মাসে ছিল ৩৮ দশমিক ১৩ এমবিপিএস। জুনে আপলোড গতিও কিছুটা বেড়ে ৩৭ দশমিক ২২ এমবিপিএসে উঠেছে।