তানভীর দিপু:
এক
সপ্তাহ আগের তুলনায় কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত করোনা চিকিৎসার হাসপাতালে
সিলিন্ডার অক্সিজেনের ব্যবহার বেড়েছে চার গুণ। একই দশা অন্যান্য হাসপাতাল ও
ক্লিনিক গুলোতেও। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে যেন পাল্লা দিয়েই
চলছে অক্সিজেনের চাহিদা। আর এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু
ব্যবসায়ীরা। সিলিন্ডারের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, রিফিল করতে দ্বিগুন দাম
রাখাসহ ম্যাডিকেল অক্সিজেনের সিলিন্ডারে ইন্ডাসট্রিয়াল(অজৈব) অক্সিজেন
ব্যবহারের মত গুরুতর অভিযোগও করছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া রিফিল করতে দেয়া
সিলিন্ডার সঠিক সময়ে না পাওয়া এবং ক্লিনিক-হাসপাতালে সিলিন্ডার অক্সিজেন না
থাকার অভিযোগও নিত্যদিনের। তবে করোনা মহামারিকে ব্যবহার করে যারা এধরনের
অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল
সার্জন মীর মোবারক হোসাইন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ
শাহাদাত হোসেন জানান, অক্সিজেন নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের অবস্থান
জিরো টলারেন্সে। ভুক্তভোগীরা আমাদেরকে অভিযোগ করলেই আমরা তা আমলে নিয়ে
খতিয়ে দেখবো।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
করোনা ইউনিটের সামনের গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল চত্বরেই সিএনজি অটোরিকশায়
শুইয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে সদর দক্ষিন উপজেলার চঞ্চলা রানী ঘোষকে। গত দুই
দিন ধরে তাকে কুমেক করোনা ইউনিটে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তার ছেলে
অপু। সিলিন্ডার অক্সিজেনে ভর করেই গত ৩ দিন টিকে আছেন চঞ্চলা। প্রতিদিন
অন্তত ৪ টি ছোট ম্যাডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে তার জন্য। অপর
আরেক ঘটনায় বিকালে নগরীর শাসনগাছা এলাকায় স্কাই অক্সিজেন নামে একটি দোকানে
দু’টি সিলিন্ডার রিফিলের জন্য আসেন কুমিল্লা নগরীর হারুন স্কুল এলাকার
আসিফ। হন্তদন্ত হয়েই অক্সিজেনের জন্য ছুটছেন, কিন্তু তার কাছে যে মাপের
সিলিন্ডার সেটি ইন্ডাসট্রিয়াল অক্সিজেনের হওয়ায় ফিরিয়ে দেন দোকানদাররা। এই
সিলিন্ডার তিনি কোত্থেকে পেলেন তার জবাব না দিয়েই অক্সিজেনের জন্য ছুটেন
আসিফ। এদিকে বুড়িচং উপজেলার মহিষমাড়ার ইকরামুল হক জানান, তার দাদীর জন্য
অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজতে খুঁজতে সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজারের
মিস্ত্রী পুকুর পাড়ের একটি দোকানে যান। সেখানে এক একটি সিলিন্ডারের দাম
চাওয়া হয় ২৬ হাজার ৮ শ টাকায়। এত দাম জেনে ফিরে আার পরে আত্মীয় স্বজনের
সহযোগিতায় পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকেই বিনামূল্যে সংগ্রহ করেন
অক্সিজেন সিলিন্ডার।
এমন হাজারো অভিযোগ প্রতিনিয়ত ভাসছে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, বিভিন্ন বেসরকারি
হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো অক্সিজেন নেই জানিয়ে রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে
অক্সিজেন সংগ্রহ করার জন্য বলছেন। এছাড়া অক্সিজেন রিফিল করতে অতিরিক্ত টাকা
নেয়ার অভিযোগ করেও পোস্ট করছেন অনেকে। সিলিন্ডার রিফিল করে আবার হাতে পেতে
আগের তুলনায় অত্যধিক সময় লাগছে বলেও অভিযোগ অনেকের। কুমিল্লা দোকান মালিক
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক
উল্যাহ খোকন অভিযোগ করে জানান, ম্যাডিকেল অক্সিজেনের সিলিন্ডারে
ইন্ডাসট্রিয়াল অক্সিজেন রিফিল করে বিক্রি করছে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। যা
মোটের উচিত নয়। এছাড়া মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানের সিলিন্ডারের দাম এত বৃদ্ধি
কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এব্যাপারে প্রশাসনের নজর দারি বাড়ানো উচিত।
সরকারি
চিকিৎসা কেন্দ্রে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা অক্সিজেন
লিমিটেড এর কুমিল্লা বিক্রয় কেন্দ্রের ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার তাওহিদ হোসেন
সজল জানান, এক সপ্তাহে সিলিন্ডার অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে চারগুন।
প্রতিদিন ৪টি মিনি ট্রাক ভরতি সিলিন্ডার রিফিল করে আনা হয়। অক্সিজেনের কোন
সংকট নাই, তবে অত্যধিক চাহিদার চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নগরীর
শাসনগাছায় স্কাই অক্সিজেন এর পরিচালক তাওসিফ মাহমুদ জানান, কিছু অসাধু
ব্যবসায়ীরা ইনডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডার এসে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে।
কিন্তু সেসব সিলিন্ডার যদি রিফিলের জন্য আবার আমাদের কিাছে আসে আমরা সেটা
দিতে পারি না। রিফিলের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, অক্সিজেনের
চাহিদা বাড়ায় রিফিলের জন্যও চাপ বেড়েছে, এখন কোন একটি পরিবহন ভর্তি
সিলিন্ডার রিফিলের জন্য ঢাকায় পাঠালে তা ফিরে আসতে আগের তুলনায় দ্বিগুন সময়
লাগে যে কারনে পরিবহর খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। একারনে আমরা সবাইকে জানিয়ে এই
দাম বাড়িয়েছি।
বেসরকারি হাসাপাতাল ও ক্লিনিকে অক্সিজেন না থাকা ও
রোগীদের বাইরে থেকে অক্সিজেন আনা প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে কুমিল্লা
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক রইস আবদুর রব
জানান, হাসপাতাল বা ক্লিনিক যদি অক্সিজেন না দিতে পারে রোগীর স্বজনরা
কোত্থেকে আনবে! এটা হয়তো তারা কোন সমস্যায় পরেই বলে থাকতে পারেন। তবে
কুমিল্লায় হাসপাতালগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ রাখতে অক্সিজেন
পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটানা খোলা রাখার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা
দেয়া জরুরী। এছাড়া কুমিল্লায় অক্সিজেন সরবরাগে যেন কোন ঘাটতি না হয় এজন্য
বেসরকারিভাবেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে- আশা করি সময় মত সব সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে
অভিযোগ পেয়ে গতকাল রবিবার কুমিল্লার বিভিন্ন অক্সিজেন দোকানে পর্যবেক্ষণে
যায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় শাসনগাছা এলাকার এসব
প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে অক্সিজেন সরবরাহে যেন কোন অনিয়ম না হয় সে ব্যাপারে
সতর্কতা জানানো হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জানি রায়
জানান, দোকানগুলোকে অক্সিজেন নিয়ে অনিয়ম না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। এই
পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।