অন্তঃসত্ত্বা এবং যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তাদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ) নাইট্যাগ।
নাইট্যাগের সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত পরশু (শনিবার) আমাদের বৈঠক ছিল, আমরা সেখানে সবাই মিলে একমত হয়েছি। আমরা সুপারিশ করলাম, অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও যেসব মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তাদের টিকা দেওয়া হোক।
অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, নাইট্যাগ অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং স্তন্যদায়ী মায়েদের করোনা ভাইরোসের টিকা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে, এখন এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এটা করতে চায়, ওজিএসবি-ও (অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ হাসপাতাল) চায়। তাই আমরা সবকিছু বিবেচনা করে সম্মতি দিয়েছি দেওয়ার জন্য। এর আগে গত পরশু এ বিষয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে, সেখানেই সম্মতি দিয়েছি যে এটা করা যাবে।
এর আগে গতকাল (১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম জানান, প্রসূতি মায়েদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার বিষয়ে নাইট্যাগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং প্রসূতি মায়েদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রসূতি মায়েদের টিকার বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে আমরা নাইট্যাগের মতামতের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের মতামত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পাইনি।
প্রসঙ্গত, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অবশ্যই টিকা নেওয়া উচিত। এতে করোনা ঝুঁকি কমবে। গর্ভাবস্থায় অন্য কোনও সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে টিকা নিতে পারে। কোনও জটিলতা না থাকলে তাদের অবশ্যই টিকা নেওয়া উচিত। এতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে এবং মা ও শিশু নিরাপদ থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা কর্মসূচির আওতার বাইরে রাখায় ঘটছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর ঘটনা।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে ওজিএসবি। সংস্থাটির সাবেক সভাপতি ও ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার লিমিটেডের (আইসিআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সামীনা চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অবশ্যই টিকার আওতায় আনা উচিত। সারা দুনিয়ায় দেওয়া হচ্ছে, আমাদেরও বসে থাকলে হবে না।
বিশ্বের অনেক দেশেই গর্ভকালীন সময়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এটা দেওয়া উচিত। অতিসম্প্রতি অন্তঃসত্ত্বা অনেক নারীর মৃত্যু হচ্ছে এবং পেটের শিশুও মারা যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মায়ের যদি অক্সিজেন ঘাটতি হয় তাহলে সন্তান পেটের ভেতরে মারা যায়।
রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড একটি হাসপাতালের কথা জানিয়ে ডা. সামীনা চৌধুরী বলেন, ‘সেখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বাঁচাতেই পারছি না।’ একমাত্র টিকাই তাদের বাঁচাতে পারে জানিয়ে অধ্যাপক সামীনা চৌধুরী বলেন, ‘নো ওয়ে, আর কোনও পথ খোলা নেই আমাদের সামনে।’
ওজিএসবির আবেদন পেয়েছেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ওজিএসবি আমাদের কাছে আবেদন করেছে। তারা বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে প্রসূতিদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছেন। আমরাও রাজি। তবে আমরাতো একা সিদ্ধান্ত নেবো না। জাতীয়ভাবে যখন সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, তখনই এটা শুরু করা হবে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার বিষয়ের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট একটা সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন আদালত। আজ সোমবার (২ আগস্ট) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন।
এদিকে এ খবরে খুশি অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি নারীরা। একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা শেখ সীরাজুম মুনীরা নীরা বলেন, টিকা না দেওয়ার কারণে গর্ভবতী নারীদের মৃত্যুর হার বেশি বলেই দেখা যাচ্ছে। তারা এমনিতেই নানা কারণে অনেক বেশি ভালনারেবল। আসলে টিকা দিলে শঙ্কাটা কম থাকে।
ইংল্যান্ড-আমেরিকাতে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক দেশের জন্য আলাদা নির্দেশনা দিয়েছে, সেই টিকাগুলোতে আমাদের দেশেও এসেছে। তাহলে আমরা কেন পাব না, প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি বলেন, সাংবাদিকসহ অনেক পেশার গর্ভবতীদের কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হয়। ফলে তাদের এক্সপোজার বেশি হয়। এজন্য টিকার সুরক্ষা প্রয়োজন বেশি।